মাওলা-ই কায়িনাত রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু

মাওলা-ই কায়িনাত রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু

(দ্বিতীয় পর্ব)
🖊 আল্লামা বোরহান উদ্দীন মুহাম্মদ শফিউল বশর
আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ওই সত্তা, যিনি তাঁর আম্মা ফাত্বিমাহ বিনতে আসাদ (রা.)’র গর্ভে থাকাকালীন তাঁকে মূর্তি পূজা থেকে নিবৃত্ত রাখেন।
وعنها رضي الله عنها أنها في الجاهلية أرادت ان تسجد لهبل وهي حامل بعلىّ فتقوّس في بطنها فمنعها من ذلك 
‘ওয়া আনহা- রাদ্বিয়াল্লা-হু ‘আনহা- আন্নাহা- ফীল্ জা-হিলিয়্যাতি আরা-দাত্ আন্ তাসজুদা লিহুবালা ওয়া হিয়া হা-মিলুম্ বি-আলিয়্যিন ফাতাক্বাওওয়াসা ফী বাত্বনিহা- ফামানা‘আহা- মিন যালিকা’ অর্থাৎ ‘তিনি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি (রা.) হযরত আলী (রা.)কে গর্ভে ধারণাবস্থায় অজ্ঞতার যুগে হুবালকে সিজদা করার ইচ্ছা করলে তিনি (রা.) তাঁর গর্ভে ধনুকাকার হয়ে তাঁকে ওই কাজে বাঁধা দেন’। (সূত্র: ইনসানুল উয়ূনি ফী সীরাতিল আমীনিল মামূন, আবূল ফারজ নূরুদ্দীন আলী বিন ইব্রাহীম বিন আহমদ আল্ হালাবী আশশাফি‘ঈ (৯৭৫ হি. ১৫৬৭ খ্রি.-১০৪৪ হি. ১৬৩৫ খ্রি.), প্রথম খণ্ড ৩৩৮ পৃষ্ঠা, বায়রূত- লেবনান)।
গাউসুল আ’যম শাহানশাহে বগদাদ (রা.) সহ অন্য অনেক ওলীয়ুল্লাহর ক্ষেত্রে মাতৃগর্ভে থাকাকালীন তাসাররুফাতে বিশ্বাস যদি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদাহ-বিশ্বাসের পরিপন্থি না হয়, তবে শাহানশাহে বিলায়ত মাওলায়ে কায়িনাত (রাদ্বি.)’র বিষয়ে বর্ণিত কারামাতে বিশ্বাস কেন শী‘আহ আক্বীদাহ হবে?
আলী (রা.) ওই সত্তা, যিনি জগতে আবির্ভূত হয়ে নবী করীম (দ.)’র জিহ্বা মুবারক চুষেই প্রথম আহার্য গ্রহণ করেছেন।
فعن فاطمة بنت اسد امّ عليّ رضي الله عنها انها قالت “لما ولدته سمّاه عليًّا وبصق في فيه‘ ثم انّه القمه لسانه‘ فمازال يمصه حتي نام‘ قالت فلما كان من الغد طلبنا له مرضعة فلم يقبل ثدي احد فدعوناله محمّدا صلّي الله عليه وسلّم فالقمه لسانه فنام‘ فكان كذلك ماشاء الله عزّوجلّ
ফা‘আন ফা-ত্বিমাতা বিনতি আসাদিন উম্মি আলিয়্যিন রাদ্বিয়াল্লা-হু আনহা- আন্নাহা- ক্বা-লাত লাম্মা- ওলিদতুহু সাম্মা-হু আলিয়্যান ওয়া বাছাক্বা ফী ফীহি, ছুম্মা ইন্নাহু আলক্বামাহু লিসা-নাহু ফামা- য-লা য়ামাচ্ছুহু হাত্তা না-মা, ফালাম্মা- কা-না মিনাল্ গাদি ত্বালাবনা- লাহু মুরদ্বি‘আতান ফালাম য়াক্ববাল ছাদায় আহাদিন ফাদা‘ঊনা- লাহু মুহাম্মদান সাল্লাল্লা-হু আলায়হি ওয়া সাল্লামা ফালক্বামাহু লিসা-নাহু ফানা-মা, ফাকা-না কাযালিকা মা- শা-য়াল্লা-হু আযযা ওয়া জাল্লা।
অর্থাৎ: ‘আলী জননী ফাত্বিমাহ বিনতে আসাদ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যখন তাঁকে (আলীকে) জন্ম দিলাম, তিনি (নবী) তাঁর নাম রাখলেন আলী এবং তাঁর মুখে থুথু মুবারক দিলেন। অতঃপর তিনি (দ.) তাঁর জিহ্বা মুবারক তাঁর মুখে দিলেন। তিনি (রা.) চুষতে রইলেন, যাবৎনা নিদ্রা এল। পরদিন আমরা তাঁর জন্য ধাইমা খুঁজে আনলে তিনি কারো স্তন্য গ্রহণ করলেন না। অতএব, আমরা মুহাম্মদ (দ.)কে ডেকে আনলে তিনি (দ.) তাঁর মুখে আপন জিহ্বা মুবারক রেখে দিলে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। এভাবে আল্লাহর ইচ্ছা মুওয়াফিক চলল।’ (আসসীরাতুল হালাবিয়্যাহ প্রথম খণ্ড ৩৩৭-৩৩৮ পৃষ্ঠা, বায়রূত-লেবনান)।
আলী (রা.) ওই সত্তা, যিনি শৈশব থেকেই প্রিয় নবী (দ.)’র তত্ত্বাবধানে লালিত-পালিত হয়েছেন।
وكان مما أنعم الله (به) علي عليّ بن ابي طالب رضي الله عنه‘ انّه كان في حجر رسول الله صلّي الله عليه وسلّم قبل الاسلام 
‘ওয়া কা-না মিম্মা- আন‘আমাল্লা-হু (বিহী) ‘আলা আলিয়্যিবনি আবী ত্বা-লিবিন রাদ্বিয়াল্লা-হু আনহু আন্নাহু কা-না ফী হিজরি রাসূলিল্লা-হি সাল্লাল্লা-হু আলায়হি ওয়া সাল্লামা ক্ববলাল ইসলা-মি’।
অর্থাৎ: ‘প্রিয় নবী (দ.)’র মাধ্যমে আল্লাহ আবূ ত্বা-লিব তনয় আলীর ওপর যে অনুগ্রহরাজি করেছেন, তার অন্যতম হল, তিনি ইসলামপূর্ব যুগে রাসূলুল্লা-হ (দ.)’র কোলে (লালন-পালনে) ছিলেন। (সূত্র: আসসীরাতুন নববীয়্যাহ লি-আবী মুহাম্মদ আব্দিল মা-লিক বিন হিশা-ম আল মু‘আ-ফিরিয়্যী (ইন্তিকাল ২১৮ হি. ৮৪৩ খ্রি.), ১ম খণ্ড ১৭৮ পৃষ্ঠা, দা-রুল হাদীস আলক্বা-হিরাহ)।
আবূ ত্বালিব তনয় আলীর পালন ভার নবী করীম (দ.)’র নেওয়া এবং জা’ফরের দায়িত্ব হযরত আব্বাস (রা.)’র নেওয়ার ঘটনা ইতিহাস প্রসিদ্ধ; সুতরাং পুনরুল্লেখ নিষ্প্রয়োজন।
মাওলা-ই কায়িনাত (রা.)’র প্রতি আঙ্গুল উত্তোলনের পূর্বে শতবার ভাবা জরুরি যে, ওই আঙ্গুল আল্লাহর হিফাযত বা সংরক্ষণ এবং মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (দ.)’র পালনের প্রতিও নির্দেশ করছে কিনা? এ বিষয়টি যত সত্বর হৃদয়ংগম হবে, বিতর্কের অবসানও তত ত্বরিত হবে।
হে শিফাদাতা প্রভু! বিবেকের সাক্বামত বা রুগ্নতার শিফা দাও। 
মা‘আসসালাম
চলমান…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *