সৈয়্যিদুশ শুহাদা-ই সৈয়্যিদুনা ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু  [পর্ব – এক]

সৈয়্যিদুশ শুহাদা-ই সৈয়্যিদুনা ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু
 [পর্ব – এক]
🖊আল্লামা বোরহান উদ্দিন মুহাম্মদ শফিউল বশর    
 
شاه است حسین پادشاه است حسین
دین است حسین دیں پناه است حسین
سر داد نداد دست در دست یزید
حقا کہ بنائے لا الہ است حسین
-سلطان الهند خواجه معين الدين
নবী করীম রাউফুর রাহীম (দ.)’র পবিত্র শরীর মুবারকের টুকরো: রাসূলুল্লাহ (দ.)’র চাচীজান উম্মুল ফদ্বল লুবাবাহ (রা.) একদা প্রত্যুষে রাসূলুল্লাহ (দ.)’র খিদমতে উপস্থিত হয়ে আবেদন জানালেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আজ রাত আমি ভয়ানক এক স্বপ্ন দেখেছি! হুযূর (দ.) জিজ্ঞাসা করলেন, তা কি? তিনি বললেন, হুযূর! তা বড় ভয়ানক! নবী করীম (দ.) ফের জিজ্ঞাসা করলেন, তা কি? তিনি বললেন, আমি দেখেছি যে, আপনার শরীর মুবারক হতে এক টুকরো কেটে আমার কোলে রাখা হয়েছে! রাসূলে করীম (দ.) বললেন, আপনি খুব ভাল স্বপ্ন দেখেছেন। ইনশা-য়াল্লাহ ফাত্বিমাহর পুত্র সন্তান হবে এবং তাঁকে আপনার কোলে দেওয়া হবে। উম্মুল ফদ্বল বলেন, অতঃপর ফাত্বিমাহর ঘরে হুসাইনের জন্ম হলে তাঁকে আমার কোলে দেওয়া হয়; যেমনটি রাসূলুল্লাহ (দ.) বলেছিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৮৯ পৃ.)
উম্মুল ফদ্বলের স্বপ্নের বাস্তবতা ৫ শা’বান ৪ হিজরী মুদীনাহ মুনাওয়ারাহয় প্রকাশিত হয়। ওই দিন হযরত সৈয়্যিদুনা ইমাম হুসাইন (রা.)’র শুভজন্ম হয়; যিনি অদৃশ্য জগতে রাসূলুল্লাহ (দ.)’র পবিত্র শরীর মুবারকের একটি টুকরো!
নবূয়তের পূর্ণশশীর কোলে ইমামতের নবচন্দ্র: হুযূর সৈয়্যিদে আলম (দ.) ইমাম হুসাইন (রা.)’র শুভ জন্মের সংবাদ পেয়ে তৎক্ষণাৎ ফাত্বিমাহর গৃহে গমন করেন। গিয়েই বললেন, আমার কলিজার টুকরোয় আমায় দেখাও! আসামা বিনতে উমাইস একটি সাদা কাপড় জড়িয়ে সদ্যজাত হুসাইনকে নবী (দ.)’র দয়ার কোলে পেশ করলেন। তিনি (দ.) তাঁর ডান কানে আযান, বাম কানে ইক্বামত দিয়ে তাঁর মুখে আপন থুথু মুবারক ঢেলে দেন এবং দু‘আ করলেন। অতঃপর আল্লাহর নির্দেশে ‘হুসাইন’ নাম রাখলেন। সপ্তম দিবসে মাথা মুণ্ডিয়ে চুলের সমপরিমাণ রৌপ্য দানের নির্দেশ দেন। তাঁর আক্বীকাহয় দু’টি দুম্বা যবেহ করা হয় বর্ণনান্তরে একটি। (তারীখে কারবালা ১৬২-১৬৩ পৃ.)
আলোময় অবয়ব: তিনি (রা.) অত্যন্ত সুন্দর সুগঠন ছিলেন। হযরত ফাত্বিমাহ ও আনাস (রা.)’র বর্ণনা মতে জানা যায় যে, বক্ষ হতে চরণ পর্যন্ত নবী করীম (দ.)’র সাদৃশ ছিলেন। আল্লামাহ জামীর বর্ণনা মতে, তিনি (রাদ্বি.) যখন আঁধারে বসতেন, তাঁর ললাট ও দু’গণ্ডের আলোতে আশ-পাশ আলোকিত হয়ে যেত।
অমৃত সুধা পান: হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (দ.)’র সাথে সফরে ছিলাম। এক যায়গায় ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন (রা.)’র  কান্নার শব্দ শুনা গেলে নবী করীম (দ.) ফাত্বিমাহ (রা.)কে কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। সৈয়্যিদাহ (রা.) বললেন, পিপাসায় কাঁদছে। রাসূলুল্লাহ (দ.) বড় আওয়াজে জিজ্ঞাসা করলেন, কারো কাছে পানি আছে? কিন্তু কারো কাছে এক বিন্দু পানিও ছিলনা। তিনি (দ.) ফাত্বিমাহকে বললেন, এক শাহযাদাকে আমার কাছে দাও। তিনি (রা.) পর্দার নীচ দিয়ে দিলেন। তিনি (দ.) তাঁকে বক্ষে জড়িয়ে নিলেন। কান্না কিন্তু থামছেনা, নিরন্তর কেঁদে চলছেন। নবী করীম (দ.) আপন জিহ্বা মুবারক তাঁর মুখে দিয়ে দিলেন। তিনি (রা.) চুষতে রইলেন, যাবৎনা শান্ত হয়ে গেলেন। তাঁর কান্নাকাটি বন্ধ হয়ে গেল। পরন্তু অপর শাহযাদাহ তখনও কাঁদছেন। তিনি (দ.) বললেন, তাঁকেও আমার কাছে দিয়ে দাও। তিনি (রা.) দিয়ে দিলেন। তিনি (দ.) কোলে নিয়ে তাঁর মুখেও আপন জিহ্বা মুবারক দিলেন। তিনি (রা.) চুষতে চুষতে শান্ত-সুস্থির হয়ে গেলেন। অতঃপর উভয় শাহাযাদার কান্নার আওয়াজ আর শুনা যায়নি। (খাসায়িসুল কুবরা ২য় খণ্ড ৭১ পৃ.)।
ফিদয়াঃ বা উৎসর্গ: একদা প্রিয় রাসূল (দ.) আপন দৌহিত্র হুসাইনকে ডান কোলে এবং পুত্র ইব্রাহীমকে বাম কোলে নিয়ে বসেছিলেন। এমতাবস্থায় জিব্রাইল এসে বললেন, আল্লাহ তা‘আলা এ দু’জনকে একসাথে আপনার কাছে থাকতে দিবেননা। যে কোন একজনকে ডেকে নিবেন। আপনি যাকে ইচ্ছা বেছে নিন। নবী করীম (দ.) বললেন, হুসাইন ইন্তিকাল করলে তাঁর শোকে ফাত্বিমাহ, আলী এবং আমার দুঃখ হবে। পরন্তু ইব্রাহীমের ইন্তিকালে সর্বাধিক দুঃখ আমার ওপরই আপতিত হবে। সুতরাং আমি আমার কষ্টকেই বেছে নিলাম। অতএব, তিন দিন পর হযরত ইব্রাহীম (রা.) ইন্তিকাল করেন। অতঃপর হুসাইন (রা.) যখনই রাসূলুল্লাহ (দ.)’র খিদমতে আসতেন, তিনি (দ.) কপাল চুমে স্বাগত জানিয়ে বলতেন, ‘মারহাবা’ হে হুসাইন! আমি তোমার ওপর আপন সন্তান উৎসর্গ করে দিয়েছি’। (শাওয়াহিদুন নবূয়ত ৩০৪ পৃষ্ঠা)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *