হায়রে অসহায়ত্ব (দ্বিতীয় পর্ব)

হায়রে অসহায়ত্ব

✍️ বোরহান উদ্দিন মুহাম্মদ শফিউল বশর 
[দ্বিতীয় পর্ব]
[“হায়রে বেচারা! জেদেরই মারা! জেদেতে হয়ে দিশেহারা; না করে পরোয়া, নিজেরেই ফতোয়া, যথেচ্ছাচার করা!”  (কিয়া করেঁ, না করেঁ!)। মা’যূর পরে সবার করুণা হয়, ফতওয়া হয়না।]
এক বন্ধুর মন্তব্য হেতু ধারাবাহিক আলোচনায় প্রাসঙ্গিক একটি অনুচ্ছেদ যুক্ত করতে হল। মূল আলোচনায় আসতে বিলম্বের ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার বিনীত নিবেদন রইল।
বিগত পর্বে এক বন্ধুর বিস্মিত মন্তব্য,”অবস্থা খুব ভয়াবহ !! কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে শুধু সাপ নয় অ্যানাকোন্ডা বের হয়ে যাবে মনে হচ্ছে !!”
তাঁর এমন মন্তব্যে ফতোয়ার বিসমিল্লায় উদ্ধৃত সূরাতু আলে ইমরানের ৮০ নাম্বার আয়াতের আনুবাদটা ফের ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে দেখতে সচেষ্ট হলাম। জানেন, অনুবাদের ফাঁকে কি দেখেছি? আল্লামা আরশাদুল ক্বাদেরীর জামা’অতে ইসলামী পুস্তকের “সাহিবে কুরআন শাহানশাহে রিসালত হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামা’র উপর অপবাদ” শীর্ষক পরিচ্ছেদে চয়িত মি. মওদূদীর বিষাক্ত কিছু উক্তি। প্রথমে আরশাদুল ক্বাদেরী উদ্ধৃত মি. মওদূদীর “তারজুমানুল কুরআন মনসবে রেসালতের” ধারাগুলো পড়ুন।
“হুযূরে আকরম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামা’র সত্তাগত ধ্যান-ধারণা চাহিদাকে সাধারণ মানবীয় ধ্যান- ধারণা ও চাহিদার মতো অনর্থক আখ্যায়িত করে মাওলানা মওদূদী নিম্নোক্ত পদাবলীতে মনসবে নবূয়তের সমালোচনা করেন,  ‘রাসূল হিসেবে যে কর্তব্য নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামা’র উপর বর্তায় এবং যে খেদমত তাঁর প্রতি সোপর্দিত তা আঞ্জাম দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি আপন ধ্যান- ধারণা ও চাহিদা মতে কার্যসম্পাদনের স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি প্রাপ্ত নন।’ ( তারজুমানুল কুরআন মনসবে রেসালত ৩১০ পৃষ্ঠা)।
অতঃপর লিখেছেন, “বিবেকতো এটা কোন রূপে মেনে নিতে পারে না যে, এক ব্যক্তিকে আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূল নিযুক্ত করা হবে আবার তাঁকে রেসালতের কার্যাদি আপন খিয়াল খুশী এবং ব্যক্তিসিদ্ধান্তের চাহিদানুসারে আঞ্জাম দেওয়ার জন্য মুক্ত ভাবে ছেড়ে দেওয়া হবে।” ( মনসবে রেসালত ৩১০ পৃষ্ঠা)।
এবার ফতওয়ায় উদ্ধৃত আয়াতের অনুবাদ দেখুন,
وَلاَ يَأْمُرَكُمْ أَن تَتَّخِذُواْ الْمَلاَئِكَةَ وَالنِّبِيِّيْنَ أَرْبَابًا أَيَأْمُرُكُم بِالْكُفْرِ بَعْدَ إِذْ أَنتُم مُّسْلِمُونَ
نبی کو یہ نہیں پہنچتا کہ تمہیں حکم فرماۓ کہ فرشتوں اور پیغمبروں کو رب ٹھہرا لو کیا نبی تمہیں کفر کا حکم دے بعد اس کے کہ تم مسلمان ہو –
অর্থাৎ “নবীর এ অধিকার- ক্ষমতা নেই যে, তোমাদের নির্দেশ দিবেন যে, ফিরিশতাগণ আর নবীদের রব স্থির করে নাও। নবী কি তোমাদের কুফরের নির্দেশ দেয়, এরপর যে, তোমরা মুসলমান হও!” [আল্আত্বায়ান্নাবাবিয়্যাতি ফীল ফাতাওয়ার্রাদ্বাবিয়্যাতি, ২২ খণ্ড, ৪৩২ পৃষ্ঠা, মারকাযে আহলে সুন্নাত বরাকাতে রাদ্বা, গুজরাট।]
আমরা জানি না যে, মওদূদীর তারজুমানুল কুরআন মনসবে রেসালত এর উক্ত দর্শনালোকে ফতোয়ায় আয়াতের উক্তরূপ অনুবাদ করা হলো, নাকি আল্আত্বায়ান্নাবাবিয়্যাতি ফীল ফাতাওয়ার্রাদ্বাবিয়্যাহ এর অনুবাদালোকে উক্তরূপ দর্শন গৃহীত হল? এখানে কার প্রোডাক্ট Original, আর কারটা Fake? (মনীষী বচন, ‘নকল থেকে সাবধান’।)
পরিপূর্ণ ইনসাফের সাথে কেউ কি এই ফায়সালা দিবেন যে, মওদূদীর ঐহেন উক্তি যদি  “সাহিবে কুরআন শাহানশাহে রিসালত হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামা’র উপর অপবাদ” হয়, তবে মুফতী সাহেবের এহেন অনুবাদ তার পক্ষে সনদ কেন হবে না?
মুফতী সাহেব হুজুরের এহেন অনুবাদে মালিকো মুখতার নবীর মিলকো ইখতিয়ার ( কর্তৃত্ব ও ইচ্ছার স্বাধীনতা) প্রশ্নবিদ্ধ হল কিনা? এ অনুবাদ
 خالق کل نے آپ کو مالک کل بنادیا، دونوں جہاں ہے آپکا قبضہ و اختیار میں-
(সর্বশ্রষ্টা তোমায় বানিয়ে দিলেন সর্বকর্তা; উভয় জগত আপনার কর্তৃত্ব ও ইচ্ছাধীন) আক্বীদাহ্’র  বিরুদ্ধে দলীল হিসেবে পরিগণিত হবে কিনা?
 সূরাতুল আনফালের ৩৩ নাম্বার আয়াত ما كان الله ليعذبهم এর অনুবাদে আল্লাহর শানো আযমত বিবেচনায় যেমন অনুবাদ করা হয়েছে, এখানেও শানে মুস্তফার সাথে মানানসই শব্দের চয়ন কি জরুরি ছিল না?
সর্বোপরি এ করুন অবস্থা من عاد لى وليا فقداذنته بالحرب এর ন্যূনতম (‘নুন্যতম’ তাদের বানানে) ঝলক কিনা, বিবেচ্য।
প্রথম পর্ব পড়তে 👉 ক্লিক করুন
তৃতীয় পর্ব পড়তে 👉 ক্লিক করুন

Sharing is caring!

1 thought on “হায়রে অসহায়ত্ব (দ্বিতীয় পর্ব)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *