সকল ঈদের সেরা ঈদ: ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা

 

ভূমিকা: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের জন্য এবং দুরূদ-সালাম ও তাহিয়্যাহ প্রিয় নবী রহমাতুল্লিল আলামীন ও তাঁর সকল প্রিয়জনের জন্য নিবেদিত। অনন্তর প্রকাশ থাকে যে, ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা আজিকার নতুন কোন ঈদ নয়। বরং চিরাচরিত এ পবিত্র ঈদ-ই সর্বাপেক্ষা প্রাচীন ঈদ। সকল ঈদের সেরা এ ঈদই সর্বাধিক কল্যাণকর এক চির মহান ঈদ। সৃষ্টির সূচনাই এ ঈদ কেন্দ্রিক এবং এ ঈদ সমগ্র সৃষ্টিরও স্বয়ং স্রষ্টারও। পক্ষান্তরে অন্যান্য ঈদ, অবাঞ্ছিত ও বিরূপ নানান আনন্দ-উল্লাসে কলুষিত হতে দেখা গেলেও এ পবিত্র ঈদ রয়েছে চির অনাবিল। এবার আমরা দলিল প্রমাণাদির ভিত্তিতে এহেন চিরমহান ঈদের স্বরূপ উপলব্ধি করতে অগ্রসর হই।
এ ঈদ অভিধেয়: ঈদ শব্দটি আরবী। ‘ফিরূযুল লুগাত’- এ উল্লেখ আছে,
 ১. ঈদ এর আভিধানিক অর্থ: যা বার বার আসে।
২. মুসলমানদের আনন্দ উৎসবের দিন।
৩. পরমানন্দ।
‘আল্ মুনজেদ’ অভিধানে উল্লেখ আছে, “প্রত্যেক ওই দিবসকে ঈদ বলে যা সুবিখ্যাত কোন ব্যক্তির বা সুপ্রসিদ্ধ কোন ঘটনার স্মরণে উদযাপিত হয়। বর্ণিত যে, ঈদকে এজন্যই ঈদ বলা হয় তা প্রতিবছরই ফিরে আসে”।
আল্লামা রাগেব ইস্পাহানীর ‘মুফরাদাত’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে, “আনন্দ-উৎসব রয়েছে এমন প্রত্যেক দিবসের জন্য ঈদ শব্দটি ব্যবহৃত হয়”।
কুরআনে করীমের সূরা মায়িদার ১১২-১১৪ আয়াত মর্মে হাওয়ারীগণের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ্ তা‘আলার দরবারে প্রার্থনা করেন, “হে আল্লাহ, আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য আসমান থেকে ‘খাদ্যভর্তি খাঞ্চা’ অবতীর্ণ করুন; যা আমাদের জন্য আমাদের আদ্যন্ত সকলের জন্য ঈদ হবে”। সুষ্পষ্ট যে, এ আয়াতে আসমান থেকে খাদ্যভর্তি খাঞ্চা অবতীর্ণ করার মত আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহকে উপলক্ষ করে আনন্দ উদযাপনের মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাকেই ঈদ বলা হয়েছে।
মীলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামা) শব্দদ্বয়ও আরবী।
এটার আভিধানিক অর্থ: রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামার আবির্ভাব; হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়া সাল্লামার আবির্ভাব দিবস (ফিরূযুল লুগাত)।
এটার ভাবার্থ: নূর নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়া সাল্লামার সৃষ্টিলগ্ন থেকে শুরু করে সর্বজগতে পর্যায়নুপাতিক শুভাগমন। যেমন- ইহজগতে তাঁর শুভাগমন উপলক্ষে কুরআন মজীদে ইরশাদ হচ্ছে, “তোমাদের নিকট আল্লাহ্ থেকে নূর এসেছে” (সূরা মা-য়ীদাহ্, পারা ৬, আয়াত ১৫)। এ আয়াতে ‘নূর’ বলতে হুযূর সাইয়্যেদুল মুরসালীন মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়া সাল্লামার পবিত্র সত্তাকেই বুঝানো হয়েছে। তজ্জন্য দ্রষ্টব্য: তাফসীরে ইবনে আব্বাস, ৯০ পৃষ্ঠা; তাফসীরে রূহুল মা‘আনী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৯৭ পৃষ্ঠা; তাফসীরে আত্ ত্ববরী, ৪র্থ খণ্ড, ৫০২ পৃষ্ঠা; তাফসীরে ম‘য়ালিমুত্ তানযীল, ১ম খণ্ড, ২৭৩ পৃষ্ঠা; তাফসীরে বগভী, ১ম খণ্ড, ২১৭ পৃষ্ঠা; তাফসীরে কবীর ৬ষ্ঠ খণ্ড, ১৯৪ পৃষ্ঠা; তাফসীরে মাদারিক, ১ম খণ্ড, ২০৬ পৃষ্ঠা; তাফসীরে খাযিন, ১ম খণ্ড, ৪৪১ পৃষ্ঠা; তাফসীরে জালালাইন-৯৭ পৃষ্ঠা; তাফসীরে হুসাইনী ১৩০ পৃষ্ঠা প্রভৃতি নির্ভরযোগ্য ও সর্বজন মান্য তাফসীর গ্রন্থসমূহ।
অতএব ‘নূর এসেছে’ মানে- “নূরনবী হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা তাশরীফ এনেছেন বা শুভাগমন করেছেন”। আর এটাই ইহজগত আনুপাতিক মীলাদুন্নবীরই স্পষ্ট ভাবার্থ। এ মর্মীয় আরো বহু আয়াত কুরআন মজীদে বিদ্যমান, তবে নসীবে ঈমান রয়েছে এমন ব্যক্তির জন্য এহেন একটি আয়াতই যথেষ্ট; অন্যথায় হযরত নূহ আলাইহিস সালামের প্লাবন সদৃশ ভাসিয়ে দিলেও সুমতি ফিরে আসবে না।
ঈদে মীলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা)’র মৌলিক সূচনা: আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক সৃষ্টিকুল সৃজনের সূচনাই হল পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার মৌলিক সূচনা। কেননা উৎপত্তিহীন আদিমূলে আল্লাহ তা‘আলা ছিলেন নিরাকার গোপন খনি স্বরূপ। এমতাবস্থায় প্রেম বৈশিষ্ট্যের আনন্দ হিল্লোলে নিজ সত্তা ও গুণাবলীর প্রকাশার্থে সৃষ্টিকুল সৃজনলগ্নে সর্বপ্রথম আপন ‘নূর’ হতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার ‘নূরী সত্তা’ সৃজনের মাধ্যমেই সূচিত হয় সমগ্র সৃষ্টির ধারা মর্মে নিম্নোক্ত দু’টি দলিলের সমন্বিতরূপ প্রণিধানযোগ্য।
এক. হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তা‘আলার ইরশাদ হচ্ছে,  “আমি গোপন খনি স্বরূপ। আমার সত্তা ও গুণাবলী প্রকাশে প্রীতি হওয়ার কারণেই সৃষ্টিকুল সৃজন করলাম”।
দুই. হাদীস শরীফে বর্ণিত, “ ইমাম আব্দুর রাযযাক তাঁর সনদসূত্রে হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ্ আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, ‘আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গিত; আমাকে বলুন, সমস্ত কিছুর প্রথমে আল্লাহ তা‘আলা কোন্ বস্তু সৃজন করলেন?’ তদুত্তরে নবী করীম আলায়হি ওয়াসাল্লামা ইরশাদ করলেন, “হে জাবির, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা সমস্ত বস্তুর প্রথমে ‘আপন নূর হতে তোমার নবীর নূর সৃষ্টি করলেন। অতঃপর ওই নূর আল্লাহ্ তা‘আলার মর্জিমাফিক কুদরত সহকারে আবর্তিত হতে থাকে। ওই সময় না ছিল লাওহ, না ছিল কলম, না ছিল জান্নাত, না ছিল দোজখ, না ছিল ফিরিশ্তা, না ছিল আকাশ, না ছিল পৃথিবী, না ছিল সূর্য, না ছিল চন্দ্র, না ছিল জ্বীনজাতি, না ছিল মানবজাতি।
অতঃপর যখন আল্লাহ তা‘আলা অপর সবকিছু সৃষ্টি করতে চাইলেন, তখন ওই নূরকে চার অংশে বিভক্ত করে প্রথম অংশ হতে ‘কলম’ দ্বিতীয় অংশ হতে ‘লাওহ’ এবং তৃতীয় অংশ হতে ‘আর্শ সৃষ্টি করলেন। অনন্তর চতুর্থ অংশকে আবার চার অংশে বিভক্ত করে প্রথম অংশ হতে আর্শবাহী ফিরিশতা, দ্বিতীয় অংশ হতে কুরসী এবং তৃতীয় অংশ হতে বাদবাকী ফিরিশতা সৃষ্টি করলেন। চতুর্থ অংশকে আবার চার অংশে বিভক্ত করে প্রথম অংশ হতে নভোমণ্ডল, দ্বিতীয় অংশ হতে ভূমণ্ডল এবং তৃতীয় অংশ হতে বেহেস্ত-দোযখ সৃষ্টি করলেন। চতুর্থ অংশকে আবার চার অংশে বিভক্ত করতঃ প্রথম অংশ হতে মু’মিনগণের চোখের নূর, দ্বিতীয় অংশ হতে তাদের ক্বলবের নূর যা আল্লাহ তা‘আলার মা’রিফাত এবং তৃতীয় অংশ হতে প্রেম-প্রেরণার নূর তথা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ্’ কলেমাস্ত তাওহীদ সৃষ্টি করলেন।” (বুঝা যায় যে, এ ভাবেই অব্যাহত ধারায় সমুদয় সৃষ্টি সৃজিত হয়)। (আল্ মাওয়াহিবুল্ লাদুনিয়া ৫৫ পৃষ্ঠা; যরক্বানী ‘আলাল্ মাওয়াহিব; সীরাতে হালবীয়্যাহ্ প্রভৃতি)।
অতএব উপরি উক্ত উভয় দলিলের নিরিখে আল্লাহ তা‘আলার সত্তা ও গুণাবলী প্রকাশে প্রীত হয়ে সৃষ্টির ভাবার্থে ঈদ এবং নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামাকে সৃজনের মাধ্যমে সৃষ্টির সূচনা ভাবার্থে মীলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামা)-এর সূচনা যথার্থরূপেই সাব্যস্ত হয়। আরো প্রতিভাত হয় যে, এভাবে পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামা সূচিত হয়ে পর্যায়ানুপাতিক সমগ্র সৃষ্টির মাঝে অব্যাহত ধারায় চলেই আসছে। কেননা অন্যান্য সৃষ্টি সমুদয়কে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামা’র নূর হতে যেমন সৃজন করা হয়েছে তেমনি আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলী প্রকাশার্থে প্রীত হয়েই ওইসব সৃজিত।
পক্ষান্তরে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামা’র অভিপ্রায়ই সমুদয় জগৎ সংসারের সৃষ্টি। তাইতো হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ্ তা‘আলার ইরশাদ হচ্ছে, ‘লাওলাকা লামা খালাক্বতুল আফলাক’ অর্থাৎ (প্রিয় হাবীব) আপনি না হলে সৃষ্টিজগত সৃজনই করতাম না।
রূহ জগতে উদযাপিত এক মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামা: ইতোপূর্বে আমরা অবগত হয়েছি যে, সৃষ্টিলগ্নে সূচিত পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামা পর্যায়ানুপাতিক সর্বজগতেই অব্যাহত ধারায় চলে আসছে। সে ধারাবাহিকতারই অংশ হিসেবে রূহ জগতে তা উদযাপিত হওয়ার প্রমাণ নিম্নরূপ:
পবিত্র কুরআন মজীদে আল্লাহ্ তা‘আলার ইরশাদ হচ্ছে, “আর স্মরণ করুন, যখন আল্লাহ্ নবীগণ থেকে অঙ্গীকার নিলেন যে, ‘তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত যা দান করবো; অতঃপর তোমাদের নিকট রাসূল আগমন করবেন, যিনি তোমাদের কিতাব-হিকমত সত্যায়ন করবেন; তখন অবশ্যই তোমরা তাঁর উপর ঈমান আনবে এবং তাঁর সহযোগিতা করবে’। ইরশাদ করলেন, ‘তোমরা কি স্বীকার করলে? এবং ওই সবের ভিত্তিতে আমার গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করলে?’ সবাই আরয করল, ‘আমরা স্বীকার করলাম’। ইরশাদ করলেন, ‘তবে তোমরা একে অপরের উপর সাক্ষী হয়ে যাও এবং আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষীদের মধ্যে রইলাম। অতএব যে কেউ এরপর বিপরীত ফিরবে, তাহলে ওই লোক ফাসিকই”। (সূরা আল-ই ইমরান, ৩ পারা ৮১ আয়াত)।
উক্ত আয়াত মর্মে আল্লাহ তা‘আলা রূহ জগতে সমবেত করে যেরূপ অঙ্গীকার সকল নবী আলাইহিমুস সালাম থেকে নিলেন, তথায় সাইয়্যেদুল মুরসালীন সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার শুভাগমন সম্পৃক্ত আলোচনা বিদ্যমান। অতএব ওটা তথায় মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা উদযাপিত হওয়ার প্রমাণ বহন করে। এতদসত্ত্বে রূহজগতে উদযাপিত এ মীলাদুন্নবী মাহফিলের প্রভাব কিরূপ সুদূরপ্রসারী সামনে তাও অবলোকনের প্রয়াস পাচ্ছি।
ইহজগতে সকল নবী (আলাইহিমুস্ সালাম) কর্তৃক তা উদযাপন: উপর্যুক্ত আয়াত মর্মে সকল নবী আলায়হিমুস্ সালাম থেকে এহেন অঙ্গীকার রূহজগতে নেওয়া হলেও প্রকৃতপক্ষে তা নেওয়া হয়েছে ইহজগতেরই শর্তারোপ সাপেক্ষে। অতএব ইহজগতে এসে প্রত্যেক নবী আলায়হিমুস্ সালাম এর জন্য তা স্মরণ করা ও রাখার অপরিহার্যতা সুস্পষ্ট। আর এরূপ স্মরণের অপরিহার্যতাই প্রমাণ বহন করে যে,প্রত্যেক নবী আলায়হিমুস্ সালাম কর্তৃক ইহজগতেও মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা উদযাপিত হয়েছে।
নিত্য উদযাপিত আল্লাহর সুন্নাত: উক্ত আয়াত মর্মে এটাও প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক রূহজগতে উদযাপিত এ ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা ইহজগতে পুনরায় উদযাপিত হল উক্ত আয়াত অবতীর্ণ করার মাধ্যমে। পক্ষান্তরে ইতিপূর্বে বিবৃত দলিলালোকে সৃষ্টিজগতের সূচনালগ্নে আল্লাহ্ তা‘আলা কর্তৃক সূচিত পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা পর্যায়নুপাতিক সমগ্র সৃষ্টির সৃজনলগ্নে উদযাপিত হতে থাকা এবং তা ধারাবাহিক চলতে থাকার মত আল্লাহর এ সুন্নাত ইহজগতেও যে অপরিবর্তিত রয়েছে, এটি তারই প্রমাণবহ। আর প্রকৃত মুমিনগণ কর্তৃক আয়াতটি তেলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ্ তা‘আলার এ সুন্নাত তথা ‘পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা’ প্রতিনিয়ত চলতেই থাকবে। কুরআন মজীদে আল্লাহ ত‘আলার ইরশাদ হচ্ছে, “এবং তোমরা আমার সুন্নাত বদলানো পাবেই না”। (সূরা বনী ইস্রাঈল, ১৫ পারা, ৭৭ আয়াত)। আর আল্লাহ তা‘আলার বাণী যে, ক্বাদীম তথা ‘আদি অন্তহীন চিরস্থায়ী’ সে মর্মীয় ব্যাখ্যায় আপাততঃ নাইবা গেলাম।
সাপ্তাহিক ঈদে মীলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা) উদযাপন: হাদীস শরীফে ইরশাদ হচ্ছে, হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখতেন” (তিরমিযী; নাসায়ী; মিশকাত ১৭৯ পৃষ্ঠা)।
হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হচ্ছে, “হযরত আবু কাতাদাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা সমীপে সোমবারের রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি ইরশাদ ফরমান, সেদিন আমি আবির্ভূত হয়েছি এবং সেদিন আমার উপর নবুয়তের দায়িত্ব বা আনুষ্ঠানিক প্রথম ওহী অবতীর্ণ করা হয়।” (মুসলিম; মিশকাত ১৭৯ পৃ.)।
নৈমিত্তিক ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা উদযাপন: 
এক. হযরত আবু উমামাহ এবং হযরত ‘ইরবায ইবনে সারিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা ইরশাদ করেন, আমি আল্লাহর দরবারে সর্বশেষ নবী হিসেবে রেকর্ডভুক্ত ছিলাম; অথচ তখনো আদম আলায়হিস্ সালাম মাটির মধ্যে অগঠিত অবস্থায় ছিলেন। অচিরেই আমি তোমাদরকে আমার আদি বিষয়ে অবগত করবো। আমি ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম’র প্রার্থনা (অর্থাৎ খানায়ে খা’বা নির্মাণপূর্বক যে রাসূল প্রেরণের জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেছিলেন, আমি সে রাসূল) হই, ঈসা আলায়হিস সালাম’র সুসংবাদ (অর্থাৎ তাঁর পরে যে রাসূলের আগমন সম্পর্কে সুসংবাদ দিয়েছিলেন, সে রাসূলই আমি) হই। আর আমি আমার আম্মাজানের সে চাক্ষুস দর্শনের বাস্তবরূপ হই; যা তিনি আমার ইহলোকে শুভাগমন কালে দেখেছিলেন যে, তাঁর (আম্মাজানের) জন্য এক ‘নূর’ আবির্ভূত হলেন, যা তাঁর জন্য (সুদূর) সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ আলোকিত করে তোলেছেন” (বায়হাকী; মুসনাদে আহমদ; মিশকাত- ৫১৩ পৃ.)।
দুই. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা থেকে বর্ণিত, “তিনি (হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) একদিন নিজ ঘরে লোকজন নিয়ে হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা’র আবির্ভাবের ঘটনাবলী বর্ণনা করছিলেন। এতে তাঁরা আনন্দিত হয়ে আল্লাহর প্রশংসা এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা’র ওপর দুরূদ-সালাম পাঠ করছিলেন। এমন সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা তাশরীফ আনয়ন করলেন এবং তাঁদের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত অবধারিত হল” (মাওলুদে কাবীর; আততানভীর; আদদূরুল মুনাযযাম, বসুবুলুল হুদা ফি মাওলিদিল মুস্তফা)
বার্ষিক ঈদে মীলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা) উদযাপন: “হযরত আবুদদারদা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত যে, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার সাথে হযরত আমের আনসারীর বাড়িতে গেলেন। এমতাবস্থায় হযরত আমের আনসারী নিজ সন্তান-সন্ততি ও আত্মীয়-স্বজনদেরকে নিয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা’র আবির্ভাব সম্পর্কিত ঘটনাবলীর বিবরণ দিয়ে বলছেন যে, আজই সে আবির্ভাব দিবস। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা ইরশাদ করলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা তোমার জন্য রহমতের সমূহ দরজা খুলে দিয়েছেন এবং ফিরিশতাগণ সকলই তোমার জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করছে। যে কেউ তোমার কাজটি করবে, সে তোমার মত পরিত্রাণ পাবে”। (আততানভীর ফি মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাজীর, সুবুলুল হুদা)।
ঈদে মীলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা) উদযাপনের সাফল্য: প্রকাশ থাকে যে, ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা’র সাফল্য এমনই অপরিসীম, যা বর্ণনা করে শেষ করা যাবেই না। অতএব এখানে কিঞ্চিতই উত্থাপনের প্রয়াস পাচ্ছি।
এক. উপর্যুক্ত হাদীস শরীফের আলোকে তা উদযাপনকারীর জন্য আল্লাহ তা‘আলা রহমতের সমূহ দরজা খুলে দেন।
দুই. তা উদযাপনকারীর জন্য ফিরিশতাকুল ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
তিন. তৎপূর্বোল্লেখিত হাদীস শরীফের আলোকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার ‘শাফা‘আত’ প্রাপ্তি অবধারিত হয়।
চার. জীবনের যাবতীয় সঞ্চয় থেকে তা উত্তম। কেননা পবিত্র কুরআন মজীদে ইরশাদ হচ্ছে, “(হাবীব)! আপনি বলুন, আল্লাহর দয়ারদান ও রহমতকে কেন্দ্র করে তারা (আপনার উম্মতগণ) যেন আনন্দ উদযাপন করে; এটাই হতে তারা যা সঞ্চয় করবে তন্মধ্যে সর্বোত্তম” (সূরা ইউনূস, পারা ৫৮, আয়াত)। আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা’র শুভাগমন যে, আল্লাহ্ তা‘আলার সর্বাপেক্ষা মহান রহমত ও দয়ার দান তা অবিদিত নয়। কেননা কুরআন মজীদেই আল্লাহ তা‘আলার ইরশাদ হচ্ছে, “(হাবীব)! আমি আপনাকে সমগ্র জগতের জন্য রহমত হিসেবে পাঠিয়েছি” (সূরা আম্বিয়া ১২ পারা, ১০৭ আয়াত)।
আরো ইরশাদ হচ্ছে, “অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদারগণের উপর বড়ই অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মধ্যে রাসূলকে প্রেরণ করেছেন” (আল-ই ইমরান, ৩য় পারা, ১৬৪ আয়াত)।
পাঁচ. ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, “যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী পাঠে (আয়োজন-উদযাপনে) এক দিরহাম পরিমাণও ব্যয় করবে, সে জান্নাতে আমার সহচর হবে” (আননি’মাতুল কুবরা, ৭ পৃষ্ঠা)
ছয়. ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, “যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামাকে সম্মান  করল, সে যেন ইসলামকেই জিন্দা করল” (প্রাগুক্ত)।
সাত. ইসলামের তৃতীয় খলীফা হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, “যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা) পাঠে এক দিরহাম পরিমাণ ব্যয় করল, সে যেন বদর ও হুনাইনের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করল” (প্রাগুক্ত)।
আট. ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত মাওলা আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুল করীম বলেন, “যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামাকে সম্মান করবে এবং তা পাঠের (আয়োজন-উদযাপনের) উসিলা হবে, সে ঈমানের সাথেই দুনিয়া থেকে প্রস্থান করবে এবং বিনা হিসেবেই জান্নাতে প্রবেশ করবে” (প্রাগুক্ত)।
নয়. ঐহেন অপরিসীম সাফল্য মু’মিন-মুসলমানদের জন্য রয়েছেতো বটেই; আবু লাহাবের মত কাফির-মুশরিক সর্বোপরি প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা’র কট্টর দুশমনও মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা’র খুশী উদযাপন করে উপকৃত হয়েছে। এ মর্মে বর্ণিত হাদীসের কথা সর্বজন বিদিত। হাদীসটি বুখারী শরীফেও বিদ্যমান। এখানে হাদীসটি সরাসরি বর্ণনা না করে আলোচ্য বিষয় সংশ্লিষ্ট সারকথাটুকু বিশ্লেষণমূলকভাবে উপস্থাপন করছি।
“প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা ইহলোকে আবির্ভূত হলে আবু লাহাবকে তার দাসী সুয়াইবা এ সুসংবাদ জানাই। এহেন সুসংবাদ আবু লাহাব খুশী হয়ে সুয়াইবাকে আযাদ করে দেয়। (এখানে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা’র আবির্ভাবে সুয়াইবাও আনন্দিত হবার প্রথম পুরস্কার পেলেন দাসত্ব থেকে মুক্তি এবং দ্বিতীয় পুরস্কার নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামাকে দুধ পান করাবার পরম সৌভাগ্য।) আবু লাহাব কট্টর দুশমন হয়েও মৃত্যুর পর ঐটুকু পূণ্যের পুরস্কার পেল যে, হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর দেখা স্বপ্ন মর্মে দো’যখের কঠিন শাস্তির মধ্যে থাকা সত্ত্বেও প্রতি সোমবার শাস্তি হ্রাস করা হয় এবং যে দু’টি আঙ্গুলের ইশারায় সুয়াইবাকে আযাদ করে দিয়েছিল সে দু’টির মধ্যে থেকে স্বল্প পরিমাণ পানি চুষে পায়”।
এ ঈদের শ্রেষ্ঠত্ব: এ পবিত্র ঈদে মীলদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা উদযাপনের মাধ্যমে যে সাফল্য অর্জিত হয় এমন সফলতা অন্যান্য ঈদের মাধ্যমে অর্জন করা দুঃসাধ্য বটে। কেননা অন্যান্য ঈদে পুণ্যের কাজ করেও ‘তাক্বওয়া’ বা অন্তরের পরিশুদ্ধতার অভাব থাকলে সে পুণ্যের কাজটি নিস্ফলে পরিগণিত হয়। যেমন- হাদীস শরীফের বর্ণনানুসারে ‘কুরবানীর ঈদে সবচেয়ে পুণ্যের কাজটি হল, কুরবানী দেওয়া। অথচ তাক্ওয়ার অভাবে সেটিও যে নিস্ফলে পরিগণিত হয়, এমন মর্মীয় আল্লাহ্ তা‘আলার বাণী পবিত্র কুরআন মজীদে ইরশাদ হচ্ছে, “নিশ্চয় আল্লাহর নিকট ওই গুলোর (কুরবানীর পশুর) মাংসও পৌঁছে না, রক্তও না; তবে হ্যাঁ তোমাদের তাক্বওয়াই তাঁর নিকট পৌঁছে” (সূরা আল হজ্ব, পারা ১৭, আয়াত ৩৭)। আর ঈদুল ফিতর এর সফলতা-নিস্ফলতা অনুধাবন করতে নিম্নোক্ত হাদীসটি প্রণিধানযোগ্য।
“হযরত আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ঈদের দিন আমি হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর নিকট গেলাম। আর তিনি দরজা বন্ধ রেখে কাঁদতেছেন। আমি জিজ্ঞাস করলাম, ‘হে আমীরুল মু’মিনীন! কেন আপনি কাঁদছেন? মানুষেরা- তো খুশীর মধ্যে রয়েছে!’ তখন তিনি উত্তর দিলেন, ‘যারা খুশীর মধ্যে রয়েছে, তারা যদি জানতো! তবে তারাও খুশী হতনা’। তারপর আবারও কাঁদতে শুরু করলেন এবং বলতে লাগলেন, ‘তারা যদি প্রিয়ভাজনের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায় তবে খুশী হোক; আর নিগৃহীতদের অন্তর্ভূক্ত হলে তাদেরও কাঁদা দরকার’। এতে করে ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা এবং স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা যাঁর ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে ইসলামকে শক্তিশালী করেছিলেন এমন ব্যক্তিত্বের অধিকারী আমীরুল মুসলিমীন হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু এর মত অনুভূতি যদি সত্যিই আমাদের থাকতো, তবে আমরাও বুঝতে পারতাম কোন ঈদ আমাদের কান্নার এবং কোনটি সত্যিকার খুশীর ঈদ! তিনি রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুইতো ‘পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামাকে সম্মান করল, সে যেন ইসলামকে জিন্দা করল”। অথচ ঈদুল ফিতরে নিজকৃত আমলসমূহের মাধ্যমে তিনি প্রিয়ভাজন হতে পারলেন কিনা সে অনিশ্চয়তায় অজস্র কাঁদলেন। আর এভাবেই এখানে ‘ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা’র শ্রেষ্ঠত্ব স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, তা উদযাপন করা কখনো বিফলে যায় না। অতএব সফলতা অর্জিত হওয়ার দিক দিয়ে ‘পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা’ই সকল ঈদের সেরা ঈদ। এ মর্মে আল্লাহ তা‘আলার পূর্বোক্ত  বাণী আরেকবার স্মরণ  করি। ইরশাদ হচ্ছে, “(হাবীব!) আপনি বলুন, আল্লাহর দয়ার দান ও রহমতকে কেন্দ্র করে তারা (আপনার উম্মতগণ) যেন আনন্দ উদযাপন করে; এটাই হবে তারা যা সঞ্চয় করবে তন্মধ্যে সর্বোত্তম”।
আর ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা উদযাপন যে, সত্যিই জীবনের সমুদয় সঞ্চয় (কর্মফল) এর মধ্যে সর্বোত্তম সে ব্যাখ্যাই আমাদের দিয়ে গেলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা আমীরুল মু’মিনীন হযরত  ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু  উক্তরূপে দু’ঈদের অনুভুতি প্রকাশের মাধ্যমে।
তাছাড়া যে পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা উদযাপন করলে আল্লাহর রহমতের সমূহ দরজা খুলে দেওয়া হয়, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা’র ‘শাফা‘আত’ অবধারিত হয়, ফিরিশতাকুল তজ্জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থী হয়, জান্নাতে ইসলামের প্রথম খলীফা হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর সহচর হওয়া যাবে, ঈমানের সাথে দুনিয়া থেকে প্রস্থান করতঃ বিনা হিসেবে জান্নাত লাভের সৌভাগ্য হবে ইত্যাদি সাফল্য সমৃদ্ধ হওয়া যায়; সে ঈদই তো সকল ঈদের সেরা ঈদ। তাই সকল মু’মিন-মুসলমানদের সমবেত কণ্ঠে ধ্বনিত হোক
“সকল ঈদের সেরা ঈদ- নবী আগমনের ঈদ,
সকল ঈদের সেরা ঈদ- ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *