✒মুক্তিধারা ডেস্ক:
আদম সফীয়ুল্লাহ, নূহ নজীয়ুল্লাহ, ইব্রাহীম খলীলুল্লাহ, মূসা কলীমুল্লাহ, ঈসা রূহুল্লাহ, এমনিভাবে সকল নবী-রসূল আলায়হিমুস্ সালামও আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদুর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামা’র মহান দরবারে ফরিয়াদী। জগতের সকল ফরিয়াদীর ফরিয়াদ সৈয়্যদুল মুরসালীন, হাবীবু রব্বিল আলামীন (দ.)’র মাধ্যমেই আল্লাহর নিকট পৌঁছায়, তিনি (দ.) সকল সৃষ্টি জগতের ফরিয়াদের ক্বিবলাহ। এ গূঢ় রহস্য অনুধাবনে সহায়ক তথ্যালোক তত্ত্ব উপস্থাপনই নিবন্ধের প্রতিপাদ্য।
সর্বজন বিদিত যে, আম্বিয়া-ই কিরাম আলায়হিমুস্ সালামের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী নিয়ে আসতেন জিব্রাঈল আলায়হিস্ সালাম। নবী-রাসূলগণ আলা নবীয়্যিনা ওয়া আলায়হিমুস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম প্রদত্ত সংবাদও তিনিই আল্লাহর নিকট পৌঁছাতেন। হযরত ইব্রাহীম (আ.)কে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপের জন্য যখন নিক্ষেপণ যন্ত্রের ওপর রাখা হয়েছিল, তখন জিব্রাঈল (আ.) এসে বলেছিলেন, ‘ইব্রাহীম! আপনার কোন প্রয়োজন?’ উত্তরে ইব্রাহীম (আ.) বলেছিলেন, ‘আছে, তবে তোমার নিকট নয়।’ জিব্রাঈল (আ.) ফের বলেছিলেন, ‘যার কাছে আছে, তাঁর নিকট ফরিয়াদ করুন।’ জবাবে ইব্রাহীম (আ.) বলেছিলেন, ‘আমার অবস্থা সম্পর্কে তাঁর জানা, তাঁর নিকট আমার প্রার্থনা অপেক্ষা আমার জন্য অধিক যথেষ্ট।’
মি’রাজ রজনীতে সিদরাতুল মুনতাহায় জিব্রাঈল (আ.) যখন থমকে দাঁড়ান, তখন নবী-ই আকরম (দ.) বলেন, ‘এমন স্থানে কোন বন্ধু কি আপন বন্ধুকে ছেড়ে যায়?’ প্রত্যুত্তরে জিব্রাঈল (আ.) বলেন, ‘আমি যদি আঙ্গুলাগ্র পরিমাণ নিকটবর্তী হই, বর্ণনান্তরে আমি যদি (এ স্থান) অতিক্রম করি, জ্বলে যাবো, বর্ণনান্তরে আগুনে পুড়ে যাবো।’ তখন আল্লাহর প্রিয় রসূল (দ.) জিব্রাঈল (আ.)কে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে জিব্রাঈল! তোমার প্রভুর নিকট, তোমার কোন প্রার্থনা আছে?’ উত্তরে জিব্রাঈল (আ.) বললেন, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ! আমার একটি ফরিয়াদ আছে, তা আল্লাহর দরবারে পৌঁছাবেন। আপনার উম্মতের সিরাত পাড়ি দেওয়ার কালে, তারা অতিক্রম করে যাওয়া পর্যন্ত আমি যেন আপন পাখা তাদের জন্য বিছিয়ে দিতে পারি।’
রসূলে আকরম, হাবীবু যিল্ জালালি ওয়াল ইকরাম (দ.) ইরশাদ করেন, “অতঃপর আমাকে নিয়ে ভেদ করল সত্তর হাজার পর্দা, তদ্মধ্যে কোন পর্দাই পরস্পর সদৃশ ছিলনা, প্রতিটি পর্দার পুরুত্ব পাঁচশত বছরের পথ। ………….সুমহান আর্শ থেকে আহ্বান এল, ‘নিকটে এসো হে সৃষ্টির সেরা! নিকটে এসো হে অধিক প্রশংসাকারী! নিকটে এসো হে পরম প্রশংসিত!’ অতঃপর আমার প্রভু আমাকে নৈকট্য ধন্য করলেন, এমনকি আমি এতই নিকটতর হলাম, ঠিক যেমন আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর তিনি (নবী করীম) নিকটবর্তী হলেন এবং তিনি (আল্লাহ) আরো নিকটবর্তী হলেন, তখন দুই ধনুকের ব্যবধান অথবা আরো কমতর ছিল।”
নৈকট্য বিষয়ক একটি হাদীস শরীফ এখানে উল্লেখ করা সঙ্গত মনে করি। ইরশাদ হচ্ছে, ‘যে ব্যক্তি অঙ্গুষ্ঠ পরিমাণ আমার নিকটবর্তী হয়, আমি তার প্রতি গজসম নিকটতর হই। যে আমার দিকে হাঁটিয়ে আসে, আমি তাঁর দিকে দৌড়াই।’ আলোচ্য হাদীসে কুদসী মর্মে বান্দার অঙ্গুষ্ঠ পরিমাণের বিনিময়ে আল্লাহ তাঁর শান অনুযায়ী গজ পরিমাণ, হাঁটার বিনিময়ে দৌড়ার প্রতিশ্রুতি বিবৃত। আর উক্ত আয়াতে নবী করীম (দ.)’র ‘দানা’ বা ‘নিকটবর্তী হলেন’ এর উত্তরে আল্লাহর ‘ফাতাদাল্লা’ বা ‘আরো অধিক নিকটবর্তী হলেন’।
উপরিক্ত তথ্য মতে জানা যায় যে, জিব্রাঈল (আ.)’র ফরিয়াদও আল্লাহর নিকট পৌঁছান আল্লাহর হাবীব মুহাম্মদুর রসূলুল্লাহ (দ.)।
হযরত জিব্রাঈল (আ.) উম্মতে মুহাম্মদীর সেবায় আত্মনিয়োগের অভিলাষ কেন প্রকাশ করলেন? জিব্রাঈল (আ.) জানতেন যে, নবী-ই আকরম (দ.)কে সন্তুষ্ট করার জন্য তাঁর উম্মতকে খুশি করা ছাড়া অন্য বিকল্প নেই। আক্বা-ই দূ ‘আলম (দ.)’র সন্তুষ্টি, উম্মতের মঙ্গল, সাফল্য ও খুশিতেই নিহিত।
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রিয় হাবীব (দ.)’র গোলামীতেই আমাদের অবিচল রাখুন।