হাদীয়ে যমান (রাদ্বি.)’র অবয়বে দীপ্য বাবাজান ক্বিবলা মাইজভাণ্ডারী (রাদ্বি.)
[আমার পীর বাবা ভাণ্ডারী]
🖋️মুক্তিধারা ডেস্ক
১৯৬১ সন। রাউজানের ফইল্লাতলী হাট লোকে লোকারণ্য। আজ এখানে মাইজভাণ্ডারী ত্বরীক্বার পক্ষে-বিপক্ষে মুনাযারাঃ হবে। মাইজভাণ্ডারীগণের পক্ষে প্রধান মুনাযির হাদীয়ে যমান আল্লামা কাযী সৈয়্যদ হারূনুর রশীদ (রাদ্বি.) ও উভয় পক্ষের মানিত আমীন উপস্থিত৷ মুনাযারার নির্ধারিত সময় বা’দে আছর গেল, মাগরিবও গত হল, কিন্তু অপর পক্ষের মুনাযির এলেন না। মানিত আমীন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাইজভাণ্ডারীদের বিজয়ী ঘোষণা করলেন৷ উপস্থিত জনতার অনুরোধে বা’দে মাগরিব থেকে হাদীয়ে যমান (রাদ্বি.) তাক্বরীর শুরু করেন। একটানা ৫ ঘন্টা মাইজভাণ্ডারী ত্বরীক্বা-দর্শনের ওপর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও পুরজোশ তাক্বরীর পেশ করেন৷ একপর্যায়ে উজ্জীবিত শ্রোতাদের একটি দল বিরোধী পক্ষের মুনাযিরকে ধরে আনতে ছুটে গেলেন। তিনি হাদীয়ে যমান (রাদ্বি.)’র বক্তব্য শুনেছেন এবং মেনেও নিয়েছেন মর্মে লিখা পাঠিয়ে তাদের আশ্বস্ত করেন।
হাদীয়ে যমান (রাদ্বি)’র সেদিনের তাক্বরীরে অধিক উজ্জীবিতদের অন্যতম হলেন চিকদাইর নিবাসী মাওলানা আবূল মুহসিন শামসী। এ মুনাযারার পর থেকে আল্লামা শামসী হাদীয়ে যমান (রাদ্বি)’র ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। তিনি সময় সুযোগ মতো তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করে মাইজভাণ্ডারী ত্বরীক্বা-দর্শন সম্পর্কিত বিবিধ বিষয়ে মত বিনিময় করতে লাগলেন। এভাবে কিছুদিন গড়িয়ে গেলে এক পর্যায়ে তিনি মাইজভাণ্ডারী ত্বরীক্বায় বাই‘আত গ্রহণের আকাঙ্খা ব্যক্ত করে একজন উপযুক্ত পীরের সন্ধান জানতে চাইলেন। হাদীয়ে যমান তাঁকে ইস্তিখারাহ করতে বললেন। উপদেশ মতো ইস্তিখারাহ করে উপযুক্ত পীর হিসেবে স্বপ্নে হাদীয়ে যমানকেই দেখতে পান। পরন্তু সমবয়সী একজনকে পীর রূপে গ্রহণে তার মন সায় দিচ্ছিলনা। সুতরাং তিনি বারবার ইস্তিখারাহ করতে থাকলেন আর প্রতিবারই হাদীয়ে যমানকে দেখতে পেলেন।
মনের দ্বিধাগ্রস্ততা ফেটে ওঠতে না পেরে আল্লামা শামসী হাদীয়ে যমানকে ফরাক করে দেখার মনস্থ করলেন। এ প্রেক্ষিতে তিনি বললেন- হযরত গাউসুল আ’যম মাইজভাণ্ডারীকে আমি দেখিনি বিধায় দেখলেও চিনবনা, বাবাভাণ্ডারীকে ছোট বেলায় দেখেছি হিসেবে তাঁকে দেখলে আমি চিনতে পারব। অতএব আপনি বাবাভাণ্ডারীকে জাগ্রত অবস্থায় দেখাতে পারলে আপনার হাতে বাই‘আত নিতে আমার মনে কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকবে না।
এ শর্তে হাদীয়ে যমান চোখ মোবারক একটু বন্ধ করলেন আর খোললেন এবং ঈষৎ গরম সুরে বললেন- ঠিক আছে, আমার সাথে মাইজভাণ্ডার শরীফ চল।
উভয়ে (হাদীয়ে যমান ও আল্লামা শামসী) একসাথে মাইজভাণ্ডার শরীফ পানে যাত্রা দিলেন। উপস্থিত হয়ে প্রথমে হযরত গাউসুল আ’যম শাহসূফী সৈয়্যদ আহমদুল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (রাদ্বি.)’র রওযা শরীফে তাহিয়্যাহ আরয পূর্বক আবেদন-নিবেদন পেশ করলেন। অতঃপর বাবাভাণ্ডারী (রাদ্বি.)’র রওযা শরীফে প্রবেশ কালে শামসী সাহেব আগুনের হল্কার মতো প্রচণ্ড গরম অনুভব করলেন। যতো অগ্রসর হচ্ছেন গরমের তীব্রতা তত বাড়তে থাকল। এক পর্যায়ে চোখে ঘোর দেখে পড়ে যাবার উপক্রম হলে হাদীয়ে যামানের হাত ধরে বসে পড়লেন। এমতাবস্থায় চোখের সামনে আরেক দৃশ্য ভেসে উঠল। তিনি দেখতে পেলেন বাবাভাণ্ডারীর হাত ধরেই তিনি বসে আছেন এবং বাবাভাণ্ডারী বলতে লাগলেন- ‘তোমাকে কার হাতে বাই‘আত নিতে বলা হচ্ছে, তা আমার এ হাত ধরা অবস্থায় বাস্তবে দেখে নাও।’তখন শামসী সাহেব বাস্তবে দেখতে পাচ্ছেন যে, তিনি হাদীয়ে যমানের হাত ধরেই বসে আছেন। অতঃপর হাদীয়ে যমান গাউসুল ওয়াক্ত আল্লামা শাহসূফী সৈয়্যদ হারূনুর রশীদ (রাদ্বি.)’র দস্ত মোবারকে শামসী সাহেব বাই‘আত গ্রহণ করেন।
বাহ্যিক শান-শওকতহীন সাদাসিধে বেশের একজন পীরে ত্বরীক্বত যে, শামসী সাহেবের মতো দক্ষ একজন ওস্তাযুল্ ওলামার পীর হন, তা জেনে অনেকেরই কৌতুহল বশতঃ জিজ্ঞাসার উত্তরে তিনি অকপটে বলতেন- আমার পীরকে তোমরা সাধারণ বেশভূষার দেখলেও তিনি আধ্যাত্মিকভাবে একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। একদিন উক্তরূপ জিজ্ঞাসার এক পর্যায়ে শামসী সাহেব গরম সুরে বলেন- আমার পীর কে তোমরা আদৌ জাননা; ‘আমার পীর বাবা ভাণ্ডারী’!
আল্লামা শামসীর মতো ওস্তাযুল্ ওলামার উক্তি ‘আমার পীর বাবা ভাণ্ডারী’ এর মাঝেই হাদীয়ে যমান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর আধ্যাত্মিক কামালিয়তের ধারণা লাভে ত্বরীক্বত চর্চাকারী মাত্রই সমর্থ হবেন।
নিম্নে হাদীয়ে যমান (রাদ্বি.) কে নিবেদন করে শামসী (রহ.) লিখিত ভক্তি-স্তুতি মূলক গীতির কিয়দাংশ উপস্থাপিত হল-
اٖک نظر ہو گیا
پیر کامل شاہ واصل حضرت ھارون الرشید،
ہادئ راہ طریقت مصدر آب وتاب ہے-
مثل پروانہ ہوئے ہم آۓ شہ شمعے مثال،
ایک جہلک کرنا عطا ہو جاں بلب بیتاب ہے-
ہو بشیر اور نذیر اور شاہ یزدانی ھما،
کیف مد الظلً تفسیر ہدایت یاب ہے-
جو ہوا خادم تمہارا ہے فنا فی اللہ مقام،
ان کے صدقے کر کرم ہم حاضر و بوًاب ہے-
بے وسیلوں بے سہاروں کا ہوۓ مدً نظر،
مایۂ نافہ ہو ہمارا فاتح الابواب ہے-
غوث بھنڈاری صفت ہو سبکے نعرہ المدد
دافع ظلمات ہو اب نور کا آفتاب ہے-
شمسی مضطر کہ حاضر درکہت صد آرزو،
اک نظر ہو گیا وہ نعمت نہاب ہے-
এক নযর হূ গয়া
পীরে কামিল শাহে ওয়াসিল হযরতে হারূনুর রশীদ,
হাদীয়ে রাহে ত্বরীক্বত মুসদারে আবো তাব হ্যায়।
মিছলে পরওয়ানাঃ হূয়ে হাম আয়ে শাহ্ শময়ে মিছাল ,
এক ঝলক করনা আত্বা হূ জাঁ ব-লব্ বেতাব হ্যায়।
হূ বশীর আওর নযীর আওর শাহে ইয়াযদানী হুমা,
কায়ফা মাদ্দায্যিল্লা তফসীরে হিদায়ত ইয়াব হ্যায়।
যূ হূয়া খাদিম তোমহারা হ্যায় ফানা ফীল্লাহ মক্বাম,
উনকে ছদক্বে কর্ করম হাম হাযিরো বাওওয়াব হ্যায়।
বে উসীলোঁ বে সাহারোঁ কা হূয়ে মদ্দে নযর,
মায়ায়ে নাফাঃ হূ হামারা ফাতিহুল আবওয়াব হ্যায়।
গাউসে ভাণ্ডারী সিফাত হূ সবকে না’রাঃ আলমদদ,
দাফি’ই যুলুমাত হূ আব নূর কা আফতাব হ্যায়।
শমসী মুদ্ব্তার কেঃ হাযিরে দরগাহত ছদ আরযূ,
এক নযর হূ গয়া ওঃ নি’মতে নিহাব হ্যায়।