গাউসুল্লাহিল আ’যম মাইজভাণ্ডারী রাদ্বিয়ানহুল্লাহুল বারীর মি’রাজ

“মাহবূবুল্লাহিল‌ মু‘আযযম,ফরদুল্লাহিল আকরম, ক্বুতবুল্লাহিল আফখম গাউসুল্লাহিল আ’যম মাইজভাণ্ডারী রাদ্বিয়ানহুল্লাহুল বারীর মি’রাজ।”

✒আল্লামা বোরহান উদ্দিন মুহাম্মদ শফিউল বশর

আসসালাতু ওয়াসসালামু আলায়কা সৈয়্যিদী ইয়া রসূলাল্লাহ ওয়া আলা আলিকা ওয়া আসহাবিকা ওয়া আহবাবিকা খাসসাতান আলা মাহবূবিকা গাউসিল আ’যম ইয়া হাবীবাল্লাহ।

মারহাবা মারহাবা খোদা কা পিয়ারে গাওছুল আ’যম ভাণ্ডারী;
সংসার প্রাণ পাঁও কা ছদকাহ কেইছি ছুরত তোমহারী’।
(গুলশানে উশশাক প্রথম সর্গ ৪৩ নম্বর গযল।)

“গাউসুল আ’যম মাইজভাণ্ডারী (রা.)’র বিসাল শরীফের পূর্বমাস শাওয়ালে মান্যবর জনাব মাওলানা সৈয়্যদ আমীনুল হক্ব পিতা জনাব মাওলানা সৈয়্যদ আব্দুল করীম সাহেব ফরহাদাবাদী (রা.) কে সত্যস্বপ্নে কেউ বললেন, ‘আগামি চাঁদের সাতাশ তারিখ মি’রাজ-ই মুহাম্মদী (দ.)।’ উক্ত মাওলানা সাহেব শাওয়ালে এ সংবাদ পান আর যিলক্বদের সাতাশ তারিখ বিসালে বাকামাল শরীফ সংঘটিত হয়। এ রহস্যময় স্বপ্নের গূঢ়তত্ত্ব অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন জ্ঞানীদের কাছে সুস্পষ্ট ও দলীলবলিষ্ট; অন্যথায় হৃদয়দৃষ্টিহীন অন্ধের জন্য পাথরও কি, দর্পণও কি?

সুবহানাল্লাহ! এখানে মুহাম্মদ (দ.) কোন সম্মানিত সত্তা এবং কোন ইপ্সিত প্রেমাষ্পদের মি’রাজ হচ্ছে! এখানে অভিন্নতা কোন প্রশস্তিতে বিশেষিত হয়েছে! কোন মহান হাস্তি ইরফানগৃহে অভীষ্ট ধনভাণ্ডারে আবাদ করেছেন! ঘরে কে? এক ইঙ্গিতেই যথেষ্ট।

‘যে আহমদ তা মুহাম্মদ ফরক্বে নামাস্ত;
আযীঁ মিসরা‘আহ মযাক্বে জাঁ তামামাস্ত।’

অর্থাৎ: ‘আহমদ থেকে মুহাম্মদ শুধু নামের প্রভেদ;
এ এক পঙক্তিতে লব্ধ পরিপূর্ণ মনোস্বাদ”।
(আঈনা-ই বারী।)

২৭ যিলক্বদ ১৩২৩ হিজরী মঙ্গলবার রাত দেড়টায় গাউসুল আ’যম মাইজভাণ্ডারী (রা.)’র বিসালে বাকামাল শরীফ সংঘটিত হয়। অদ্য ২৬ যিলক্বদ ১৪৪২ হিজরী ৮ জুলাই বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একশত উনিশতম বিসাল বার্ষিকীর শুভরাত।

গাউসুল আ’যম মাইজভাণ্ডারী(রা.)’র প্রভু-মিলন দাওয়াত কবুল প্রসঙ্গে বাহরুল উলূম আল্লামাহ আবূল বরাকাত মাওলানা সৈয়্যদ আব্দুল গণি কাঞ্চনপূরী(রা.)’র অভিব্যাক্তি,

سبحانه بجلاله ، يهدي سبيل جماله ’

فإليه يجذب عاشقه ، فيذيق ذوق وصاله –

من كان غوث خلقه ، من كان خلف رسوله ، 

بكت السماء والجنة ، للنيل فضل نواله –

فدعاه ربه شائقا ، معراجه كرسوله ،

‘فأجابه له سرعة ، حمدا علىٰ أفضاله –

‘সুবহানাহু বিজালালিহী, য়াহদী সবীলা জমালিহী,
ফাইলায়হি য়াজযিবু আশিক্বাহু, ফায়াযীক্বু যওক্বা বিসালিহী।
মন কানা গাউসা খল্কিহী, মন কানা খলফা রসূলিহী,
বকাতিস সামাউ ওয়াল জন্নাহ, লিননায়লি ফদ্বলি নাওয়ালিহী।
ফাদা‘আহু রব্বুহু শায়িক্বা, মি’রাজুহু কা রসূলিহী,
ফাআজাবাহু লাহু সুরআতান, হামদান আলা আফদ্বালিহী।’

অর্থাৎ- পবিত্রতা তাঁর, যিনি স্বমহিমায় আপন সৌন্দর্যের পথ দেখান, অতএব আপন আশিক্বকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে মিলন-সুধা আস্বাদন করান। যিনি গাউস তাঁর সৃষ্টির, যিনি প্রতিনিধি তাঁর রসূলের, তাঁর বিসালে নভোমণ্ডল ও জন্নাত কাঁদে, তাঁর দয়ার দান পাওয়ার আশায়। সুতরাং তাঁর প্রভু অগ্রহান্বিত হয়ে ডাকলেন তাঁরে, মি’রাজ তাঁর যেমন তাঁর (আল্লাহর) রসূল তরে, অতএব তিনি শীঘ্রই কবূল করলেন তাঁর (প্রভুর) তরে, তাঁর (খোদার) দয়ানুগ্রহের প্রশংসামুখর হয়ে।’ (আঈনা-ই বারী।)

সর্বজনবিদিত যে, যে কোন অলিয়ুল্লাহর জন্য শানে মাহবূবীয়্যত সাব্যস্ত, এমনকি অলি শব্দের আভিধানিক অর্থেও তা প্রতিভাত। আল্লাহ তা‘আলার প্রিয় হাবীব (দ.) ’র অনুগত সত্তা মাত্রই আল্লাহর মাহবূবীয়্যত বা প্রেমাষ্পদত্বে বরিত। পাক কালামে ইরশাদ হচ্ছে, ‘ক্বুল ইন কুন্তুম তুহিব্বুনাল্লাহা ফাত্তাবিঊনী য়ুহবিবকুমুল্লা।’

নফল ইবাদতের মাধ্যমে সর্বদা আল্লাহর নৈকট্যগামী বান্দা মাত্রই এক পর্যায়ে আল্লাহর মাহবূবীয়্যতে আলিঙ্গিত হন। হাদীসে কুদসীর ঘোষণা, ‘ওয়া মায়াযালু আব্দী য়াতাকাররাবু ইলায়্যা বিন নাওয়াফিলি হাত্তা আহবাবতুহু।’
উল্লেখ্য যে, অলিয়ুল্লাহদের প্রেমাষ্পত্বের পর্যায়ে তারতম্য কুরআন-সুন্নাহ স্বীকৃত। গাউসুল আ’যম মাইজভাণ্ডারী (রা.)’র শানে মাহবূবীয়্যতের পর্যায় উপলব্ধিতে আঈনা-ই বারী শরীফের উদ্ধৃতিতে উদ্ধৃত আল্লামাহ ফরহাদাবাদী (রা.)’র প্রাগুক্ত শুভস্বপ্নই যথেষ্ট। এতদসত্ত্বেও যাদের সংশয়ী মন দ্বিধা-দ্বন্ধে রয়েছে, যাদের ধোঁয়াশাচ্ছন্ন নয়ন সত্য দর্শনে সন্দেহে পতিত, তাদের সে ব্যামোর প্রতিকারে আরো কিছু উদ্ধৃতি উপস্থাপিত হল।

[এক]

 ‘দিল তড়প্তা হায় হামারা আয় হাবীবে কিবরিয়া;
গাওছুল আ’যম মাইজভাণ্ডারী সরগোরোহে আওলীয়া’।
[আরিফ-ই কামিল আল্লামাহ সৈয়্যদ আব্দুল হাদী (রা.)।]

[দুই]

‘তাঁহার ছবি জু কি হায় সাধন উয়ে পায়া ইছমে আ’যমকো বেশক,
হুয়া হায় মকবূল হযরতে হক্ব কা গাওছুল আ’যম মাহবূবে আল্লাহ।’
[বাহরুল উলুম আল্লামাহ সৈয়্যদ আব্দুল গণি কাঞ্চনপূরী (রা.)।]

[তিন]

হাস্ত যাতে পাকে ঊ মাহবূবে রব্বিল আলামীন,
নামে পাকে ঊস্ত তসবীহে কুলো হিরযে হাসীন।
ঊস্ত মা’শুক্বে খোদাও ইশক্বি হক্ব বাযাতে ঊ,
খান্দ জানশ রা যে বাহরে অছল বর আর্শে বরীঁ।’
[আঈনা-ই বারী।]

[চার]

বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, আল্লামাহ সৈয়্যদ আমীনুল হক্ব ফরহাদাবাদী (রা.) বিরচিত তুহফাতুল আখইয়ার ফী দফ-‘ই শররাতিল আশরার গ্রন্থখানা গাউসুল আ’যম মাইজভাণ্ডারী (রা.)’র খেদমতে গ্রন্থকারের তুহফাহ বা ভক্তি-সওগাত। এ পুস্তকের কিয়দাংশ তাঁর সমীপে পঠিত। তিনি (রা.) কর্তৃক স্বাক্ষরিত-সত্যায়িত ও অনুমোদিত। এ গ্রন্থের ভূমিকায় মহামান্য গ্রন্থকার লিখেছেন,‘ফালহামদু লিল্লাহি আলা আন্না গাউসাহুল আ’যম মাহবূবাহুল মু‘আযযম—–।’

স্বয়ং গ্রন্থপ্রণেতার পায়ার ছন্দে অনুবাদ:

‘হাজার হাজার করি শোকর খোদার,
তাহান মাহবূব হযরত গাওছে মাইজভাণ্ডার।’

গাউসুল আ’যম মাইজভাণ্ডারী (রা.)’র শানে মাহবূবীয়্যত শতাব্দী-অধিক কাল ধরে চর্চিত-স্বীকৃত একটি বিষয়। এটি স্বয়ং গাউসুল আ’যম কর্তৃক অনুমোদিত। এটি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি সত্যিই অনাকাঙ্খিত ও দুঃখজনক। এ ধোঁয়াশা জ্ঞানাঞ্জন মাখা নয়নসমূহে প্রতারিত করতে কখনো সক্ষম হবেনা।

মাহবূবুল্লাহিল মু‘আযযম, ফরদুল্লাহিল আকরম, ক্বুতবুল্লাহিল আফখম, গাউসুল্লাহিল আ’যম হযরত মাওলানা সৈয়্যদ আহমদুল্লাহি তা‘আলা মাইজভাণ্ডারী রাদ্বিয়ানহুল্লাহুল বারীর মি’রাজ-ই বাকামালের স্মৃতিধন্য আশহুরে হুরূম ও আশহুরে হজ্জের অন্যতম যিলক্বদে তাঁর চরণে জানাই ভক্তিপূর্ণ সালাম।

“ইয়া গাউসু সালাম আলায়কা,
ইয়া মুরশিদ সালাম আলায়কা,
ইয়া মওলা সালাম আলায়কা,
সালাওয়াতুল্লাহ আলায়কা।

গাউসুনা-ল ফওযু লাদায়কা, নাহনু মুকবিলুন ইলায়কা
ফাসালাওয়াতুল্লাহ আলায়কা, বিত্তাওয়াতুরি ওয়াত তাওয়ালী।
ইয়া হাবীবাল্লাহিল আলী, ইয়া খলীলা যিন নাওয়ালী
ফাসালামুনা আলায়কা, ফীল হালি ওয়াল মায়া-লী।
আন্তা গাউসুল্লাহিল আ’যম, আন্তা ক্বুতবুল্লাহিল আফখম,
আন্তা ফরদুল্লাহিল আকরম, খায়রা মাকদামিন তা‘আলী।
আন্তা ক্বিবলাতুল মক্বা-সিদ, ফাইলায়কা নাস‘আ নাহফিদ,
আন্তা ফীল কাওনাইনি মক্বসদ, আন্তা মালিকুল মক্ববূলি।”
[আঈনা-ই বারী।]

মাওলায়া সল্লি ওয়া সল্লিম দায়িমান আবাদান আলা হাবীবিকা খায়রিল খলকি কুল্লিহিমি ওয়া আলা আলিহী ওয়া আসহাবিহী ওয়া আহবাবিহী আজমা‘ঈন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *