সকল আউলিয়ায়ে রব্বানী, ওলমায়ে হক্কানী, পূণ্যবান ও খোদাভীরুদের জন্য ‘রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু’ বলা ও লেখার বৈধতা

🖋️মুক্তিধারা ডেস্ক
গেল ১০ মাঘ ১৪১৭ বাংলা হযরত গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র ১০৫ তম ওরস শরীফ উপলক্ষে প্রকাশিত মুক্তিধারা বিশেষ বুলেটিন ১ম বর্ষ ১ম সংখ্যায় গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী (রা.)’র জন্য “রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু”  লিখিত হওয়ায় এ দু‘আ বাক্য আল্লাহর রাসূলের সাহবীদের জন্য নির্দিষ্ট জ্ঞানে কেউ কেউ দ্বিধা-দ্বন্ধে ভােগতে দেখা যায়। কেউ কেউ জানার জন্য মুক্তিধারা প্রকাশনা সংশ্লিষ্টদের নিকট মৌখিক জিজ্ঞাসাও করেন। কোন কোন ক্ষেত্রে অহেতুক বিতর্ক ও গলা ফাটানাে উচ্চারণে সমালােচনার সংবাদ সহৃদ পাঠকদের সচেতনতায় ই-মেইলে আমাদের গোচরে আসে। সুতরাং, অকারণ দ্বিধা-দ্বন্ধ ও অহেতুক বিতর্কের অবসানে এ ক্ষুদ্র নিবন্ধের অবতারণা। প্রকাশ থাকে যে, ‘রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু’ মর্মীয় উচ্চাঙ্গের দু’আ বাক্য হযরাত সাহাবায়ে কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুম’র জন্য নির্দিষ্ট নয়, বরং সকল আউলিয়ায়ে রব্বানী, ওলামায়ে হক্কানী, পূন্যবান ও খােদাভীরুদের জন্যও বলা ও লিখা বৈধ। পরন্তু যেন-তেন লোকের জন্য উক্ত রূপ সম্মানজনক বাক্যের ব্যবহার অনুচিৎ। প্রমাণ স্বরূপ মহাগ্রন্থ আল্ কুরআনুল কারীমের নিন্মােক্ত আয়াত লক্ষনীয়।
এক. “رَّضِىَ ٱللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا۟ عَنْهُ ذَٰلِكَ لِمَنْ خَشِىَ رَبَّهُۥ”‘রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম ওয়া রাদ্বু ‘আনহু; যা-লিকা লিমান খাশিয়া রব্বাহ’ অর্থাৎ- ‘আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন এবং, তারাও তাঁর (আল্লাহর) ওপর সন্তুষ্ট; এ সন্তুষ্টি ওইসব লােকের জন্য, যে তার প্রভুকে ভয় করে’। সূরা বাইয়্যিনাহ ৮নং আয়াতাংশ।
দুই.وَ السّٰبِقُوۡنَ الۡاَوَّلُوۡنَ مِنَ الۡمُهٰجِرِیۡنَ وَ الۡاَنۡصَارِ وَ الَّذِیۡنَ اتَّبَعُوۡهُمۡ بِاِحۡسَانٍ ۙ رَّضِیَ اللّٰهُ عَنۡهُمۡ وَ رَضُوۡا عَنۡهُ ‘ওয়াসসা-বিক্বূনাল আওওয়ালূনা মিনাল মুহাজ্বিরীনা ওয়াল আনসা-রি ওয়াল্লাযীনাত্তাবাউ-হুম বিইহসা-নির রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম ওয়ারাদ্বু ‘আনহু’ অর্থাৎ- ‘মুহাজির ও আনসারগণের মধ্যে যারা (ঈমান আনয়ন ও পুণ্যকাজে) অগ্রগামী পূর্বসূরী এবং যারা নিষ্টার সাথে তাদের অনুগমন করে, তাঁদের সকলের প্রতি আল্লাহ প্রসন্ন এবং তাঁরাও আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট। সূরা তাওবা ১০০ নং আয়াতাংশ।
প্রথম আয়াতে রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর সুসংবাদ খােদাভীরু সকল মুসলমানের জন্য; যাদেরকে পরিভাষায় ‘মুক্তাকী’ বলা হয়। দ্বিতীয় আয়াতে ঈমান আনয়ন ও পুণ্যকাজে অগ্রগামী আনসার-মুহাজির সাহবীদের সাথে সাথে তাদের নিখুত অনুগামী সকলই উক্ত সুসংবাদের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং ‘হযরত গাউসুল্লাহিল আ’যম কুত্ববুল্লাহিল আফখম শায়খ সাইয়্যেদ আহমদুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু’ ও আল কুরআন বিঘোষিত উক্তরূপ সুসংবাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়টি মােটেও বর্ণনার মুখাপেক্ষী নয়। কেননা তাঁর ওলীয়ুল্লাহ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে কারাে দ্বিমত নেই। এমনকি দেওবন্দী ওলামাদেরও তাঁর কাশফ কারামাতা অকপট স্বীকৃতি দিতে দেখা যায়। হাটহাজারী কওমী মাদরাসা প্রতিষ্ঠার বহুকাল পূর্বে হযরত গাউসুল আ’যম মাইজভাণ্ডারী (রাদ্বি.) কর্তৃক উক্ত মাদ্রাসার সীমা নির্ধারণ হওয়া সংক্রান্ত কাশফের ঘটনা স্বয়ং দেওবন্দী মাওলানা নাজির আহমদ সাহেব কর্তৃক ‘নাদওয়াতুল মুকাল্লেফীন’ গ্রন্থের চতুর্থ খণ্ডে বিবৃত হয়েছে। দেওবন্দী আলেম মৌং নজির আহমদ নেজামপুরী সাহেব হযরত গাউসুল আ’যম মাইজভাণ্ডারী (রাদ্বি.)’র ব্যাপারে ‘চট্টগ্রামের সর্বশ্রেষ্ঠ বুযুর্গ ও আলেম’ বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। জীবনী ও কারামাত দ্রষ্টব্য।
সর্বজন বিদিত যে, অলিয়ুল্লাহ মাত্রই ‘নফসে মুত্বমায়িন্নাহ’ বা প্রশান্ত আত্মার অধিকারী হয়ে থাকেন। আর প্রশান্ত আত্মার প্রতি আল্লাহ তা‘আলার আহবান ‘ওহে, প্রশান্ত আত্মা! তুমি সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন অবস্থায় তােমার রবের প্রতি ফিরে এস’। সূরা ফজর ২৭-২৮নং আয়াত। সুতরাং গাউসুল আ’যম মাইজভাণ্ডারী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহু’র ক্ষেত্রেতাে নয়-ই, অন্য যে কোন অলিয়ুল্লাহর বেলায়ও ‘রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’ ব্যবহারে কোন রূপ আপত্তি থাকতে পারেনা। আল্লামা নাওবভী (রহ.) বলেন, ‘সকল ওলামায়ে দ্বীন ও উত্তম ব্যক্তিত্ব তথা পুণ্যবানদের জন্য ‘রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’ ও ‘রহমতুল্লাহি আলাইহি’ বলা ও লিখা বাঞ্চনীয়। (শরহে মুসলিম ১ম খণ্ড, ২০ পৃষ্ঠা, আল্লামা ইহইয়া বিন শরফ নাওবভী (রা.), ইন্তেকাল: ৬৭৬ হিজরী)।
সলফে সালেহীনদের লিখনীতে সাহবীয়ে রাসূল ‘সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়া ‘আলা আলিহী ওয়া সাল্লাম’ ব্যতীত অন্যান্য সম্মানীজনদের জন্যও ‘রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’ লিখার বহু দৃষ্টান্ত দেখতে পাওয়া যায়। উদাহরণ স্বরূপ কয়েকটি নিন্মে প্রদত্ত হল।
১। ইমাম রাযী লিখেছেন, ‘ক্বালা আবূ হানিফা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’। (ইমাম ফখরুদ্দীন মুহাম্মদ বিন দ্বিয়া উদ্দীন ওমর রাযী রহমতুল্লাহি তা‘আলা আলাইহি, ইন্তেকাল ও ৬০৯ হিজরী তাফসীরে কবীর ২ খণ্ড, ৮৩ পৃষ্ঠা)।
২। তিনি আরাে লিখেছেন, ‘ক্বালা আবূ হানিফা ওয়া আসহাবুহু রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম’। (তফসীরে কবীর চতুর্থ খণ্ড, ৪১৮ পৃষ্ঠা)।
৩। বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থের অন্যতম সহীহ মুসলিম শরীফে স্বয়ং ইমাম মুসলিম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু (ইন্তেকাল: ২৬১ হিজরী)। নিজের নামের পর ‘রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’ লিখেছেন। সহীহ মুসলিম শরীফের কিতাবুল ঈমানের সূচনায় রয়েছে, ‘ক্বালা আবূল হুসাইনি মুসলিমুবনুল হাজ্জাজিল কুশাইরীয়্যু রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বি‘আওনিল্লাহি নাবতাদীউ ওয়া ইয়্যাহু নাসতাকফী ওয়া মা- তাওফীকুনা- ইল্লা- বিল্লা-হি জাল্লা জালা-লুহু’।
আল্লাহর রাসূলের সাহবীগণ ব্যতীত অন্যান্য আউলিয়ায়ে রব্বানী ও ওলামায়ে হক্কানীর জন্য ‘রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’ ব্যবহারের বৈধতায় উপরিক্ত দলীল-প্রমাণ সত্য সন্ধানীদের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তা‘আলা সকলকে অকারণ দ্বিধা-দ্বন্ধ ও অহেতুক বিতর্ক পরিহারে সত্য অনুধাবনের যথার্থ সমঝ দান করুন, আমীন বিহুরমতি সাইয়্যিদিল মুরসালীন সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়া ‘আলা আলিহী ওয়া আসহাবিহী ওয়া সাল্লাম ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *