নূরের চির বসন্ত সব বাগে আজ দোলেরে

নূরের চির বসন্ত সব বাগে আজ দোলেরে
🖋️মুক্তিধারা ডেস্ক
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
“আসসালাতু ওয়াসসালামু আলাইকা সৈয়্যদী ইয়া রাসূলাল্লাহ ওয়া আলা আলিকা ওয়া আসহাবিকা ওয়া আত্বায়িকা ইয়া হাবীবাল্লাহ”
দলিত-মথিত মনবতার কপালে রাজটীকা পড়ানোর জন্য, অত্যাচারিত-অবহেলিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, অন্যায়-অবিচার বিদূরীত করার নিমিত্তে এ ধরার বুকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়াসাল্লামা’র আগমন।
মাত্র তেষট্টি বছরের ইহলৌকিক জীবনে যিনি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়াসাল্লামা বর্বর একটা জাতিকে সভ্যতার চরম শিখরে উন্নিত করেন, যারা গোত্রীয় বিভাজনে বিভক্ত হয়ে যুগ-যুগান্তরে যুদ্ধে লেগে থাকত, তাদের ভ্রাতৃত্ব গোটা বিশ্বের জন্য উজ্জল দৃষ্টান্তে রূপান্তরিত হল যার সংস্পর্শে, যাকে পুরো বিশ্ববাসীর জন্য রহমত ও আদর্শ মডেল করে প্রেরণ করেন সৃষ্টিকুলের স্রষ্টা, যিনি আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ রহমত ও মহানুগ্রহ, তাঁর আগমনের স্মৃতিধন্য রবিউল আওয়াল বা প্রথম বসন্তের আগমনে আনন্দের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও শানদার মীলাদ মাহফিলের ধুম পড়ে যায় গোটা মুসলিম বিশ্বে। চতুর্দিক মুখরিত হয়ে ওঠে ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়াসাল্লামা স্লোগানের মধুর ধ্বনিতে। শান্তির প্রতীক ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ’ কলিমা খচিত পতাকা পতপত করে ওড়তে থাকে আকাশে-বাতাসে। আনন্দে মতোয়ারা নবী-প্রেমিকের দল ভেদাভেদ ভুলে সুরে-সুরে, ছন্দে-ছন্দে, তালে-তালে কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে গাইতে থাকে, 
‘ঈদে মীলাদুন্নবী আজ আমরা বড় খুশিরে
খুশি মত্তদের সুসংবাদ বারবী নূর এলরে।
নবীর আগমনে হল সব আঁধার আজ দূররে, 
ব্যাপিয়া আসমান-জমিন সর্বত্র নূর নূররে।
ঈদে মীলাদুন্নবী আজ আমরা কেন দোলবনা,
নূরের চির বসন্ত সব বাগে আজ দোলেরে’।
বসন্তের আগমনে প্রকৃতি যেমন সাজে নূতন সাজে, গানের পাখি যেমন গানে সাজে, তেমনি রবিউল আওয়াল শরীফের আগমনে নবী ও খোদার প্রেমে বিভোর হয়ে ওঠে মু’মিন-মুসলমান। তাদের অন্তর প্রেম-জোয়ারে ভরে ওঠে কানায় কানায়।
এ স্বর্গীয় মত্ততায় মত্ত আশেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়াসাল্লামা’র ধ্যানে নবী, মনে নবী, প্রাণে নবী, মুখে জপ নবী-নবী; তাই তাঁদের অন্তর হয়ে ওঠে ‘মকামে হাবীব’ বা নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়াসাল্লামা’র অবস্থানক্ষেত্র। সত্যিই তখন অন্তরে থাকেনা কোন রূপ হিংসা-বিদ্ধেষ, দুঃখ-গ্লানি ও লোভ-মোহ। এ পবিত্র অন্তর-পরিশুদ্ধ আত্মার অধিকারী মু’মিনরা ‘ইন্নামাল মু’মেনূনাল্লাযীনা ইযা যুকিরাল্লাহু ওয়াজিলাত কুলূবুহুম ওয়া ইযা তুলিয়াত আলায়হিম আয়াতুহু যাদাতহুম ঈমানাওঁ ওয়া আল রব্বিহিম ইয়াতাওয়াক্কালূন’ অর্থাৎ ‘পরিপূর্ণ মু’মিনতো তারাই যে, যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়, তখন তাদের অন্তর কম্পিত হয় এবং যখন তাদের নিকট তাঁর আয়াত সমূহ পাঠ করা হয়, তখন তাদের ঈমানে (জ্যোতি-শক্তি) বৃদ্ধি করে আর নিজেদের প্রতিপালকের ওপর নির্ভর করে’ সূরা আনফাল ২ নং আয়াতের মর্মালোক মূর্তপ্রতীকে পরিণত হয়।
ঈমান-তেজে দীপ্ত পরিপূর্ণ প্রভুনির্ভর এ জনস্রোত তাগুতী অপশক্তির মনে ভয় ধরিয়ে দেয়, কেঁপে ওঠে তাদের ভিত। তাই তারা ঈমান জ্যোতে প্রদীপ্ত হওয়ার, ঐক্যের সীসাঢালা প্রাচীর গড়ে তোলার উৎসাহ-উদ্দীপনায় ভরা মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়াসাল্লামা’র অনুষ্ঠানমালা হতে মানুষকে দূরে সরিয়ে রাখার নানাবিধ ষড়যন্ত্রে সর্বসামার্থ্যে আত্মনিয়োগ করে। শিরক-বিদ্‘আতের আওয়াজ তুলে, বিকল্প অনুষ্ঠানের আয়োজন ও চোরা-গোপ্তা হামলা করে।
বাতিলদের সব অপচেষ্টা আল্লাহ আকবর আর ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়াসাল্লামা ধ্বনির বজ্র আওয়াজে চাপা পড়ে যাক, নস্যাৎ হোক সকল ষড়যন্ত্র, খড়ের ন্যায় ভেসে যাক মিথ্যার বাঁধ আর বসুন্ধরা প্লাবিত হোক নবী-প্রেমের মহাপ্লাবনে; ১২ রবিউল আওয়ালের এ শুভদিনে প্রভুর দরবারে আমাদের এ ফরিয়াদ, এ আবেদন। রহমানুর রহীম আল্লাহ তা‘আলা রহমতুল্লিল আলামীনের উসিলায় কবুল করুন। আমিন।

Sharing is caring!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *