হারুয়ালছড়ভী বাবাজানের কারামাত

হারুয়ালছড়ভী বাবাজানের কারামাত

বর্ণনাকারী: মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম
মানিকপুর, কাঞ্চন নগর, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম।

এক

এক সময়ে আমি হারুয়ালছড়ি দরবার শরীফের চাষাবাদের কাজ দেখাশুনা করছিলাম। এমতাবস্থায় সে কাজ অসমাপ্ত রেখে বাবাজানের অনুমতি নিয়ে নির্দিষ্ট কয়দিনের জন্য নিজ বাড়ীতে আসি। নির্দিষ্ট দিনে ফিরে যেতে পারিনি। পরদিন দুপুরে বাড়ীর সামনে বসে আছি। এমতাবস্থায় হারুয়ালছড়ভী বাবাজান হাদীয়ে যমান (রাদ্বি.) সেখানে উপস্থিত হয়ে আমাকে বললেন, ‘এখানে রান্না করা ভাতগুলি আমি খাই আর তুমি হারুয়ালছড়িতে গিয়ে খাও।’ এ বলে তিনি আমার বাসগৃহে প্রবেশ করলেন। আমি তখন হতভম্বের মত তাকিয়েই ছিলাম! অতঃপর আমার সে অবস্থা কেটে গেলে ঘরে ঢুকে খোঁজে দেখি, বাবাজান সেখানে কোথাও নেই! তখন আমার বুঝতে আর বাকী রইলনা, এটা যে অবিলম্বে হারুয়ালছড়ি দরবার শরীফে উপস্থিত হওয়ার এক অলৌকিক আদেশ। অতএব কাল বিলম্ব না করে হারুয়ালছড়ি দরবার শরীফ অভিমুখে যাত্রা করি। 

দুই

একবার আমি বাবাজানের ঘরের ছাউনির জন্য ছন কিনতে তৎকালে হরিণাদিঘী নিবাসী অতঃপর পাইন্দং নিবাসী আমার পীরভাই আব্দুর রহমানকে টাকা দিয়ে নিজ বাড়ী কাঞ্চননগরে চলে যাই। তারপর বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হয়ে বৈশাখ মাস শেষ হতে চলেছে। তখন আমি নিজ বাড়ীতে চাষাবাদের কাজে ব্যস্ত ছিলাম। এমন সময় একদিন নিজ ঘরে বসা অবস্থায় খোলা দরজা দিয়ে হঠাৎ দেখতে পাই, আমার বাড়ীস্থ উঠানের পূর্বপাশে বাবাজান এসে দাঁড়িয়েছেন এবং সেখান থেকে এক কদমেই ঘরের সামনে উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘তোমার যোগাড় তুমি হও।’ 
এ কথা বলা শেষ করা মাত্র ফিরতি এক কদম দিয়ে কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেলেন। এদিকে ‘তোমার যোগাড় তুমি হও’ কথার মর্ম বুঝে উঠতে না পেরে আমি মহাভাবনায় ডুবে আছি। তবুও প্রয়োজনের তাগিদে পরদিন নিজ জমিতে হাল নিয়ে যাই। সেখানে সকাল ১১টার দিকে হরিণাদিঘী নিবাসী মুহাম্মদ খলিফা গিয়ে উপস্থিত হয়ে বলতে যাচ্ছিল যে, ‘ছন এখনো কেনা হয়নি, আমাকে …।’ তাঁর কথায় বাধা দিয়ে আমি বললাম, ‘আর বলতে হবে না; আমি ব্যাপার বুঝতে পেরেছি।’ অতএব তৎক্ষণাৎ ছন কেনায় তৎপর হয়ে বিকেলরাতের মধ্যেই ছনসহ হারুয়ালছড়ি দরবার শরীফে উপস্থিত হই। উল্লেখ্য যে, সেদিন মুহাম্মদ খলীফার উক্তরূপ সংবাদ পৌঁছানোও বাবাজানের নির্দেশেই সংঘটিত হয়েছিল।

তিন

একদা বাবাজানের সাথে মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফ গেলাম। সেখানে কর্তব্যকাজ শেষ করে আছর পূর্বক্ষণে বাবাজানসহ রওনা দিয়ে পায়ে হেঁটে কাঞ্চনপুর আসলাম। অতঃপর কাঞ্চনপুরীর (রাদ্বি.) রওযা শরীফ যেয়ারত শেষে দেখতে পাই যে, তখনো আছরপূর্ব সময় বর্তমান রয়েছে! অথচ এ পথ অতিক্রম করতেই প্রায় চার ঘন্টা সময় লাগার কথা!

চার

অগোচরে শত্রুর দেয়া আগুনে হারুয়ালছড়ি দরবার শরীফে যে বছর গোয়াল ও খড়ের ঢিবি (কুইজ্জা) আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সে বছর বাবাজানের বাসগৃহের ছাউনি বদলাতে গিয়ে দেখতে পাই, ভিন্ন ভিন্ন ছয়টি জায়গায় অগ্নি সংযোগের স্পষ্ট নমুনা রয়েছে! এতে বুঝতে বাকী রইল না যে, শত্রু কতৃক অনেক বার অগ্নি সংযোগ সত্তেও বাবাজানের পর্ণকুটির মোবারক জ্বালাতে সক্ষম হয়নি!

দয়ার সাগর মুরশিদ আমার দয়া কর আমারে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *