আল্লামা বোরহান উদ্দীন মুহাম্মদ শফিউল বশর
গোপন খনি থাকাকালে (যখন কালেরও অস্তিত্ব ছিলনা) আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলী সমেত প্রকাশের প্রীতিই প্রেম। এ প্রেমের কারণেই সৃষ্টির সূচনা। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহর ঘোষণা, “আমি লুকায়িত খনি ছিলাম, অতঃপর যাত-সিফাত বা সত্তা ও গুনাবলীসহ প্রকাশের প্রীতি হেতু বিশেষ সৃষ্টি তথা নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা সৃজন করলাম”। ওই নূর জমালে খোদাওয়ান্দীর জলওয়া বা ঝলক হওয়াতে আল্লাহ্ ওই নূরের প্রতি অনুরাগী। গাউসুল আ’যম মাইজভাণ্ডারী (রাদ্বি.)’র বিশিষ্ট খলিফা বাহরুল উলুম আল্লামা মুফতি আবুল বরাকাত আব্দুল গনি কাঞ্চনপুরী (রাদ্বি.) বলেন,
আজব নামে খোদা হো তোম পিয়ারে জানি মুহাম্মদ
খোদা আশেক মাশুক হো তোম পিয়ারে জানি মুহাম্মদ।
মুসান্নেফে আব্দুর রাযযাকে হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাদ্বি.)’র বর্ণিত হাদীসের মর্মমতে সমগ্র সৃষ্টিজগত পর্যায়ক্রমিক বাবে নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা হতে সৃজিত। সুতরাং সমস্তই আল্লাহর প্রেমময় বিকাশ হেতু তিনি সর্বব্যাপী ও সর্বত্র বিরাজিত সর্বময় ক্ষমতাধর। পক্ষান্তরে স্রষ্টা ভিন্ন অন্য সবকিছুর অস্তিত্ব আপেক্ষিক মাত্র। এ পরম সত্যের উপলব্ধিতে ক্ষণস্থায়ী সৃষ্টি অনুরাগ বিসর্জিত হয়ে স্রষ্টার প্রতি আকর্ষিত আকৃষ্ট হওয়াই সত্য প্রেম। আল্লাহ বান্দার অন্তরে ওই সত্য প্রেমের আকর্ষণ জাগান আপন কোন মাহবুব বান্দার মাধ্যমে। আল্লাহর যাত-সিফাত তথা সত্তা ও গুণাবলীর প্রকাশ অনাদি-অনন্ত সৌন্দর্যের ধারক মাহবুব বা প্রেমাষ্পদ নবী মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা আপন মাহবুবিয়্যাত বা প্রেমাষ্পদত্বের দুর্বার আকর্ষণে সৃষ্টিকে স্রষ্টার প্রতিই টেনে নিয়েছেন। সর্বময় আল্লাহ দর্শন কিংবা সর্বত্র আল্লাহ অস্তিত্ববান তথা শহুদী কিংবা অজুদী ভাবধারাকে ঈমান এবং এর বিপরীতকে কুফর বলে আখ্যায়িত করে প্রভূ ভিন্ন অন্যের প্রতি প্রীতি ও আকর্ষিত না হওয়ার শিক্ষাই দিয়েছেন।
হযরত যায়েদ বিন জুহানী (রাদ্বি.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা হুদাইবিয়ায় আমাদেরকে ফজরের নামায পড়ান, তখনও রাতের বৃষ্টিপাতের চিহ্ন অবশিষ্ট ছিল। নামাযান্তে তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা উপস্থিতির দিকে ফিরে বললেন, তোমরা কী জান, তোমাদের প্রভূ কী বলেছেন? তাঁরা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই অধিক জানেন। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা বললেন, আল্লাহ বলেন, “আমার বান্দাদের কারো সকাল ঈমানের আর কারো সকাল কুফরের ওপর হয়েছে। যারা বলেছে, আল্লাহর দয়ানুগ্রহে বৃষ্টি হয়েছে, তাঁরা আমার উপর ঈমান রেখেছে, যারা বলেছে, অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে বারিপাত হয়েছে, তারা আমার দয়ানুগ্রহকে অস্বীকার করেছে আর নক্ষত্ররাজির ওপর ঈমান রেখেছে।” (মুসলিম শরীফ, কিতাবুল ঈমান)।
অন্য হাদীসে ইরশাদ হচ্ছে, হযরত আবু হুরাইরা (রাদ্বি.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা ফরমান, আল্লাহ বলেন, “আদম সন্তান যুগকে গালি দেওয়ার মাধ্যমে আমাকে কষ্ট দেয়, অথচ আমিই যুগ (অর্থাৎ যুগের স্রষ্টা, যুগের আবর্তন বিবর্তনকারী, যুগনিয়ন্তা স্বাধীন কর্তৃত্ববান কার্যনির্বাহক, তারা যে কাজের সম্পর্ক সম্বন্ধে যুগের প্রতি করতঃ গালি পাড়ে, তার সৃষ্টি কর্তা আমি হওয়াতে ওই গালি আমার প্রতিই প্রত্যাবর্তিত হয়।)। একচ্ছত্র কর্তৃত্ব আমারই, আমি দিবারাত্রির পরিবর্তন ঘটাই”। (মিশকাত শরীফ, কিতাবুল ঈমান)।
এতে সুস্পষ্ট যে, যুগের মৌলিক কোন অস্তিত্ব নেই বরং যুগের অস্তিত্ব আল্লাহর অস্তিত্ব এবং আল্লাহ অংশীদারিত্ব হতে পূতপবিত্র। হাদীসে পাকে আরো বিবৃত আছে যে,
‘কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তা’আলা বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি যখন অসুস্থ ছিলাম, তুমি আমার সেবা-শুশ্রূষা করনি। বান্দা বলবে, হে প্রভূ! আমি কী রূপে তোমার সেবা-শুশ্রূষা করবো? অথচ তুমি সমস্ত জগতের পালনকর্তা। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জাননা যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, কিন্তু তুমি তার সেবা-শুশ্রূষা করনি। যদি তুমি তার সেবা-শুশ্রূষা করতে তবে আমাকে তার নিকটেই পেতে। আল্লাহ বলবেন, হে বনী আদম! আমি তোমার কাছে আহার চেয়েছি, তুমি আমাকে খাবার দাওনি। বান্দা বলবে হে প্রভূ! আমি কী করে তোমাকে খাওয়াব? তুমি যে রাব্বুল আলামীন! আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জাননা আমার অমুক বান্দা তোমার নিকট খাবার চেয়েছিল, অথচ তুমি তাকে খাবার দাওনি। তুমি কি জাননা তাকে খাবার দিলে আমাকে তার নিকটেই পেতে। হে আদমের বেটা! আমি তোমার নিকট পানি চেয়েছিলাম, তুমি আমাকে পানি দাওনি। বান্দা বলবে হে প্রভূ! আমি কী করে তোমাকে পানি পান করাই? তুমি যে সমগ্র জগতের রব। আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা তোমার নিকট পানি চেয়েছিল, তুমি তাকে পানি দাওনি, তুমি তাকে পান করালে আমাকে তার নিকটেই পেতে’। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ- বাবু সাওয়াবিল মু’মিনি ফীমা ইয়াসিবুহু মিম মারাদ্বিন আও হাযনিন)।
সর্বত্র সর্বময় আল্লাহর দর্শন কিংবা সমুদয়ে আল্লাহই মৌলিক অস্তিত্ববান হওয়া আল কুরআনুল করীমের বর্ণনালোকে সুপ্রমাণিত। এ ধরণের কয়েকটি আয়াত এখানে উপস্থাপিত হল।
এক. ইরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহ আসমানসমূহ ও জমিনের নূর’ (পারা ১৮, সূরা ২৪ (নূর) ৩৫ নং আয়াত)
দুই. ইরশাদ হচ্ছে, ‘আমি তোমাদের থেকেও তার (মৃতপথযাত্রীর) অধিক নিকটে কিন্তু তোমাদের দিব্যদৃষ্টি নেই’। (পারা ২৭, সূরা ৬৫ (ওয়াক্বি‘আহ) আয়াত ৮৫)
তিন. ইরশাদ হচ্ছে, ‘তিনি তোমাদের সাথেই আছেন, তোমরা যেখানেই হও’। (পারা ২৭, সূরা ৫৭ (হাদীদ) আয়াত ৪)
সর্বত্র সর্মময় প্রভূ অস্তিত্ববান কিংবা দৃশ্যমান মর্মীয় দর্শনালোকে আপেক্ষিক ও ক্ষণস্থায়ী সৃষ্টির প্রেমাকর্ষনে নিজেকে আবন্ধ না রেখে স্রষ্টা প্রেমের দুর্বার আকর্ষণে আকর্ষিত হয়ে দ্বিত্বের বেড়াজাল ছিন্ন করে একত্বের মিলনে আপন আমিত্ব, অস্তিত্ব বিসর্জনের অমর-অনন্ত প্রেমের শিক্ষাই রয়েছে জগতগুরু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা দীক্ষিত প্রেমের শিক্ষায়। এখানে বান্দার যাবতীয় কর্মকাণ্ডই আল্লাহকে ঘিরে আবর্তিত হতে থাকে। তাই আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘বলুন, আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ সবই সমগ্র জগতের পালনকর্তা আল্লাহর জন্য’। (পারা ৮, সূরা ৬ (আন‘আম) আয়াত ১৬২)
হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম পর্যন্ত সকল নবী-রাসূল এ প্রেমেরই দীক্ষা দেন। এ প্রেমের সর্বব্যাপী শিক্ষা নিয়ে দীক্ষা দিতে আসেন জগতগুরু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা। হাদীসের বাণী, ‘আমি শিক্ষক রূপে প্রেরিত’। কুরআনের বাণী, ‘আমি তোমরা প্রত্যেকের প্রতি আল্লাহর রাসূল’ (সূরা আরাফ ১৫৮ নং আয়াত)। হযরত সিদ্দিক, ফারুক, যূননূরাইন, হায়দার, সালমান, আবু যর (রাদ্বি.) সহ সকল সাহাবী এ প্রেমেই দীক্ষিত এবং দীক্ষা গুরু ছিলেন। হযরাতে আ-ইম্মায়ে আহলে বায়ত থেকে শুরু করে বুস্তামী, বাগদাদী, শিবলী, মিসরী, জিলানী, চিশ্তী, সাদী, রূমী, জামী, সিরাজী (রাদ্বি.) প্রত্যেকই এ প্রেমের আদান-প্রদান, দীক্ষা অর্জন-দান করে গিয়েছেন। এ প্রেমই হযরত বড়পীরকে (রাদ্বি.) মিলন পেয়ালা পান করিয়েছে। এ প্রেমই রূমীকে বিচ্ছেদের বাঁশরী বাজাতে বাধ্য করেছে। এ প্রেমের মদে মত্ত হয়েই সিরাজী বলেছেন,
‘পীরে মুগাঁ যদি বলেন তবে শরাবে মসল্লা রঙ্গিন কর, কেননা ছালেক মিলনপথ ও মনযিলসমূহের আচার-আচরণ, রীতি-নীতি সম্পর্কে বেখবর নন’।
এ প্রেমের গানই গীত হয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কণ্ঠে,
খোদার প্রেমে শরাব পিয়ে বেহুঁশ হয়ে রই পড়ে,
ছেড়ে মসজিদ আমার মুর্শিদ এল যে, ঐ পথ ধরে।
জগতগুরু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা দীক্ষিত প্রেমের শিক্ষা নিয়েই এ ধরাধামে পদার্পন করেন ইমামুল আউলিয়া হযরত গাউসুল আ’যম শাহসূফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (রাদ্বি.)। সূফী কবি আল্লামা বজলুল করীম মন্দাকীনি (রাদ্বি.) বলেন,
অবশেষে ভাগ্যবলে প্রভূর করুণা ফলে
সত্য প্রেমের দীক্ষা নিয়ে মাইজভাণ্ডারীর আগমন।
সত্য প্রেমের একজন সফল দীক্ষাগুরু হিসাবে গাউসুল আ’যম মাইজভাণ্ডারী (রাদ্বি.) প্রেম-দীক্ষিত অসংখ্য প্রেমগুরু (খলিফা) সৃষ্টি করে গিয়েছেন। সূফী কবি আল্লামা আব্দুল হাদী (রাদ্বি.) বলেন,
‘প্রেম রতনের মুদ্রা দিয়ে টুটা ফাটা দিল কিনিয়ে,
সেকান্দরী আয়না তাতে করেন তৈয়ার’।
আপন মাহবুবী শানে বিমোহিত করে অনেককেই প্রেম শাস্ত্রের মাওলানাতে পরিণত করেন। বাহরুল উলুম মুফতি আল্লামা আবুল বরাকাত আব্দুল গনি কাঞ্চনপুরী (রাদ্বি.) বলেন,
‘না জানিতাম প্রেম নাম, না চিনিতাম বন্ধের ঠাম,
আজ প্রেমে মকবুলেরে মাওলানা বানাইলরে’।
অগণিত পথহারাকে তিনি দিয়েছেন হেদায়ত তথা সত্য প্রেমের সঠিক দিশা এবং সত্য প্রেমের অনলে জ্বালিয়ে পরিণত করেছেন খাঁটি ইনসানে কামিল। গাউসুল ওয়াক্ত কুত্ববে দাওরান ইমাম আ’যমে যমান মুহাক্কিকে লা-ছান আমীনে আমানতে সুবহান শাইখুল ইসলাম মুফতিয়ে আ’যম হযরতুলহাজ্ব শাহসূফী আল্লামা আমীনুল হক ফরহাদাবাদী (রাদ্বি.) লিখেছেন,
‘ইয়ানযুরু বিআইনিশ শফক্বাতি ইলাল খাসসি ওয়াল আম্মি, ইয়াহ্দী ইলা সাবিলির রুশদি লিল্ আনামি, ইউতী বিনূরিন নযরি না’রাল মুহাব্বতি ফী ক্বুলূবি আহলিস সিদক্বি ওয়াল ইতিক্বাদি’
অর্থাৎ-
সমাদরে আম-খাছ লোকগণ তরে
প্রভূ নিরঞ্জন পন্থে হিদায়ত করে।
মেহের নজর করে যাহার উপর
প্রেমের অনলে দহে তাহার অন্তর।
জগতগুরু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা’র আহ্বান আল্লাহরই দিকে এবং প্রাণ দেওয়ার জন্যই, সূরা আহযাব ৪৬ নং আয়াত ও সূরা আনফাল ২৪ নং আয়াত মর্মে তা সুষ্পষ্ট, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা’র ডাকে সাড়া দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জাহেরী কিংবা বাতেনী যুদ্ধে শাহাদত বরণকারীদের মৃত বলতে নিষেধ করে জীবিত জীবিকা প্রাপ্ত ঘোষণা দেন আল্লাহ তা’আলা। আল কুরআনের সূরা বাক্বারার ১৫৪ নং এবং সূরা আল-ইমরানের ১৬৯ নং আয়াত মর্মে শহীদগণের চিরস্থায়ী জীবনের প্রমাণ পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে আল্লাহর খলিফা এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা’র প্রতিনিধি হিসাবে ইমামুল আউলিয়া গাউসুল আ’যম মাইজভাণ্ডারী (রাদ্বি.)’র আহবানও আল্লাহর দিকে এবং প্রাণ দেওয়ার জন্যই। তাইতো তাঁর সংস্পর্শে এসে অগণিত মানব-দানব আল্লাহর পরিচয় লাভ করেছেন এবং চিরস্থায়ী জীবন পেয়েছেন, তাঁর দীক্ষিত ও প্রবর্তিত মাইজভাণ্ডারী ত্বরীক্বায় আজও পাচ্ছেন। তাঁর মাহবুবিয়্যত বা প্রেমাস্পদত্বের তীর বা খঞ্জরে বধিতজনরা চিরস্থায়ী জীবন লাভে ধন্য হয়েছেন। যেমন তাঁর বিশিষ্ট খলিফা আল্লামা আব্দুস সালাম ভূজপুরী (রাদ্বি.) কে ইন্তিকালের প্রায় দেড় বছর পর কবর হতে তুললে তাঁর লাশ মোবারক অবিকৃত এবং শরীর হতে ঘাম নির্গত হচ্ছে দেখা যায়। এ ধরনের আরো বহু প্রমাণ উপস্থাপন করা যায়, তবে কলেবর বৃদ্ধির আশঙ্কায় কেবল একটিতে তৃপ্ত হতে হল।
পক্ষান্তরে ইমামুল আউলিয়া গাউসুল আ’যম মাইজভাণ্ডারী (রাদ্বি.)’র আগমনে প্রেমের বসন্ত এবং সর্বত্র প্রাণের সাড়া জেগেছিল। তাঁর কামিলে মুকাম্মিল অসংখ্য খলিফা এবং মাইজভাণ্ডারী ত্বরীক্বার ধারাবাহিকতায় সৃষ্টি হতে থাকা অগণিত আউলিয়া-এ-কিরাম আমাদের দৃষ্টিকে সে সত্যের প্রতিই আকর্ষিত করে। আরিফ কামিল কবি বাহরুল উলুম আল্লামাহ শাহসূফী আবদুল গণি কাঞ্চনপূরী (রাদ্বি.) কতইনা সুন্দর বলেছেন,
গাউছে ধনের প্রেম বাগানে, নিরঞ্জনের কৃপাগুণে,
প্রেমের বসন্তঋতু আসিলরে।
ফুলের সুগন্ধি এল, মুর্দা দিল যিন্দা হল,
অমর নগর পন্থা খুলিলরে।
জমিন আদমকুলে, আরশয়ে ফিরিশতাদলে,
মারহাবা মারহাবা ধ্বনি পড়িলরে।
খোদা ও মুস্তফা বলে, মকবুল অধীনে বলে,
ছল্লে আলা একি বাহার হইলরে।
প্রেমাকাশের উজ্জল রবি ইমামুল আউলিয়া গাউসুল আ’যম মাইজভাণ্ডারী (রাদ্বি.) সে প্রেমেরই দীক্ষা দিয়ে গিয়েছেন, যা জগতগুরু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা’র দীক্ষিত প্রেমের শিক্ষা। আল্লামা আব্দুল হাদীর ভাষায় ‘ভাণ্ডার সে বৃন্দাবন, প্রেমনিধি গাউছে ধন’। এ প্রেমে সর্বত্র প্রভূ দৃশ্যত কিংবা সবখানেতে প্রভূর অস্তিত্ব মর্মীয় দর্শন রয়েছে বিধায় জাগতিক মোহ মায়ায় যেমন জড়ায়না, তেমনি জগতের কিছুই উপেক্ষিত-নির্যাতিত হয়না। বরং সবকিছুই প্রভূর দর্পন মর্মে প্রেমের দৃষ্টিতে নিরীক্ষিত হয়। ইমামুল আউলিয়া গাউসুল আ’যম মাইজভাণ্ডারী (রাদ্বি.)’র খলিফাগণের ভাষায়,
★‘যে অবধি হৃদে প্রিয়া করেছে আসন, যে দিকে ফিরাই আঁখি পাই দর্শন’।
★‘আরব আ’যম আওর মুলক সারে, ইয়ে হাপ্ত ইক্বলীম মে পিয়ারে,
খুরশীদো মাহতাব ফলক্ কী তারে, পিয়াকা আয়না ঝলক্ রহা হে’।
★‘জগত সারা পিয়ারে তোম হো, নয়ন তারা পিয়ারে তোম হো।
★‘সূর্যের কিরণে, চন্দ্রের আলোকে, নক্ষত্র ঝলকে, পুষ্পের ছটকে,
জ্ঞানচক্ষে হেরি গাহে কবিকুল তোমার মহিমা গান’। ইত্যাদি ইত্যাদি।
তাই এ প্রেম দীক্ষায় দীক্ষিতরা প্রভূ মিলন যেমন লাভ করে, তেমনি তাঁর সৃজনের প্রতিও তাঁরই কারণে অগাধ ভালবাসা প্রদর্শন করে। আজকের এ অশান্ত পৃথিবীতে ওই সত্য প্রেমের দীক্ষা-দর্শন তথা মাইজভাণ্ডারী ত্বরীক্বার চর্চা ও অনুশীলন হলে সর্বত্র শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে এবং বিদূরীত হবে সর্ববিদ ভ্রান্তি ও অশান্তি।