গাউসুল আ’যম মাইজভাণ্ডারী (রাদ্বি.)’র অধ্যাপনা বিষয়ক কিছু তথ্য

মাইজভাণ্ডারী দর্শন
     
এম এম মামুনুর রশীদ

গাউসুল আ’যম মাইজভাণ্ডারী (রাদ্বি.)’র কর্মময় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কয়টি বছর ইলমে যাহেরী বিতরণেও ব্যয় হয়েছে। তাঁর পবিত্র জীবনের এ অধ্যায়টি নানা কারণে সর্বসাধারণের অজানা রয়ে গিয়েছে। আমরা তাঁর কলিকাতা আলীয়া মাদরাসায় অধ্যাপনা বিষয়ক কিছু তথ্য উপস্থাপনের চেষ্টা করব; ইনশায়াল্লাহু তা‘আলা।

ক. আহমদুল্লাহ চাটগামী: মাওলানা শাহ আহমদুল্লাহ চাটগামী। তিনি চট্টগ্রামের ঈসাপূরস্থ মাইজভাণ্ডারের অধিবাসী। তাঁর জন্ম ১৮২৭ খ্রিস্টাব্দ (১৮২৬ খ্রিস্টাব্দ)। প্রাথমিক শিক্ষা চট্টগ্রামে অর্জন করেন। অতঃপর হুগলী গমন করে মাদরাসা-ই মুহসিনিয়্যাহ হুগলীতে ভর্তি হয়ে কিছুদিন জ্ঞান অর্জন করতে থাকেন। এখান থেকে শিক্ষা সম্পন্নের মানসে মাদরাসা-ই আলীয়া কলিকাতা তশরীফ নিয়ে শিক্ষা সমাপণ করে ১২৬৭ হিজরী (১২৭২ হিজরী) সনে মাদরাসা-ই আলীয়ার শিক্ষক নিযুক্ত হন। (সংকলক মহোদয়ের বর্ণনায় শিক্ষা সমাপন মাত্র মাদরাসা-ই আলীয়ার শিক্ষক নিযুক্ত হওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও বস্তুত তিনি যশোর জেলার কাযীর ও মুন্সী বু আলী মাদরাসার প্রধান মুদাররিসের দায়িত্ব পালন শেষে ১২৭২ হিজরীতেই যোগদান করেন। সূত্র: আঈনায়ে বারী ও তায্কেরাতুল কেরাম) শুধু দু’বছর শিক্ষা-দীক্ষার কাজে নিমগ্ন থাকার পর মন-মেজাজ (চাকুরীর প্রতি) নিরাসক্ত এবং তাসাওউফ চর্চা-অনুশীলনে আসক্ত হয়ে পড়ে। চাকুরী ইস্তেফা দিয়ে আপন জন্মভূমিতে প্রত্যাবর্তন করে আল্লাহর ইবাদত ও কঠোর সাধনায় কালাতিপাত করতে থাকেন। ক্রমান্বয়ে তাঁর মাঝে ওই কামালিয়্যাত অর্জন হল যে, আপন যুগের ছাহিবে কারামা-ত বুযুর্গদের মধ্যে পরিগণিত হতে লাগলেন। ১৩২৩ হিজরী সনে তিনি এ নশ্বর জগত থেকে বিদায় নেন। তাঁর মাযার মাইজভাণ্ডারে। পূর্ব পাকিস্তানের বুযুর্গদের মাঝে তিনি গণ্য। অতএব প্রতি বছর বড় ধুমধামে তাঁর উরস হয় এবং মাযারের পাশে ধর্মীয় মহাসম্মিলন বসে। ভক্তগণ উরসে অংশগ্রহণের জন্য দূর-দূরান্ত থেকে আসেন এবং বাত্বেনী ফুয়ূদ্বাতে পূর্ণ হয়ে ফিরে যান। (সূত্র: তারীখ-ই মাদরাসা-ই আলীয়া ১৭৮১-১৯৬৯ ঈসায়ী, সংকলক: মাওলানা আব্দুস সত্তার, লেকচারার: মাদ্রাসা-ই আলীয়া ঢাকা, প্রকাশক: সেক্রেটারি রিসার্চ এন্ড পাবলিকেশন্স, মাদ্রাসা আলীয়া ঢাকা, ইঙ্ক প্রেস ৭ কৈলাশ ঘোষ লেইন ঢাকা, প্রথম প্রকাশ ১৯৫৯ ঈসায়ী ২য় খ- ১৮২-১৮৩ পৃষ্ঠা)
খ. মাওলানা শাহ আহমদ উল্লাহ: চট্টগ্রাম জিলার অন্তর্গত মাইজভাণ্ডারের পীর হযরত শাহ আহমদ উল্লাহ মরহুম মাদ্রাসা-ই আলিয়ার একজন কৃতী ছাত্র ছিলেন। তিনি ১৮২৭ খৃস্টাব্দে (১৮২৬ খৃস্টাব্দ) উক্ত জিলার ইছাপুরে জন্মগ্রহণ করেন। চট্টগ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করিয়া তিনি হুগলীর বিখ্যাত মোহসেনিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন এবং কিছুকাল সেখানে শিক্ষা লাভ করিয়া কলিকাতা মাদ্রাসা-ই-আলিয়ায় শিক্ষা লাভ করেন এবং এখান হইতেই তিনি শিক্ষা সমাপ্তির সনদ লাভ করেন। অতঃপর ১২৬৭ হিজরীতে (১২৭২ হিজরী) তিনি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার শিক্ষক নিযুক্ত হন। দুই বৎসর শিক্ষকতা করার পর তিনি ইলমে মা’রিফাতের দিকে ঝুঁকিয়া পড়েন এবং মাদ্রাসার কর্মভার পরিত্যাগ করিয়া নিজ এলাকায় ইলমে মা’রিফাতের সাধনায় মগ্ন হইয়া পড়েন। অল্পদিনের মধ্যেই তাঁহার কাশফ ও কারামতের সংবাদ চতুর্দিকে বিস্তার লাভ করিতে থাকে এবং লক্ষ লক্ষ লোক তাঁহার শিষ্যত্ব গ্রহণ করিতে থাকে। আজও তাঁহার কাশফ ও কারামতের কথা দেশময় প্রসিদ্ধ।
বাংলাদেশের ওলীগণের মধ্যে তিনি শীর্ষস্থানীয়। ১৩২৩ হিজরীতে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। মাইজভাণ্ডারেই তাঁহাকে দাফন করা হয়। প্রতি বৎসর তাঁহার ‘উরস উপলক্ষে অগণিত লোক মাইজভাণ্ডারে আসিয়া সমবেত হন এবং তাঁহার রূহানী ফয়েজ হইতে নানাভাবে উপকৃত হইয়া থাকেন।
এমন একজন মহান ব্যক্তি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার ছাত্র ছিলেন বলিয়া নিশ্চয়ই মাদ্রাসা-ই-আলিয়া এজন্য গৌরব বোধ করিতে পারে। (মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার ইতিহাস, মাওলানা মমতাজ উদ্দিন আহমদ (র.), ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ১ম প্রকাশ, ফেব্রুয়ারি, ২০০৪, ফাল্গুন ১৪১০, মুহাররম ১৪২৩, পৃষ্ঠা ১১০-১১১)।

Sharing is caring!