ফজিলাতুল ক্বদর নাঈমা
একজন কবি সাহিত্যিকের কিবা সাধ্য যে কলমের কালিতে এক মহান অলি-আল্লাহর মহাসাগররূপ জীবন ও কর্ম চিত্রণ করবে? আনা সাগর নামক সরোবরের পানি একটি ঘটিতে পুরে নেন যিনি, তাঁর সুবিশাল যিন্দেগীকে পুস্তিকার পাতায় আবদ্ধ করবে কে? হাসানী-হুসাইনী দুই মহাসমুদ্রের মোহানায় অথৈ জলে ঠাঁই পাবে কে? ডুবুরীর ন্যায় সাগর তলের মণি-মুক্তা আহরণের সামর্থ্য না থাকলেও অঞ্জলি পেতে তৃষ্ণা নিবারণেতো বাঁধা নেই। তাই তৃষ্ণিত মনের তৃষ্ণা নিবারিত করার আকুলতায় ব্যাকুল হৃদয় আমাকে মসি ধারণে বাধ্য করে। জানি, এ যে চরম ঔদ্ধত্য। গরীবের ঔদ্ধত্য গরীব নাওয়াযের কৃপাদৃষ্টিতে ক্ষম্য হবে; এতে অধীনের অকৃত্রিম বিশ্বাস। অতএব দুর্গম পথে দুঃসাহসিক অভিযাত্রা। মাইজভাণ্ডারী দর্শন
জন্ম ও জন্মস্থান: কুত্ববুল আক্বতাব সৈয়্যদুল আত্কিয়া মুঈনুল মিল্লাতি ওয়াল হক্কি ওয়াদ্দীন (রা.) ৫৩৭ হিজরী মোতাবেক ১১৪২ খ্রীষ্টাব্দের ১৪ রজব সিজিস্তান (সিস্তান) এর সঞ্জরে জন্মগ্রহণ করেন। কারো কারো মতে তার জন্ম সন ৫২৭ হিজরী।
মাইজভাণ্ডারী দর্শন
নাম ও নসব : সুলতানুল হিন্দ (রা.)’র নাম মুঈনুদ্দীন পিতা-মাতা স্নেহ করে হাসান ডাকতেন। তিনি পিতৃ ও মাতৃ উভয়কুলে সৈয়্যদ। নিম্নে তাঁর বংশ পরম্পরা উপস্থাপিত হল।
পিতৃবংশ পরম্পরা: খাজা মুঈনুদ্দীন বিন গিয়াসুদ্দীন বিন কামালুদ্দীন বিন আহমদ হুসাইন বিন নজ্মুদ্দীন ত্বাহের বিন আব্দুল আযীম বিন ইব্রাহীম বিন ইমাম আলী রেযা বিন মূসা কাযেম বিন ইমাম জাফর ছাদেক বিন মুহাম্মদ বাকের বিন ইমাম আলী যয়নুল আবেদীন বিন ইমাম হুসাইন বিন (আলী মরতুজা) ফাতেমা বতুল বিনতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলা আলিহী ওয়াসাল্লাম।
মাতৃবংশ পরম্পরা: খাজা মুঈনুদ্দীন বিন উম্মুল ওয়ারা বিবি মাহনূর বিনতে সৈয়্যদ দাউদ বিন সৈয়্যদ আব্দুল্লাহ্ হাম্বলী বিন সৈয়্যদ ইহ্ইয়াহ্ যাহেদ বিন সৈয়্যদ মুহাম্মদ রূহী বিন সৈয়্যদ দাউদ বিন সৈয়্যদ মূসা সানী বিন সৈয়্যদ আব্দুল্লাহ্ সানী বিন সৈয়্যদ মূসা আখন্দ বিন সৈয়্যদ আব্দুল্লাহ্ বিন সৈয়্যদ হাসান মুসান্না বিন সৈয়্যদুনা ইমাম হাসান বিন ( সৈয়্যদুনা আলী ) হযরত ফাতেমা বতুল বিনতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলা আলিহী ওয়াসাল্লাম।
শৈশব কৈশোর: সুলতানুল হিন্দ (রা.)’র বুযুর্গ পিতা খাজা গিয়াসুদ্দীন হাসান সিস্তানের ধনী ব্যবসায়ী মাত্র ছিলেন না, জাহেরী-বাতেনী জ্ঞানে সমৃদ্ধ তাক্ওয়া-পরহেযগারীতে পরিপূর্ণ খোদা প্রেমিক মহাসাধকও ছিলেন। তাতারীদের বর্বরতায় শ্মশানে পরিণত বিধ্বস্ত জন্মভূমি সিস্তানে বসবাস তিনি সমীচীন মনে করলেন না। তাই শিশু মুঈনুদ্দীনকে নিয়ে খোরাসানে এসে বসতি স্থাপন করেন। এখানেই সুলতানুল হিন্দ (রা.)’র শৈশব কৈশোর অতিবাহিত হয়।
প্রথমিক শিক্ষা: বংশ পরম্পরায় হাসানী-হুসাইনী শোণিতের বাহক মুঈনুদ্দীন চিশতী (রা.)’র ধমনীতে মদিনাতুল উলূম মুহাম্মদ (দ.) ও জ্ঞাননগরদ্বার মাওলা আলী (রা.)’র জ্ঞানধারা প্রবাহমান। তিনি মাত্র নয় বছর বয়সে পিতার তত্ত্বাবধানে পবিত্র কালামুল্লাহ্ হিফয সমাপ্ত করেন। অতঃপর স্থানীয় মাদরাসায় ভর্তি হয়ে তাফসীর, হাদীস ও ফিক্হসহ বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানার্জনে নিয়োজিত হন। আল্লাহ্ প্রদত্ত ধীশক্তি, বংশপরম্পরায় লব্ধ বোধ বুদ্ধি ও অসাধারণ মেধাবলে তিনি স্বল্প সময়ে বহুবিধ জ্ঞান লাভে সমর্থ হন।
বাস্তবতার মুখোমুখি সুলতানে হিন্দ: পিতা-মাতার স্নেহে আনন্দ-হিল্লোলে বয়ে চলল ধনীর দুলাল মুঈনুদ্দীনের কৈশোর। তিনি পদার্পণ করলেন পনের বছর বয়সে। কিশোর খাজার স্বপ্নিল জীবনের মুহূর্তগুলো হঠাৎ ভেসে যায় মহাকালের স্রোতে। পিতৃস্নেহের ছায়া অপসারিত হয় শির হতে। পিতার উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেন একটি ফলের বাগান ও গম পিষার একটি যাঁতা। এ-ই ছিল জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন। নিজেই বাগান পরিচর্যা করতেন, নিজেই আটা পিষে রুটি বানিয়ে খেতেন। এভাবেই অতিবাহিত হতে লাগল স্বল্পতুষ্ট খাজার জীবন। কিন্তু মানবতার বাগিচাকে পুস্পিত করার জন্য যিনি সৃষ্ট, তিনি কি সাধারণ একটি ফলের বাগানের দেখাশুনায় তৃপ্ত হতে পারেন। তাই কূদরতের আহ্বানের শুভক্ষণটির অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন কিশোর খাজা। মাইজভাণ্ডারী দর্শন
বৈপ্লবিক পরিবর্তন: পিতৃ বিয়োগের শোকের ক্ষত শুকাতে না শুকাতে স্নেহময়ী জননীও পরলোকগত হন। পিতা-মাতার বিয়োগ তদুপরি তাতারীদের হিংস্রতায় মুসলিম বিশ্বের ভয়াবহ পরিস্থিতি খাজা মুঈনুদ্দীনের কৈশোর মনে রেখাপাত করে। হত্যা, লুণ্ঠন ও নারী নির্যাতনের নিত্যনৈমিত্তিক চিত্র তিনি গভীর মনোযোগে প্রত্যক্ষ করেন। এসব কারণে তাঁর কচি মন পাপময় জগতের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে ওঠে। তাঁর হৃদয়তন্ত্রীতে পঙ্কিলজগতের বন্ধন ছিন্ন করার আর্তি অনুরণিত। প্রকৃত শান্তির অন্বেষণে তাঁর চিত্ত চঞ্চল। তিনি পার্থিব মোহান্ধ দুনিয়াদারদের সম্পর্ক সম্বন্ধের পরিবর্তে ফকীর দরবেশদের সাহচর্য অনুরাগী হয়ে ওঠেন। একদা তিনি বাগান পরিচর্যা করছেন। এমন সময় ওয়াহদতের উদ্যম ও ইশকে হাকীকির জজবায় আত্মবিভোর মজযূব ইব্রাহীম কনদূযী (রা.) অদৃশ্য ইঙ্গিতে বাগানে উপস্থিত হলেন। খাজা আজমীরী (রা.)’র দৃষ্টি মজযূব (রা.) উপর পড়ামাত্র এগিয়ে গিয়ে তাঁকে সসম্মানে বৃক্ষছায়াতলে বসালেন। ভক্তি অর্ঘ্য স্বরূপ একগুচ্ছ তাজা আঙ্গুর সামনে পেশ করে নিজে দু’জানু হয়ে বসে গেলেন। হযরত মজযূব (রা.) আঙ্গুর আহার করলেন এবং খুশি হয়ে পুটলী থেকে একটি খইল অথবা রুটির টুকরো বের করে দাত দ্বারা চিবিয়ে হযরত খাজা (রা.)’র মুখে পুরে দিলেন। এভাবে হাকীকত অন্বেষীকে হাকীকতের স্বাদ আস্বাদন করিয়ে দিলেন। চর্বিত রুটি অথবা খইলের টুকরো কণ্ঠনালী অতিক্রম করতে না করতেই রূহ ও আত্মা আল্লাহর জ্যোতিতে উদ্ভাসিত হল। সন্দেহ-সংশয়ের পর্দা দৃষ্টি থেকে অপসারিত হতে শুরু করল। চিত্তজগতে বিপ্লব সাধিত হল। পার্থিব বন্ধনের সকল রজ্জু টুটে গেল। খোদা-প্রেমে বিভোর মুক্ত স্বাধীন মুঈনুদ্দীন (রা.) বাগান, যাঁতা ও সহায়-সম্বল বিক্রয় করে লব্ধ সমুদয় অর্থ গরীব-দুঃখীদের বন্টন করে দেন। অতঃপর খোদা অন্বেষণ প্রেরণায় ঘর-বাড়ি ছেড়ে রিক্ত হস্তে আল্লাহর রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন।
ইলমে শরীয়তে অগাধ পাণ্ডিত্য অর্জন: তরিকতপন্থীদের চিরাচরিত রীতি যে, তারা মনযিলে মা’রিফত পর্যন্ত পৌঁছার জন্য প্রথমে জাহেরী জ্ঞানসমূহের সিঁড়ি অতিক্রম করেন। অতঃপর আমলের দুর্গম মনযিল পাড়ি দিয়ে উলূমে বাতিন অর্জন করেন। হযরত খাজা (রা.)ও এ পন্থা অবলম্বন করলেন। তিনি খোরসান হতে বের হয়ে সমরকন্দ ও বুখারা অভিমুখে যাত্রা দিলেন। তখনকার দিনে বুখারা ও সমরকন্দ ছিল ইসলামী শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র। বিখ্যাত জ্ঞানী-গুণী, ফকীহ্, মুফাস্সির, দার্শনিক ও যুগবরেণ্য পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গ তথায় বাস করতেন। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জ্ঞানপিপাসুরা এখানে এসে জ্ঞানপিপাসা মিটাতো। হযরত খাজা (রা.)ও এখানে এসে একাগ্রমনে জ্ঞান সাধনায় লিপ্ত হলেন। খুব স্বল্প সময়ে ইলমে শরীয়তের জাহেরী জ্ঞানে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। তাঁর শিক্ষাগুরুদের মধ্যে মাওলানা
হুসসামুদ্দীন বুখারী ও মাওলানা শরফুদ্দীন সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।
মুরশিদে কামিলের সন্ধান: ‘তরিকত কা পন্থ বহুত কঠিন হুশিয়ারী ছে চলনাজী, গুরুসঙ্গি বিনে সে কঠিন পন্থে কভু না চলনাজী’ মর্মে খাজা মুঈনুদ্দীন কামিল মুরশিদের সন্ধানে বের হলেন। তখনকার সময় ইরাক ও হেজায ছিল ইলমে বাতিনের মরকয। হযরত খাজা (রা.) পীরের তালাশে বাগদাদ, মক্কা ও মদিনা ভ্রমণ করেন। আল্লাহর নিদর্শনাদি ও অলি-আল্লাহ্দের যিয়ারতের ধারাবাহিকতায় প্রাতীচ্য-প্রাচ্য চষে বেড়াতে লাগলেন। শেষতক নিশাপুরের হারূন নামক স্থানে এসে পৌঁছেন। সেখানে সাক্ষাৎ হয় হযরত খাজা ওসমান হারূনী (রা.)’র সাথে। দেখা মাত্রই অদম্য উৎসাহে শিষ্যত্ব বরণ করে নেন।
বায়াতের ঘটনা: স্বয়ং খাজা গরীব নাওয়ায (রা.)’র ভাষায় বিবৃত, ‘আমি বাগদাদ শহরে জুনায়িদ বাগদাদী (রা.)’র মসজিদে হযরত খাজা ওসমান হারূনী (রা.)’র পদচুম্বনের সৌভাগ্যধন্য হই। ওই মজলিসে বড় বড় সম্মানিত মশায়েখবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন। আমি আদবসহ আবেদনের ললাট ভূমিতে রেখে দিতেই হযরত মুরশিদ (রা.) বললেন, দু’রাকাত নামায আদায় করো। আমি তাৎক্ষণিক নির্দেশ পালন করলাম। আমাকে কেবলামুখী হয়ে বসতে বললে আমি বসে পড়ি। অতঃপর সূরা বাক্বারাহ পড়ার নির্দেশ দিলে আমি ভক্তিসহ সম্পূর্ণ সূরা পাঠ করি। সূরাপাঠ শেষে ষাটবার ‘সুবহানাল্লাহ্’ পড়ার নির্দেশ দিলে তা সমাপন করি। এ কাজগুলো সমাপনান্তে স্বয়ং হযরত মুরশিদ কেবলা ওঠে আমার হাত আপন হস্তবন্ধনে নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, আমি তোমাকে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছে দিলাম। তারপর বিশেষ ধরনের তুর্কী টুপি আমার মাথায় এবং নিজের খাস-কম্বল আমাকে পরিয়ে দিলেন। তারপর একহাজারবার সূরা এখলাস পড়তে বললে আমি তা সমাপন করি। অতঃপর বললেন আমাদের মশায়েখদের সিলসিলায় এ অজিফাগুলোই একরাত-একদিন মুজাহিদা বা সাধনা। অতএব, পরিপূর্ণ একরাত-একদিন সাধনা করো। নির্দেশ মোতাবেক আমি পুরো দিনরাত আল্লাহর ইবাদত বন্দেগীতে অতিবাহিত করলাম। দ্বিতীয় দিন উপস্থিত হয়ে নিবেদন-আনন ভূমিতে রাখলে বললেন, বসে পড়ো। আমি বসলাম। বললেন উপরের দিকে তাকাও, তাকালাম। জিজ্ঞাসা করলেন, কতটুকু দেখতে পাচ্ছো? বললাম, আরশে মুয়াল্লা পর্যন্ত। তখন বললেন, নীচের দিকে দেখ। আমি ভূ-পৃষ্ঠের দিকে দৃষ্টি ফিরালাম। জিজ্ঞেস করলেন, কতটুকু পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছো? বল্লাম, সর্বনিম্ন স্তর পর্যন্ত। অতঃপর নির্দেশ দিলেন, পুনরায় একহাজার বার সূরা এখলাস পড়ো। আমি হুকুম তামিল করলে বল্লেন, আসমানের দিকে দেখ এবং বলো কতটুকু পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছো? আমি দেখে বললাম হিজাবে আযমত বা আযমতের পর্দা পর্যন্ত দেখছি। এবার তিনি চক্ষু বন্ধ করতে বললে আমি তা-ই করলাম। তারপর খুলতে বললে খুলি। অতঃপর তাঁর মোবারক
অঙ্গুলিদ্বয় আমার চেখের সামনে ধরে বললেন, এবার কি দেখতে পাচ্ছো? আবেদন করলাম, আঠার হাজার আলম দেখতে পাচ্ছি। আমার কথা শুনে বললেন, তোমার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তারপর একটি ইটের দিকে ইঙ্গিত করে ওঠাতে বললেন। আমি তা ওঠালে নীচে কিছু স্বর্ণমুদ্রা দেখলাম। তিনি (রা.) বললেন, ওইগুলো নিয়ে দরবেশদের দান করো। আমি তাই করলাম।
সাধনা: খাজা ওসমান হারূনী (রা.)’র শিষ্যত্ব গ্রহণের পর হযরত খাজা (রা.) অন্তর পরিশুদ্ধ করণে আড়াই বছর পর্যন্ত কঠোর সাধনায় মশগুল ছিলেন। এ সম্পর্কে খাজা কুতুব উদ্দীন বখতিয়ার কাকী (রা.) লিখেছেন, ‘তিনি (রা.) কঠোর সাধনা করেছেন। রাতদিন লাগাতার ভাবে রোযা রাখতেন। সাতদিন অন্তর ৫ মিসকাল বা ২২.৫ মাশা ওজনের রুটি পানিতে ভিজিয়ে ইফতার করতেন। তাঁর পরিধেয় চাদর দু’টোও ছিল তালি-জোড়া দেওয়া। রিপুর জন্য যে ধরনের কাপড়ই পেতেন তা দিয়ে সেলাই করে নিতেন।
আল্লাহর দরবারে কবূলিয়তের স্বীকৃতি: মক্কা ও মদীনা শরীফের কোন এক সফরে হযরত খাজা ওসমান হারূনী (রা.) বায়তুল্লাহ্ শরীফের মিযাবে রহমতের নীচে আপন প্রিয় মুরীদ হযরত খাজা আজমীরী (রা.)’র জন্য দু‘আ করলেন। মুরীদের হাত ধরে তাঁকে আল্লাহর সোপর্দ করলেন। অদৃশ্য হতে আওয়াজ আসলো, ‘আমি মুঈনুদ্দীনকে কবূল করেছি।’ আওয়াজ শুনে শেখ (রা.) আনন্দিত হয়ে আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করলেন। হজ্ব সমাপনান্তে মদীনা শরীফে রওযায়ে আকদাসের নিকট শেখ (রা.) সালাম আরয করলেন। দরবারে মুস্তফা (দ.) থেকে উত্তর এলো, ‘হে সাগর-মহাসাগর ও বন-জঙ্গলের কুতুব তোমার উপরও সালাম।’ একথা শুনে শেখ (রা.) বল্লেন, কার্যসিদ্ধি হয়েছে।
খিলাফত প্রদান ও স্থলাভিষিক্ত মনোনয়ন: রূহানিয়তের কামিল-মুকাম্মিল গুরু খাজা ওসমান হারূনী লায়েক শিষ্য খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীকে হাক্বীক্বত ও মা’রিফতের প্রতি ছত্রের দরস দিয়ে কুত্ববিয়তের মকামে পৌঁছে দেন, তখন নিজ মুখে বলেন, “মুঈনুদ্দীন মাহবূবে খোদা। তাঁকে শিষ্য রূপে পেয়ে আমি গর্বিত।” অতঃপর ৫৮২ হিজরী মোতাবেক ১১৮৬ খ্রীষ্টাব্দে বাগদাদে খিরকায়ে খিলাফত ও সিলসিলায়ে চিশতীয়ার শেখ পরম্পরায় হস্তগত তাবাররুকাতে মুস্তাফায়ী প্রদানপূর্বক আপন খলিফা ও স্থলাভিষিক্ত মনোনীত করেন।
পর্যটন: খাজা গরীবে নাওয়ায (রা.) শেখে ত্বরিক্বত খাজা ওসমান হারূনী (রা.) থেকে বিদায় গ্রহণ করে জগতের হাল-হাক্বীকত পর্যবেক্ষণ ও বুযুর্গানে দ্বীনের যিয়ারতের উদ্দেশ্যে ভ্রমণে মনোনিবেশ করেন। এ ধারাবাহিতায় সঞ্জানে শেখ নজ্মুদ্দীন কুবরা, জিলানে শেখ আব্দুল কাদের জিলানী, বাগদাদে শেখ জিয়া উদ্দীন, শেখ আওহদুদ্দীন কিরমানী, শেখ শিহাবুদ্দীন সহরওয়ার্দী, হামদানে শেখ খাজা ইউসুফ হামদানী, তিবরীযে শেখ আবূ সাঈদ তিবরীযী, শেখ জালালুদ্দীন তিবরীযী, ইস্পাহানে শেখ মাহমূদ ইস্পাহানী, খাজা কুতুব উদ্দীন বখতিয়ার কাকী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমসহ নাম না জানা অনেক পীর-বুযুর্গের সাক্ষাৎ লাভ করেন। তাঁদের অনেক থেকে তিনি ফয়েয লাভ করেন আবার অনেকে তাঁর থেকে ফয়েয হাসিল করেন। এ সফরেই হযরত আওহদুদ্দীন ও হযরত কুতুব উদ্দীন তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন এবং শেখ শিহাবুদ্দীন ওমর সহরওয়ার্দী ফয়েযসিক্ত হন।
হরমে কা’বায় সুলতানুল হিন্দ ও আল্লাহর প্রতিশ্রুতি: ৫৮৩ হিজরী মোতাবেক ১১৮৭ খ্রীষ্টাব্দে তিনি মক্কা শরীফে পৌঁছে হজ্বব্রত পালন করেন। এ সফরে হরমে কা’বায় ইবাদতে মশগুল অবস্থায় তিনি শুনতে পেলেন, ‘হে মুঈনুদ্দীন! আমি তোমার উপর সন্তুষ্ট। তোমাকে ক্ষমা করা হয়েছে, তোমার যা ইচ্ছা প্রার্থনা করো, আমি তোমাকে দান করবো।’ অদৃশ্যবাণী শুনে খাজা (রা.) খুশিতে আত্মহারা হয়ে সাজদা-পতিত হয়ে শোকর আদায় করলেন। অতঃপর সবিনয়ে আল্লাহর দরবারে নিবেদন জানালেন, ‘হে খোদা! মুঈনুদ্দীনের সিলসিলার মুরীদদের তুমি ক্ষমা করো।’ দৈববাণী এল, ‘হে মুঈনুদ্দীন তুমি আমার প্রিয় বান্দা, সুতরাং তোমার এবং তোমার সিলসিলায় ক্বিয়ামত পর্যন্ত যারা মুরীদ হবে তাদেরকে আমি ক্ষমা করে দেবো।’
দরবারে মুস্তফা (দ.)-এ হাযেরী ও সুসংবাদ: মদিনা তৈয়্যবা এসে হযরত খাজা (রা.) ইবাদতে নিয়োজিত রইলেন। নিজের মূল্যবান সময় স্মরণ ও ধ্যানে অতিবাহিত করতে লাগলেন। শেষতক ওই শুভক্ষণ এসে পড়লো, রাসূলে খোদা (দ.)’র দরবার হতে সুসংবাদ এলো, ‘হে মুঈনুদ্দীন! তুমি আমার দ্বীনের সাহায্যকারী। আমি তোমাকে হিন্দুস্তানের বেলায়ত প্রদান করলাম। ওখানে কুফর ও অন্ধকার সম্প্রসারিত। তুমি আজমীর যাও। তোমার পদার্পণে কুফরীর অন্ধকার বিদূরিত এবং ইসলামের আলো উদ্ভাসিত হবে।
এক নিমিষে প্রাচ্য-প্রাতীচ্যপরিদর্শন: দরবারে মুস্তফা (দ.) থেকে সুসংবাদ পেয়ে তিনি যেমন খুশি হলেন তেমনি বিব্রতও হলেন। কোন সুদূরে অজানা-অচেনা আজমীর? নবী (দ.)’র অলংঘনীয় নির্দেশ কিভাবে পালন করবে? চিন্তায় অস্থির খাজার নিদ্রা এলে স্বপ্নে নবী (দ.)’র দর্শন লাভে ধন্য হন। হুযূর করীম (দ.) তাঁকে প্রাচ্য থেকে প্রাতীচ্য পর্যন্ত সমস্ত জগত এক নিমিষে দেখিয়ে দেন। পথের বালা-মুসিবত তাঁর দৃষ্টির সামনে উদ্ভাসিত। তিনি আজমীর ও সেখানকার দূর্গ ও পাহাড়গুলো স্পষ্ট দেখতে পেলেন। সরকারে দূ’আলম তাঁকে একটি আনার দিয়ে বল্লেন, ‘আমি তোমাকে আল্লাহর যিম্মায় সোপর্দ করলাম।’
হিন্দুস্তানের পথে সুলতানে হিন্দ: মহানবী (দ.)’র অলংঘ্য নির্দেশে তিনি চল্লিশ জন সাথী নিয়ে হিন্দুস্তানের পথে যাত্রা দিলেন। পথিমধ্যে অসংখ্য ঘটনা ও কারামাত প্রকাশ পায় কিন্তু কলেবরে বৃদ্ধি আশঙ্কায় আমরা সে বর্ণনায় যাচ্ছি না। তিনি মদীনা শরীফ থেকে বাগদাদ শরীফ এলেন। ওখানে অসংখ্য অলি-আল্লাহ্দের সংস্পর্শে বসেন। ৫৮৬ হিজরী মোতাবেক ১১৯০ খ্রীষ্টাব্দে আজমীরের উদ্দেশ্যে বাগদাদ হয়ে চিশত, খিরকান, জহনা, কিরমান, উস্তরাবাদ, বুখারা, তিবরীয, ইস্পাহান ও হিরাত হয়ে
সবযাওয়ার পৌঁছেন। সবযাওয়ার অধি পতি অত্যাচারী ও কট্টর শিয়া ইয়াদগার মুহাম্মদের বাগানে তার সাথে খাজা (রা.)’র দেখা হয়। বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের পর সে তওবা করে খাজা (রা.)’র মুরীদ হয়ে খেলাফত লাভে ধন্য হয়।সবযাওয়ার থেকে বলখ আসেন। বলখে শেখ আহমদ খদ্বরভী (রা.)’র আস্তানায় কিছুদিন অবস্থান করেন। তখন বলখের প্রসিদ্ধ দার্শনিক মাওলানা জিয়া উদ্দীন হাকীমের সাথে সুলতানুল হিন্দের সাক্ষাৎ হয়। দার্শনিক মহোদয় হযরত খাজা (রা.)’র সংস্পর্শে এলে দর্শনের কুপ্রভাব হৃদয়ের ত্রিসীমানা হতে তিরোহিত হয়। তিনি ও তাঁর দর্শন-জরাগ্রস্ত শিষ্যরা খাজা (রা.)’র নিকট ত্বরিক্বতের দীক্ষা গ্রহণ করেন। এতে বলখের সর্বত্র খাজা (রা.)’র সুনাম ছড়িয়ে পড়লে লোকেরা দলে দলে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তিনি (রা.) হাকীম জিয়া উদ্দীনকে শিক্ষা-দীক্ষায় পরিপূর্ণ যোগ্য করে গড়ে তুলে খেলাফত ও খিরকা প্রদানপূর্বক ওই অঞ্চলে হিদায়ত-ইরশাদের দায়িত্ব অর্পণ করেন। অতঃপর বলখ থেকে সমরকন্দ আসেন। সেখানে খাজা আবূল লাইস সমরকন্দী (রা.)’র নিবাসের নিকট একটি মসজিদ নির্মিত হচ্ছিল। কা’বার দিক নির্ণয় নিয়ে এক ব্যক্তির আপত্তি ছিল। সে লোকদের সাথে তর্ক-বিতর্কে লেগে পড়ল। স্বয়ং সুলতানে হিন্দ (রা.)ও বুঝিয়ে তাকে নিবৃত্ত করতে পারেননি। শেষতক খাজা (রা.) তার মুখকে কা’বার দিকে করে বললেন, সম্মুখে দেখোতো, কি দেখা যাচ্ছে? সে দেখে বলল, কা’বা শরীফ। হযরত খাজা (রা.)’র টুকু নজরে সমরকন্দ থেকে মক্কা পর্যন্তের সকল পর্দা ওঠে গেল এবং এক সৌভাগ্যশীল কাবা শরীফের যিয়ারতে ধন্য হল। তারপর হযরত খাজা (রা.) ভ্রমণের ধারাবাহিকতায় গজনী পৌঁছে সমশুল আরেফীন শেখ আব্দুল ওয়াহিদ (রা.)’র সাক্ষাৎ ও সংস্পর্শে কিছুদিন অতিহবাহিত করেন। অতঃপর কাফেলাসহ লাহুর পৌঁছে হযরত আবূল হাসান আলী বিন ওসমান গঞ্জে বখ্শ হাজভেরী লাহুরী (রা.)’র মাযারের পার্শ্বে কিছুকাল চিল্লা করেন। সেখান থেকে সুমানা এলে পৃথ্বিরাজের সৈন্যদলের বাঁধার সম্মুখীন হন। দরবারে রিসালত থেকে লব্ধ নির্দেশনামূলে ওইসব প্রতিকূলতা ডিঙ্গিয়ে দিল্লী এসে পৌঁছেন। দিল্লীতেও বাঁধা বিপত্তির শিকার হন। কিন্তু অপ্রতিরোধ্য রূহানী শক্তির সামনে কোন কিছুই বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারল না। দিল্লীর সর্বত্র খাজা (রা.)’র কারামত ও বুযুর্গীর প্রসিদ্ধি ছড়িয়ে পড়লে শতসহস্র লোক ইসলামে দীক্ষিত হয়। তিনি যেহেতু আজমীরে অবস্থানে আদিষ্ট সেহেতু দিল্লীতে তাঁর খলিফা হযরত কুতুব উদ্দীন বখতিয়ার কাকী (রা.) কে হিদায়তের দায়িত্ব অর্পণ করে আজমীর অভিমুখে যাত্রা দেন।
আজমীরে খাজা আজমীরী (রা.): মাঠ-ঘাট, বন-জঙ্গল, সাগর-মহাসাগর, তেপান্তর পেরিয়ে সুলতানুল হিন্দ ৫৮৭ হিজরী ১১৯১ খ্রীষ্টাব্দে আজমীর পৌঁছেন। তখনকার আজমীর ছিল মূর্তিপূজার কেন্দ্র। সর্বত্র দেবমন্দির আর ব্রাহ্মণ পূজারীর সমারোহ। সুতরাং একজন মুসলিম দরবেশ কি পরিমাণ প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবেন, সহজেই অনুমেয়। সব বাঁধা পায়ে দলে তিনি উড্ডীন করেন ইসলামের বিজয় কেতন। নিম্নে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও তার মোকাবিলায় সফল সুলতানুল হিন্দের বিজয়গাঁথার কিঞ্চিৎ আলোচনার প্রয়াস পেলাম।
রাজার উট বসেই রইল: খাজা গরীব নাওয়ায (রা.)’র কাফেলা আজমীরে পৌঁছে শহরের বাইরে বৃক্ষছায়া পরিবেষ্টিত একটি স্থানে অবস্থান করতে চাইলে রাজার অনুচরগণ বাঁধা দিল। তারা বলল, এটি রাজার উট বাঁধার স্থান, এখানে আপনি বসতে পারবেন না। তাদের এ আচরণ হযরত খাজা (রা.)’র অপছন্দ হল। তিনি বললেন, তোমাদের উট বসেই থাকবে। অতঃপর তিনি সেখান থেকে ওঠে চলে গেলেন। সন্ধ্যায় যথারীতি রাজার উট সেখানে বাঁধা হল কিন্তু সকালে রাখালগণ উট মাঠে নিতে চাইলে উট আর ওঠেনা। খাজা (রা.)’র কথা মতো উট বসে রইল। উটের বক্ষ যেন মাটির সাথে লেগে রইল। তারা সর্বপ্রকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হল। তারা ভাবতে লাগল, কি আশ্চর্য? সুস্থ উট ওঠেনা কেন? শেষ পর্যন্ত পরামর্শ করে একমত হলো যে, আমরা গতকাল যে দরবেশকে অবস্থান করতে দিইনি, নিশ্চয়ই তাঁর অভিশাপই লেগেছে। সুতরাং তারা খাজা গরীব নাওয়াযের নিকট গিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করল। হযরত (রা.) দয়াপরবশ হয়ে বল্লেন, যাও, আল্লাহর দরবার থেকে তোমাদের উটের ওঠার নির্দেশ হয়েছে। রাখালগণ ফিরে এসে এ আশ্চর্যজনক দৃশ্য দেখে হতভম্ব হয়ে গেল যে, সব উট নিজ থেকেই ওঠে দাঁড়িয়েছে।
শত্রুদের আশ্চর্যজনক ব্যর্থতা: শহরে প্রবেশ করে খাজা (রা.) আনা সাগরের তীরে এক উঁচু স্থানে আস্তানা গাড়লেন; (যা বর্তমানে হযরত খাজা (রা.)’র চিল্লাগাহ নামে চিহ্নিত) এর আশ-পাশে প্রচুর মন্দির। পূজারীরা খাজা (রা.)’র বেলায়তী প্রভাব ও কারামত দেখে অস্থির হয়ে ওঠল। এ দরবেশে কামিলের আগমনে তাদের প্রাচীন প্রচলিত ধর্মের ভিত্ নড়ে ওঠছে দেখে তারা রাজার নিকট তাঁকে বহিস্কারের আবেদন জানাল। রাজা এ কাজে কতেক সিপাহী নিযুক্ত করল। অস্ত্র-সজ্জিত সিপাহী ও রাজকর্মচারী ব্রাহ্মণদের এক বিরাট দল খাজা (রা.) কে বিতাড়িত করতে তাঁর আস্তানার নিকট এল। তিনি তাদের ভাবভঙ্গি দেখে এক মুষ্টি মাটি নিয়ে আয়তুল কুরসী পড়ে দম করে নিক্ষেপ করলেন। মাটির সামান্য অংশও যার ওপর পড়েছে সে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে শহরের দিকে পলায়ন করল।
রামদেবের ইসলাম গ্রহণ: একদা আনা সাগর তীরস্থ মন্দির রাজাসহ অসংখ্য পূজারীর ভিড়ে লোকে লোকারণ্য। এমতাবস্থায় মোহন্তপ্রধান রামদেব বহু লোকজন নিয়ে খাজা (রা.) কে উত্যক্ত করতে আস্তানায় এলো। হযরত খাজা (রা.)’র জগত মোহিতকারী নূরী আননে দৃষ্টি পড়তেই তাদের অন্তর কেঁপে ওঠল। হযরত গরীব নাওয়াযের জ্যোতির্ময় দৃষ্টিতে মোহন্তপ্রধান রাম দেবের হৃদয়ে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এলো। সে ভক্তি প্রণত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করল। খাজা (রা.) কে কষ্ট দিতে এসছিল বটে, এখন কিন্তু তাঁর শত্রুদের দমনে নিজেকে সপে দিলেন। পাথর ও লাঠি দিয়ে মেরে শত্রুদের হঠিয়ে দিলেন। তাঁর এ খেদমত অবলোকনে সুপ্রসন্ন খাজা (রা.) এক গ্লাস পানি দিয়ে পান করতে বল্লেন। পানি পান মাত্রই তাঁর হৃদয় দর্পণ গোমরাহী ও ভ্রষ্টতার মরিচা হতে পবিত্র হয়ে গেল। তিনি খাজা (রা.)’র মুরীদ হয়ে গেলেন। খাজা (রা.) তাঁর নাম রাখলেন শাদী দেব।
যাদুকরদের ব্যর্থতা: আল্লাহ্ তা‘আলার একত্ববাদ প্রতিষ্ঠায় মূসা (আ.) যখন সুস্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে আত্মপ্রকাশ করলেন, তখন ফির‘আউন নিজ রাজত্বের পতন নিশ্চিত ধরে নিল। নড়বড় হয়ে ওঠল তার তখত-তাউস। তার সাঙ্গপাঙ্গরা যাদু দ্বারা মূসায়ী মু’জিযার মোকাবিলার পরামর্শ দিল। অতএব, সারা মিসরের যাদুকরদের একত্রিত করা হল। তারা শহরবাসী ও রাজন্যবর্গের উপস্থিতিতে যাদুবিদ্যার চমক দেখাতে শুরু করল। কিন্তু ভেলকিবাজির খেলা, মূসা (আ.)’র লাঠি ভয়ঙ্কর সাপ হয়ে গিলে খেল। ফেরাউনী অহঙ্কার ধুলোয় মিশিয়ে দিল। যাদুকরদের দৃষ্টি হতে গোমরাহীর পর্দা অপসারিত হল। আল্ কুরআনের ভাষায় ‘এবং আমি মূসা (আ.)কে নিজের লাঠি নিক্ষেপ করতে প্রত্যাদেশ করি। লাঠি নিক্ষেপ মাত্র মুহূর্তের মধ্যে তাদের মিথ্যা তিলেসমাতি গিলে খেল। অতএব সত্য প্রকাশ পেল এবং তারা যা করেছিল তা বাতিল হল। সেখানে তারা পরাজিত হলো এবং লাঞ্ছিত হয়ে ফিরল। জাদুকররা সাজদায় পতিত হলো। তারা বলল, আমরা সারা জাহানের প্রতিপালকের উপর ঈমান আনলাম, যিনি মূসা ও হারূনের রব’।
আজমীরের ভূমিতে হক ও সদাক্বতের মোকাবিলায় শিরক ও বাতিলের ভেলকিবাজি ও তার ফলাফল অনুরূপই যেমনটি দুই সহস্রাব্দ পূর্বে মিসরে পরিদৃশ্যত হয়েছিল। হযরত খাজা গরীব নাওয়ায (রা.) যখন আজমীরের সহস্রাব্দের পুরোনো মুশরিকী আক্বিদা-বিশ্বাস ও জাহেলী ধ্যান-ধারণার মূলোৎপাটনকারী কারামত নিয়ে আবির্ভূত হলেন, তখন পৃথ্বিরাজের রাজসিংহাসনের ভিত কেঁপে ওঠল। অতএব, সেও হক্বের বলিষ্ঠ আওয়াজ রুদ্ধ ও রূহানী জ্যোতিতে প্রদীপ্ত প্রদীপ নির্বাপণে ওই ব্যবস্থাই নিল, যা হযরত মূসা (আ.)’র মোকাবিলায় ফিরাউন নিয়েছিল।
পৃথ্বিরাজ ও তার সভাসদগণ মনে করছিল, সুলতানুল হিন্দ (রা.) একজন যাদুকর; বলিষ্ঠ যাদুশক্তি দ্বারা তাঁর মোকাবিলা সম্ভব। তাই হিন্দুস্তানের সর্বাপেক্ষা বড় যাদুকর জয়পালকে নিমন্ত্রণ জানাল। সে দেড়সহস্র দক্ষ শিষ্য নিয়ে আজমীর পদার্পণ করল। তার আগমনে রাজা ও রাজন্যবর্গের উদ্যম বেড়ে গেল। তারা নিশ্চিত ধরে নিয়েছিল যে, এবার তারা খাজার মোকাবিলায় জয়ী হবে। অপরিণামদর্শী যাদুভক্তরা মোটেও জানতোনা যে, আহলুল্লাহ্দের অলৌকিকতা নজরবন্দি নয় বরং হাকীক্বত। তারা টের পায়নি যে, রূহানী শক্তির বিপক্ষে যাদুকরির ফাঁদ মাকড়সার জালের ন্যায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে। জয়পাল যোগী দেড়হাজার সহযোগী, রাজকর্মচারী ও মন্ত্রীবর্গ নিয়ে যাদুর চমক দেখাবার জন্য খাজা (রা.)’র আস্তানার দিকে পা বাড়াল। তার আগমনের সংবাদ পেয়ে খাজা (রা.) অযু করে আপন আস্তানার চতুস্পার্শ্বে লাঠি মোবারক দ্বারা বৃত্ত টেনে দেন। অতঃপর বললেন ইনশাআল্লাহ্! কোন অপশক্তি এ বৃত্তের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারবে না। জয়পাল গর্বাহঙ্কারে অন্ধ হয়ে নিকটে এলে তার চেলাদের যে-ই বৃত্তের ভিতর পা রেখেছে সে-ই বেহুশ হয়ে নিপতিত হয়েছে।
ঘটিতে আনা সাগর: অত্যাচারী ও অবিচারী পৃথ্বিরাজ নৈতিক পন্থায় খাজা (রা.)’র মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে অমানবিক পন্থায় প্রভাব বিস্তারে প্রলুব্ধ হল। যে আনা সাগরের পানি পশুপাখি সবার জন্য উম্মুক্ত, তার ব্যবহার খাজা ও খাজার অনুসারীদের জন্য নিষিদ্ধ। সে সরোবরের তীরে সৈন্য মোতায়েন করল। হযরত খাজা (রা.) তাদের এ অনৈতিক পন্থার কথা জেনে শাদী দেবকে বললেন, যে করেই হোক আনা সাগর হতে এক ঘটি পানি নিয়ে এসো। শাদী দেব তাদের পাহারা অগ্রাহ্য করে সাহসিকতার সাথে সরোবর পর্যন্ত পৌঁছে গেলেন। তিনি পানিতে ঘটি ডুবালেন মাত্র সমুদয় পানি তাতে ঢুকে গেল। ক্ষণকাল আগেও স্বচ্ছ জল ঢেউ খেলছিল যেথা, সেখানে ধুলি ওড়ছে। লোকেরা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। শাদী দেব ঘটি নিয়ে খাজা (রা.)’র নিকট ফিরে এলেন। খাজা (রা.)’র সঙ্গী-সাথীরা প্রয়োজনীয়তা মিটাচ্ছে কিন্তু পানি হ্রাস পাচ্ছে না। আজমীরের অধিকাংশ মানুষের ব্যবহার ও পান-চাহিদা যেহেতু আনা সাগরের জলে মিটতো, সেহেতু জনজীবন দুর্বিসহ হয়ে ওঠল। অবস্থা দেখে জয়পাল খাজা (রা.)’র আস্তানার বৃত্তের নিকট এসে পানির জন্য সবিনয় আবেদন জানাল যে, ফকীর কোমল অন্তর হয়। ফকীরের দয়ালুমনে কারো প্রতি দ্বেষ থাকতে পারে না। আপনি যেহেতু ফকিরীর দাবীদার, সেহেতু উদার মনের পরিচয় দিতে আল্লাহর বান্দাদের পানি দিন। তার আবেদন শুনে খাজা (রা.) শাদীকে বল্লেন, যেখান থেকে ঘটি ভর্তি করেছিলে, ঘটির পানি সেখানে ঢেলে দাও। শাদী দেব ঘটির পানি আনা সাগরে ঢেলে দিতে না দিতে সরোবর কানায় কানায় ভর্তি হয়ে গেল।
জয়পালের যাদুসিক্ত করণ: জয়পাল ও তার চেলারা হযরত খাজা (রা.)’র বিপক্ষে যাদুর কারিশমা শুরু করল। পাহাড়ের চূড়া থেকে সহস্র বিষধর কালনাগিনী ফনা তুলে খাজার দিকে ধেয়ে আসতে লাগল। কিন্তু বৃত্ত পর্যন্ত এসে সর্প মাথা নুয়ে পড়ল। একচুল পর্যন্তও আগ বাড়ল না। এ যাদু বিফলে গেলে যাদু বলে অগ্নিবর্ষণ বর্ষাতে শুরু করল। চতুর্দিকে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ। শতসহস্র সজীব বৃক্ষ জ্বলে ভষ্ম হল। কিন্তু বৃত্ত সম্পূর্ণ নিরাপদ রইল। অগ্নিযাদু দ্বারাও যখন খাজা ও তাঁর সাথীদের পশম পর্যন্ত নাড়তে পারল না, তখন জয়পাল নিজের জ্ঞান পরিধি মতে তাঁর যাদুতূণের শেষ তীরটি নিক্ষেপের মনস্থ করল। সে হযরত খাজা (রা.) কে সম্বোধন করে বলল, এবার আমি ও তোমার মোকাবিলা বাকী রয়েছে। ভাল চাওতো শীঘ্রই আজমীর ত্যাগ করো। অন্যথায় আমি আকাশে গিয়ে তোমাদের মাথার ওপর এত বালা-মুসিবত বর্ষণ করবো যে, তোমরা সামলাতে পারবে না। খাজা আশ্চর্য হয়ে বল্লেন, তুমি ভূমির কর্ম করতে অক্ষম, আবার আসমানে যেতেও কি সক্ষম? জয়পাল হরিণের চামড়া হাওয়ায় বিছিয়ে তাতে বসে মুহূর্তের মধ্যে ওড়তে লাগল এবং অদৃশ্য হয়ে গেল। এবার কি হচ্ছে দেখার জন্য লোকেরা আশ্চর্য হয়ে অপেক্ষা করছে। খাজা (রা.) জয়পালের যাদুর কারিশমা ও লোকের আশ্চর্যভাব দেখে আপন খড়মদ্বয়কে নির্দেশ দিলেন, ‘যাও মাথাপিটা করে অহঙ্কারী জয়পালকে নামিয়ে আনো’। খড়ম দু’টো পাখির মতো শূন্যে ওঠে অদৃশ্য হয়ে গেল। কয়েক মুহূর্ত পর লোকেরা এ আশ্চর্যজনক দৃশ্য দেখল যে, হযরতের পাদুকা দু’টি জয়পালের মাথা পিটতে পিটতে তাকে খাজার নিকট নিয়ে এল।
জয়পালের ইসলাম গ্রহণ ও ক্বিয়ামত পর্যন্ত জীবন লাভ: সুলতানুল হিন্দের খড়মের আঘাত অহঙ্কারী জয়পালের অহঙ্কারের ভূত ভেঙ্গে চুরমার করে দিল। সে হযরত খাজা (রা.) কারামত দেখে কদমে মাথানত করল। সত্যান্তরে ইসলাম কবুল করল । খাজা (রা.)’র খেদমতে নিবেদন জানাল, হুযূর দোয়া করুন আমি যেন অমর হই। অর্থাৎ ক্বিয়ামত পর্যন্ত জীবিত রই। হযরত (রা.) দু‘আ করলেন যে, হে খোদা! তুমি তার দু‘আ কবুল করো। হযরত (রা.) যখন দু‘আ কবুল হওয়ার নিদর্শন পেলেন তখন বললেন, তুমি স্থায়ী জীবন পেয়েছো। কিন্তু মানুষের দৃষ্টি হতে গোপন থাকবে। অতএব এমনই হল। জনশ্রুতি আছে যে, জয়পাল অদ্যাবধি আজমীরের পাহাড়ে থাকে। যে পথিক পথ ভুল করে তিনি তাকে পথ দেখান। প্রতি জুমার রাত তিনি রওযা শরীফ যিয়ারতে ধন্য হন। হযরত খাজা (রা.) তাঁর নাম রেখেছেন আব্দুল্লাহ্।
পৃথ্বিরাজের প্রতি তার মায়ের নির্দেশ: পৃথ্বিরাজ যাদুকরদের ব্যর্থতা ও রূহানী শক্তির মোকাবিলায় যাদুবিদ্যার পরাজয় দেখে লজ্জিত, লাঞ্ছিত ও ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে আজমীর প্রত্যাগমন করল। তার মাতা খাজা (রা.)’র আগমন, উটের বসে থাকা, আনা সাগর শুষ্ক হয়ে যাওয়া ও জয়পালের ভেলকিবাজি বিফলের ঘটনা জানতে পেরে বল্ল, উনি ওই ব্যক্তি যার বিষয়ে আমি বার বছর আগে বলেছি। তুমি তাঁর সাথে বাকবিতণ্ডা ও যুদ্ধ করো না। কারণ, তুমি কোনভাবেই তাঁর মোকাবিলায় সফল হবে না। সুতরাং তাঁকে সম্মান করে চলবে।
বর্তমান দরগাহ শরীফ স্থলে আগমন: হযরত খাজা (রা.)’র বাতেনী প্রভাব ও ব্যাপক কারামত আজমীরবাসীদের যথেষ্ট প্রভাবান্বিত করে। অভিজাত-সাধারণ নির্বিশেষে বহুলোক মূর্তিপূজা ছেড়ে ইসলামে দীক্ষিত হয়। তাঁর ভক্ত-মুরীদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। অতএব, তিনি আনা সাগর তীরস্থ আস্তানা ত্যাগ করে খাদেমদের নিয়ে আজমীর শহরে বর্তমান দরগাহস্থ স্থানে বাসস্থান গ্রহণ করেন।
পৃথ্বিরাজকে ইসলামের দাওয়াত: শহরে অবস্থান নেওয়ার পর খাজা (রা.) পৃথ্বিরাজকে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে পত্র লিখলেন, ‘হে রাজা! তোমার ভরসা বিশ্বাস যাদের ওপর ছিল, আল্লাহর হুকুমে তারা মুসলমান হয়েছে। সুতরাং ভাল চাইলে তুমিও ইসলাম গ্রহণ করো। অন্যথায় লাঞ্ছিত হবে’। পাষাণ-হৃদয় পৃথ্বিরাজ এ দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করল। তখন খাজা (রা.) মস্তক অবনমিত করে ধ্যানে বসলেন। কিছুক্ষণ পর মাথা উত্তোলন করে বল্লেন, ‘এ পাপিষ্ট ঈমান না আনলে আমি তাকে ইসলামী সৈন্যদের হাতে জীবন্ত গ্রেফতার করিয়ে দেব’।
তাবাররুকাত সোপর্দ: খাজা গরীব নাওয়ায (রা.) পীর মুরশিদ খাজা ওসমান হারূনী (রা.) থেকে প্রাপ্ত সিলসিলায়ে চিশতের তাবাররুকাতসমূহ তাঁর খলিফা খাজা কুতুব উদ্দীন বখতিয়ার কাকী (রা.) কে প্রদান করেন।
রচনাবলী: খাজা (রা.) একাধারে কামিল অলি, সফল দ্বীন প্রচারক, ইমামুত্ ত্বরীক্বত, সুবক্তা ও সুলেখক হন। তাঁর রচিত পুস্তকসমূহের কয়েকটির নাম নিম্নে বিবৃত হলো।
১. আনিসুল আরওয়াহ: ফার্সী ভাষায় রচিত। এতে তিনি আপন পীর মুরশিদ খাজা ওসমান হারূনী (রা.)’র বাণীসমূহ সংকলন করেছেন। পুস্তকটি আটাশ মজলিসে বিন্যস্ত।
২. কশফুল আসরার: ফার্সী ভাষায় রচিত তাসাওউফ গ্রন্থ। ওটাকে মি’রাজে আনওয়ারও বলা হয়।
৩.কনযুল আসরার: গ্রন্থটি তাঁর পীর মুরশিদের নির্দেশে বাদশাহ শমসুদ্দীন ইলতুমিশের তালিমের জন্য দিল্লি অবস্থানকালে রচনা করেন। ওটাকে গঞ্জে আসরারও বলা হয়।
৪. রিসালায়ে তাসাওউফ: এটি ফার্সী ভাষায় রচিত তাসাওউফ বিষয়ক গ্রন্থ।
৫. দিওয়ানে মুঈন: হামদ, না’ত, মুনাজাতসহ বিভিন্ন বিষয় সম্বলিত গীতি-কবিতাগ্রন্থ।
৬.হাদীসুল মু‘আরিফ ও
৭. রিসালায়ে ওজূদিয়া- এ পুস্তকদ্বয় এখন দুস্প্রাপ্য।
মাইজভাণ্ডারী দর্শন
সাংসারিক জীবন: দ্বীনে মুস্তফা (দ.)‘র খিদমতে আত্মোৎসর্গী এ মর্দে কামিল নিজেকে নিয়ে ভাবার সময়ও পাননি। সংসার জীবনের প্রতি ন্যূনতম আসক্তিও ছিলনা। কিন্তু নবী করীম (দ.) কর্তৃক স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে সুন্নতে নববী (দ.) পালনে বাধ্য হন।
প্রথম বিবাহ: বটলী দুর্গের শাসনকর্তা ছিলেন খাজা (রা.)’র মুরীদ। তিনি এক যুদ্ধে কোন এক রাজকন্যাকে গ্রেফতার করেন। সে রাজকন্যাটি খাজার খিদমতে পেশ করলে সে ইসলাম গ্রহণ করেন। হযরত খাজা (রা.) তার নাম রাখেন আমাতুল্লাহ। তাঁকে ৫৯০ হিজরী মোতাবেক ১১৯৪ খ্রীষ্টাব্দে খাজা (রা.) স্ত্রী রূপে গ্রহণ করেন।
দ্বিতীয় বিবাহ: সৈয়্যদ অজীহ উদ্দীন (রা.) কন্যার বিষয়ে সদা চিন্তিত থাকতেন। এক রাতে তিনি ইমাম জা’ফর ছাদেক (রা.) কর্তৃক স্বপ্নাদিষ্ট হলেন যে, খাজা (রা.) কে কন্যাদান করতে। খাজা (রা.)’র নিকট স্বপ্ন বর্ণনা করলে তিনি সম্বন্ধ গ্রহণ করলেন। ৬২০ হিজরী মোতাবেক ১২২৩ খ্রীষ্টাব্দে বিবি ইসমতুল্লাহ বিনতে সৈয়দ অজীহ উদ্দীনকে বিবাহ করেন।
আওলাদ: খাজা (রা.)’র চার সন্তান, তিন ছেলে ও এক মেয়ে। (১) সৈয়্যদ জিয়া উদ্দীন (২) সৈয়্যদ হুসসামুদ্দীন (৩) সৈয়্যদ ফখরুদ্দীন ও (৪) সৈয়্যদা হাফেজা বিবি জমাল রদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুম। মাইজভাণ্ডারী দর্শন
মাইজভাণ্ডারী দর্শন
ইন্তিকাল: তিনি (রা.) ৬ রজব ৬৩৩ হিজরী ১৬ মার্চ ১২৩৩ খ্রীষ্টাব্দ সোমবার রাতে এশার নামাযের পর হুজরা শরীফে তাশরীফ নিলেন। দরাজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দিয়ে খাদেমদের প্রবেশ করতে নিষেধ করেন। দ্বার রক্ষক বাইর থেকে সারা রাত অজদাবস্থায় পা পতনের শব্দ তথা পদধ্বনি শুনতে পান। শেষ রাতে এ শব্দ বন্ধ হয়ে যায়। সুবহে সাদিকের সময় খাদেমগণ নামাযের জন্য ডাকতে যান। দরাজায় করাঘাত সত্ত্বেও না খুললে তাঁরা প্রবেশ করে দেখেন তিনি (রা.) ইন্তিকাল করেছেন। তাঁর কপাল মুবারকে লিখা রয়েছে ‘হাযা হাবিবুল্লাহি মাতা ফি হুব্বিল্লাহি’ ‘ইনি আল্লাহর বন্ধু, আল্লাহর প্রেমেই প্রাণত্যাগ করেছেন।’ যে রাত তিনি ইন্তিকাল করেছেন সে রাতে কয়েকজন আওলিয়া হুযূর (দ.) কে স্বপ্নে দেখলেন। তিনি (দ.) বললেন, ‘আমি আজ মাহবূবে খোদা মুঈনুদ্দীনকে অভ্যর্থনা জানাতে এসেছি।’ মাইজভাণ্ডারী দর্শন
খাজা (রা.) বেসাল আজমীর বাসীদের জন্য বড় শোকাবহ ঘটনা। শতসহস্র ভক্ত-মুরীদ অশ্রুসিক্ত নয়নে জানাযার নামাযে শরীক হন। তাঁর শাহযাদা খাজা ফখরুদ্দীন (রা.) নামাযের ইমামতি করেন। অতঃপর তাঁকে তাঁর হুজরা শরীফেই দাফন করা হয়।
আল্লাহ তা‘আলা এ মহামণীষীর উসিলায় আমাদের কবুল করুন।