গাউসে পাক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র প্রতি ভক্তিতে দুইকূলে আগুন হতে মুক্তি

[কারামাতে গাউসুল আ’যম মাইজভাণ্ডারী ‍রাদ্বিয়ানহুল্লাহুল বারী]
(আইনায়ে বারী থেকে ভাষান্তরিত)
ভাষান্তরে: বোরহান উদ্দীন মুহাম্মদ শফিউল বশর
গাউসুল আ’যম ‘রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র দরবারের অনুরক্ত এক হিন্দু বারইয়ের লাশ মরণের পর অগ্নিদাহ না হবার বর্ণনা: 
আমি লিখক (আইনায়ে বারী প্রণেতা) পূর্ণ তত্ব-তালাশের পর নিশ্চিত হলাম যে, কাঞ্চনপুর নিবাসী এক বারই মনোপ্রাণে হযরত গাউসুল্লহিল আকবর ‘রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর’ দরবারের প্রতি অত্যধিক বিশ্বাসী ছিল। জীবদ্দশায় প্রায়শঃ দরবারে গাউসিয়ায় হাদিয়া-তুহফা পেশ করতো। সর্বজ্ঞাতা ও সর্বশক্তিমানের নির্দেশ মতে হঠাৎ তার মৃত্যুক্ষণ নিকটবর্তী হল এবং মৃত্যুদূত আল্লাহর রাজ দরবারের রাজকীয় পয়গাম পৌঁছাল। মৃত্যুরোগ শুরু হল; কিছুদিন পর যখন একদা ‘সকারাত’ এর অবস্থা শুরু হল।
“মৃত্যু থেকে পায়নিকো কেউ রক্ষা, মৃত্যুপাঞ্জা হতে বাঁচার নেইকো উপায়”
তখন স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে তার মুখ থেকে কলামায়ে শাহাদত ও তৌহিদ বের হয়ে গেল। তার আত্মীয়-স্বজনগণ রাম-রাম বলে তাকে ঘর থেকে বের করে দিল। তারা চুপ! চুপ! করে এ ঘটনা গোপন করল; কিন্তু সে আদি সৌভাগ্যবান ঈমানের বাণী কভুই ভুলছেনা। সে এ পবিত্র  কলিমা শরীফ উচ্চারণ করতে করতে প্রভুর সন্নিধানে জীবন সোপর্দ করল।
পংক্তি
“রোজে আযল প্রভু দিয়েছেন যারে সা’আদত, 
সেকি কভু ভুলিবে কালিমায়ে শাহাদত? 
খোদা তা’আলার খাস দান যে সা’আদত, 
বাহুবলে লভিবেনা হেন মহান দৌলত।”
তার আত্মীয়-স্বজনরা অকর্মা কাফেরদের রীতি অনুযায়ী তার লাশ অগ্নিদাহ করার জন্য চিতায় নিয়ে গেল। জ্বলবার প্রস্তুতি নিয়ে লাকড়ীর উপর রেখে প্রয়োজনীয় তৈল ও ঘৃত দিয়ে আগুন লাগিয়ে দিল। ঐ দৃশ্যত হিন্দুরূপী বারই, তনোমনে মুসলমান যেহেতু জগতের আশ্রয়স্থল দরবারে গাউসিয়ার দাসত্ব গ্রহণকারী ছিল সেহেতু আগুন তাঁর অন্যান্য অঙ্গের ত্বক স্পর্শ করলেও বক্ষ মোটেই জ্বলেনি। কাফিরগণ এ অবস্থা দেখে ঘাবড়ে গেল এবং তৈল ও ঘৃত আরো বাড়িয়ে দিল। এরপরও  قلنا يانار كوني برداو سلاما علي ابرايهم “আমি বললাম, হে আগুন! শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও ইব্রাহীমের উপর।” আদেশ মর্মে আগুন কোন প্রকার ক্রিয়া করেনি। 
পংক্তি
পদচিহ্ন হল যে গাউসে মাইজভাণ্ডারীর, 
দু কূলে আছে কি তার ভয় জাহান্নামের?
আস্তানায় তার ললাট ঘষে যে সুবহ-শাম, 
নিশ্চয় সেই প্রিয় হবে আল্লাহর রাজ দরবারের।
অকর্মা কাফিরগণ যখন চেষ্টায় ব্যর্থ হল, তখন তার লাশটি আগুন থেকে বের করে হাঙ্গর-কুমির ও মৎসের খাদ্য হবে এ বাসনায় ধুরং নদীতে ফেলে দিল। সুবহানাল্লাহ! যে ব্যক্তি আসমান উপর কদমস্থাপনকারী কুত্ববে আফখম গাউসুল্লাহিল আ’যম মাইজভাণ্ডারীর দয়ার দৃষ্টিতে গৃহীত; আগুনের কিবা সাধ্য তাকে জ্বলাবে, আর পানির কি সামর্থ হজম করবে? 
লাশটি ভাসতে ভাসতে কোন এক যায়গায় নদীর পার্শ্বে আটকে রইল। কেউ কেউ বলেন, ঐ স্থানের লোকেরা গাউসুল আ’যমের দরবার কর্তৃক স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে লাশটির গোসল, কাফন, জায়নাযার নামায ও দাফনের ব্যবস্থা করল। কেউ কেউ বলেন, পুলিশ এসে লাশটি তুলে নিয়ে দাফন করেন।
দরবারে গাউসিয়ার ভক্ত ও জামালে আহমদীর অনুরক্তদের জন্য শুভসংবাদ যে, ঐ বারই শুধুমাত্র গাউসুল আ’যমের মহান শানের প্রতি ভাল ধারণা ও সরল বিশ্বাসের কারণে চিরস্থায়ী দৌলত ঈমান লাভে সৌভাগ্য মণ্ডিত এবং স্থায়ী নি’য়ামত মাগফিরাত ও নিরাপত্তার জন্য মনোনীত হল। পূর্ণ নিশ্চিত যে, তাঁর প্রকৃত গোলাম এবং সুদৃঢ় প্রেমিকগণ যারা মনোপ্রাণে পতঙ্গের ন্যায় তাঁর কামালাতপূর্ণ সৌন্দর্যে জীবন উৎসর্গকারী তাদেরকে অবশ্যই আপন দৌলতে দিদার ও মিলনের নি’য়ামত দানে উভয় জগতে সম্মানিত ও সৌভাগ্য মণ্ডিত করবেন এবং দ্বীনি ও দুনিয়াবী সমস্যাবলী ও গুপ্ত-ব্যক্ত বালা মুসিবতে পরিত্রাণ দিবেন।
গাউসুল আ’যম কৃপা দৃষ্টি বারেক করে যারে, 
তাকে সদা খোদা রাসূল পিয়ার যে করে।
গাউসুল আ’যম দৃষ্টির ছায়া দেন যার পরে, 
আকাশের তারকা তুল্য নূরের উদয়স্থল করে।
গাউসে পাকের দরবারে বন্দী হয় যে অন্তরে, 
হলেও কন্টক বাগিচার সুগন্ধিত পুষ্প করে।
হলে কেউ ময়লাবর্জনা হযরতের দরবারের, 
তাকে তলদেশে ঝর্ণাবাহী পুষ্পোদ্যান করে।
তাঁর প্রেম সাগরে ডুবন্ত হয় যে দু’জগতে, 
হোক সে বিন্দু তাকে মুক্তারাজ যে করে।
সত্য মনে হলে অণু সেতো মণি হবে, 
যদিচ হয় পাথর মুক্তাবর্ষী বাদল করে।
দরবারের গোলাম যে নিশ্চয় বাদশাহ সে, 
যে অণু হবে তাকে নূরের রুশ্মি বিচ্ছুরক করে।
দিল ঈমানে যে মাথা রাখে তাঁর দ্বারে, 
দয়ার দৃষ্টিতে তাকে তিনি বাদশাহ করে।
দু’জগতে হলে কেউ মকবূল রূপ পদচিহ্ন, 
কৃপা করে দিদার দৌলত দান যে করে।

Sharing is caring!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *