মাওলা-ই কায়িনাত রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু
🖊আল্লামা বোরহান উদ্দীন মুহাম্মদ শফিউল বশর
(চতুর্থ পর্ব)
[মদ বিষয়ক আলোচনা]
‘উন কী পাকী কা খোদায়ে পাক করতা হ্যায় বয়াঁ,
আয়াতে তত্বহীর ছে যাহির হ্যায় শানে আহলে বায়ত।’
তাঁদের পবিত্রতার বর্ণনা করেন আল্লাহ পাক সুবহান,
আয়াতে তত্বহীরে স্পষ্ট আহলে বায়তের পূত শান। – হাসান।
আহলে বায়তের শানে অবতীর্ণ আয়াতসমূহের অন্যতম আয়াতে তাত্বহীর। ইরশাদ হচ্ছে,
انّما يريدُ اللّه ليذهب عنكم الرجس اهل البيت ويطهّر كم تطهيرا
‘ইন্নামা- য়ুরীদুল্লা-হু লিয়ুযহিবা আনকুমুর রিজসা আহলাল বায়তি ওয়া য়ুত্বাহহিরাকুম তাত্বহীরা-’ অর্থাৎ- ‘হে আহলে বায়ত! আল্লাহ-তো এটিই চান যে, তোমাদের থেকে সমুদয় অপবিত্রতা দূর করতে এবং উত্তমরূপে পবিত্র-পরিচ্ছন্ন করে দিতে।’ সূরাতুল আহযাব ৩৩ নম্বর আয়াত।
اكثر المفسرين علي انّها نزلت في على وفاطمة والحسن والحسين لتذكير ضمير عنكم
‘আকছারুল মুফাসসিরীনা আলা আন্নাহা- নাযালাত ফী অলিয়্যিন ওয়া ফাত্বিমাতা ওয়াল হাসানি ওয়াল হুসায়নি লিতাযকীরি দ্বামীরি আনকুম্’ অর্থাৎ- ‘অধিকাংশ মুফাসসিরীন এ মতের ওপর যে, এ আয়াত আলী, ফাত্বিমাহ, হাসান ও হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমের শানে অবতীর্ণ হয়েছে; যেহেতু ‘আনকুম’ সর্বনাম মুযাককর বা পুংলিঙ্গীয়। আসসাওয়া-য়িকুল মুহরিক্বাহ ১৪৩ পৃষ্ঠা।
আয়াতে আহলে বায়ত দ্বারা উক্ত চারজনকে বুঝানো হওয়াটা স্বয়ং নবী করীম (দ.)’র তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক বাণী ও কর্ম মূলে প্রমাণিত। এ বিষয়ক দু’টি হাদীস প্রথম পর্বে তথ্যসূত্রসহ বিবৃত হয়েছে। এখানে আরো কয়েকটি বর্ণনা উপস্থাপিত হল।
اخرج احمد عن ابي سعيد الخدري أنها نزلت في خمسة النبي صلي الله عليه وسلم وعلي و فاطمة والحسن والحسين –
واخرجه ابن جرير مرفوعا بلفظ انزلت هذه الاية في خمسة فيَّ وفى علي والحسن والحسين وفاطمة واخرجه الطبراني ايضًا
‘আখরাজা আহমদু আন আবী সা‘ঈদিনিল খুদরী আন্নাহা-নাযালাত ফী খামসাতিন আননবীয়্যি সাল্লাল্লা-হু আলায়হি ওয়া সাল্লামা ওয়া আলিয়্যিন ওয়া ফাতিমাতা ওয়াল হাসানি ওয়াল হুসাইনি। ওয়া আখরাজাহু ইবনু জারীরিন মারফূ‘আন বিলাফযি উনযিলাত হাযিহিল আয়াতু ফী খামসাতিন ফিয়্যা ওয়া ফী আলিয়্যিন ওয়াল হাসানি ওয়াল হুসাইনি ও ফাত্বিমাতা। ওয়া আখরাজাহুত্ ত্বাবরানিয়্যু আয়দ্বান।’
অর্থাৎ- ‘ইমাম আহমদ আবূ সাঈদ খুদরী (রা.)’র সূত্রে হাদীস সংকলন করেছেন যে, এ আয়াত পাঁচজন বা পঞ্চতনের শানে অবতীর্ণ হয়েছে; নবী করীম (দ.), আলী, ফাত্বিমাহ, হাসান ও হুসাইন। ইবনে জরীর আপন সূত্রে রাসূলুল্লাহ (দ.) থেকে এ শব্দে বর্ণনা করেছেন, এ আয়াত পাঁচজনের অর্থাৎ আমি, আলী, হাসান, হুসাইন ও ফাত্বিমাহর বিষয়ে অবতারিত। ত্বাবরানীও উক্ত হাদীস আপন গ্রন্থে সংকলন করেছেন’। সূত্র: প্রাগুক্ত।
নমস্য পাঠক! নিম্নের উদ্ধৃতি পূর্ণমনোযোগে লক্ষ্য করুন।
عن انس بن مالك رضي الله عنه قال أنّ رسول الله صلي الله عليه وسلم كان يمرُّ بباب فاطمة ستّة اشهرٍ اذا خرج لصلواة الفجر يقول الصلواة يا اهل البيت انما يريد الله ليذهب عنكم الرجس اهل البيت ويطهّر كم تطهيرًا –
‘আন আনাসিবনি মালিকিন রাদ্বিয়াল্লা-হু আনহু ক্বা-লা আন্না রাসূলাল্লা-হি সাল্লাল্লা-হু আলায়হি ওয়া সাল্লামা কা-না য়ামুররু বিবা-বি ফা-ত্বিমাতা সিত্তাতা আশহুরিন ইযা- খারাজা লিসালা-তিল ফাজরি য়াকূলু আসসালা-ত! ইয়া- আহলাল বায়তি ইন্নামা- য়ুরীদুল্লা-হু লিয়ূযহিবা আনকুমুর রিজসা আহলাল বায়তি ওয়া য়ুত্বাহহিরাকুম তাত্বহীরা-’
অর্থাৎ ‘হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (দ.)’র ছয় মাস পর্যন্ত এ উদার স্বভাব ছিল যে, যখন প্রত্যুষে ফজরের নামাযের জন্য বের হতেন ফাত্বিমাহ (রা.)’র দরজা দিয়ে যেতেন তো বলতেন, নামায! হে আহলে বায়ত! আল্লাহ-তো চানই যে, তোমাদের থেকে সর্বপ্রকার অপবিত্রতা দূর করতে এবং উত্তমরূপে পবিত্র-পরিচ্ছন্ন করে দিতে’। সূত্র: তিরমীযি শরীফ ২য় খণ্ড ১৫৬ পৃষ্ঠা, কুতুবখানা রশিদিয়্যাহ, দেওবন্দ।
يہ لفظ اہل بيت کی وه عملی تفسير ہے جو اپ صلي الله عليه وسلم نے چھ مہينے تک روزانہ فرمائی ہے – يعنی تقريبا 180 دن تک حضرت علي‘ حضرت فاطمه‘ حضرت حسن اور حضرت حسين رضي الله عنهم کو اہل بيت فرما كر صحابہ كو دكها ديا كہ ايت كريمہ ميں اہل بيت سے مراد يہی لوگ ہيں –
ইয়ে লফযে আহলে বায়ত কী বহে আমলী তাফসীর হ্যায় জূ আ-প সাল্লাল্লা-হু আলায়হি আলায়হি ওয়া সাল্লাম নে ছে মহীনে তক রূযানাহ ফরমায়ী হ্যায়। ইয়ানী তক্বরীবান এক সূ আসসী দিনতক হযরত আলী, হযরত ফা-ত্বিমাহ, হযরত হাসান আওর হযরত হুসাইন রাদ্বিয়াল্লা-হু আনহুম কো আহলে বায়ত ফরমা-কর সাহা-বাহ কো দিখা দিয়া কেঃ আয়াতে করীমাঃ মেঁ আহলে বায়ত ছে মুরা-দ এহী লোগ হ্যায়ঁ।
‘এটি আহলে বায়ত শব্দের সে আমলগত তাফসীর বা ব্যাখ্যা; যা রাসূলে আকরম (দ.) ছয় মাস পর্যন্ত নৈমত্তিক করেছেন। প্রায় ১৮০ দিন পর্যন্ত হররোজ হযরত আলী, হযরত ফাত্বিমাহ, হযরত হাসান ও হযরত হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমকে আহলে বায়ত বলে সাহাবাহ-ই কিরাম রাদ্বিয়াল্লাহ আনহুমকে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, আয়াতে আহলে বায়ত দ্বারা উদ্দেশ্য ইনারাই’।
সূত্র: তারীখে কারবালা, মাওলানা আমীন আলক্বাদেরী, ৩৪ পৃষ্ঠা, ১ নম্বর টীকা, রদ্বভী কিতাব ঘর দিল্লী -৬।
هذه الاية منبع فضائل أهل البيت النبوي لاشتمالها علي غررمّن ماثرهم والاعتناء بشأنهم حيث ابتدئت ب “انّما” المفيدة لحصر ارادته تعالي في امرهم علي اذهاب الرجس الذي هو الاثم … وتطهير هم من سائر الاخلاق والاحوال المذمومة –
‘হাযিহিল আয়াতু মাম্বাউ ফদ্বা-য়িলি আহলিল বায়তিন নববিয়্যি লিইশতিমা-লিহা- আলা গুরারিম্ মিম্ মা-ছিরিহিম ওয়াল ই’তিনা-য়ি বিশা-নিহিম হায়ছু উবতুদিয়াত বি‘ইন্নামা-’ আলমুফীদাতু লিহাছরি ইরা-দাতিহি তা‘আলা- ফী আমরিহিম আলা ইযহা-বির রিজসিল্লাযী হুয়াল ইছমু … ওয়া তাত্বহীরিহিম মিন সা-য়িরিল আখলা-ক্বি ওয়াল আহওয়া-লিল মাযমূমাহ’
অর্থাৎ ‘এ আয়াত নবী পরিবারের কৃতিত্বাদির শুভ্রতা ও তাঁদের বিষয়ে তত্ত্বাবধান ব্যাপকতা হেতু তাঁদের মর্যাদার উৎস। যেহেতু সমুদয় নিন্দনীয় অবস্থাদি ও আচরণাদি হতে পবিত্রকরণ এবং অপবিত্রতা, যা পাপ, … তা বিদূরণে আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছাকে সীমাবদ্ধকরণের উপকার প্রদায়িনী ‘ইন্নামা-’ যোগে শুরুকৃত’।
সূত্র: আস সাওয়া-য়িকুল মুহরিক্বাহ ১৪৪-১৪৫ পৃষ্ঠা।
وحكمة ختم الاية بتطهير المبالغة في وصولهم لاعلاه وفي رفع التجوز عنه‘ ثم تنوينه تنوين التعظيم والتكثير ولااعجاب المفيد الي انه ليس من جنس ما يتعارف ويؤلف –
‘ওয়া হিকমাতু খাতমিল আয়াতি বিতাত্বহীরিন আলমুবা-লাগাতু ফী ওছূলিহিম লিআ’লা-হু ওয়া ফী রাফ‘ইত তাজাওউযি আনহু ছুম্মা তানবীনুহু তানবীনুত তা’যীমি ওয়াত তাকছীরি ওয়াল ই’জা-বি আলমুফীদু ইলা আন্নাহু লায়সা মিন জিনসিন মা- য়ুতা‘আ-রাফু ওয়া য়ুয়াল্লাফু।’
‘আয়াতের সমাপ্তি তাত্বহীর বা পবিত্রকরণ শব্দে করার মাঝে হেকমত হল, পবিত্রতার চূড়ান্ত শিখরে তাঁদের উপনয়নে অধিকতর নিশ্চয়তা ঘোষণা এবং তা থেকে অবনমন বারণ। অতঃপর তার তানভীন সম্মান, আধিক্য ও বিস্ময় বোধক তানভীন; যার মর্মার্থ হচ্ছে ওই সবকিছু এক জাতীয় নয় যে, পর্যায়ক্রমিক পরিচয় করে দেওয়া হবে অথবা ধারাবাহিক সংকলন করা যাবে’। প্রাগুক্ত ১৪৫ পৃ.।
উক্ত বর্ণনালোকে সুস্পষ্ট যে, শুধু অপবিত্র বস্তু হতে তাঁদের পবিত্র করা হয়নি, বরং উত্তম আদর্শের বিপরীত সমুদয় কিছু থেকেও তাঁদের পূত করা হয়েছে; যার পরিসংখ্যান-পরিগণন অসম্ভব। স্বয়ং নবী করীম (দ.)’র সত্তাকে আয়াতের অন্তর্ভূক্তির মাধ্যমে ওই বিষয়টিকে আরো জোরালো রূপে স্পষ্ট করা হয়েছে। জিব্রাইল ও মিকাইল আলাইহিমাস সালামকে অন্তর্ভূক্ত করার বর্ণনাও দিব্যদৃষ্টিধরদের জন্য এক নিগূঢ় রহস্যের ঈঙ্গিতবহ।
‘মদ যখন মুবা-হ বা বৈধ ছিল, তখন রিজস বা অপবিত্র ছিলনা’ বলে যারা মদপানের সম্বোধন মাওলা আলী (রা.)’র প্রতি মানতে নারাজ লোকদের ‘রিজস’ এর সংজ্ঞা অজ্ঞাত অজ্ঞ লোকের কাতারে দাঁড় করিয়ে দিতে চান, তাঁদের খেদমতে আয়াতে তাত্বহীরস্থ ‘রিজস’র তাফসীর এবং আব্দুর রহমান বিন আওফের বাসভবনের ভোজন সভাপূর্বে অবতীর্ণ সূরাহ বাক্বারাহর ২১৯ নম্বর আয়াতে মনোযোগ দেওয়ার সবিনয় আবেদন রইল। তাঁদের জ্ঞাতার্থে আমরা দু’টি উদ্ধৃতি উপস্থাপন করছি।
ক. ليذهب عنكم الرجس الاثم ‘লিয়ুযহিবা আনকুমুর রিজসা আল ইছমা’ অর্থাৎ ‘তোমাদের থেকে রিজস বা অপবিত্রতা তথা ইছম বা পাপ দূর করে দিতে’। সূত্র: তানভীরুল মিক্ববা-সি মিন তাফসীরি ইবনি আব্বাসিন, ৩৫৩ পৃষ্ঠা, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, বায়রূত – লেবনান।
খ. ليذهب عنكم الرجس الاثم ‘লিয়ুযহিবা আনকুমুর রিজসা আল ইছমা’ অর্থাৎ ‘তোমাদের থেকে রিজস তথা ইছম বা পাপ দূর করে দিতে’।
সূত্র: তাফসীরু জালালাইন, ৩৪৫ পৃ. কুতুবখানা রশিদিয়্যাহ, দেওবন্দ।
উদ্ধৃতি দু’টি মর্মে স্পষ্ট যে, ‘রিজস’ বা অপবিত্রতা আপন ব্যাপক মর্মে ‘ইছম’ বা পাপকেও অন্তর্ভূক্তকারী। অর্থাৎ প্রত্যেক ইছম বা পাপ রিজস বা অপবিত্র, পরন্তু প্রত্যেক রিজস বা অপবিত্র ইছম বা পাপ নয়।
এবার আসুন, একটু খতিয়ে দেখি, মদ চূড়ান্ত হারাম ঘোষিত হওয়ার পূর্বে, এমনকি সূরাহ নিসার ৪৩ নম্বর আয়াত لاتقربوا الصلواة وانتم سكاري লা- তাক্বরাবূচ্ছালা-তা ওয়া আন্তুম সূকা-রা- বা ‘নেশাগ্রস্তাবস্থায় নামাযের নিকটবর্তী হয়োনা’ অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে মদের বিষয়ে কুরআনের কি ফায়সালা ছিল। এ বিষয়ে সকল মুফাসসিরীনে কিরাম এমনকি মদ পানের সম্পর্ক মাওলা-ই কায়িনাত রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর প্রতি জুড়ে দেওয়া পুস্তকটিতেও উল্লেখ রয়েছে যে, ইতোপূর্বে সূরাহ বাক্বারাহর ২১৯ নম্বর আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে,
يسئلونك عن الخمر والميسر – قل فيهما اثم كبيروّمنافع للنّاس اثمهما اكبر من نفعهما –
‘য়াসয়ালূনাকা আনিল খামরি ওয়াল মায়সিরি, কুল ফীহিমা- ইছমুন কবীরুওঁ ওয়া মানা-ফিউ লিন্না-সি, ইছমুহুমা- আকবরু মিন নফ‘ইহিমা-’ অর্থাৎ ‘তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, বলুন এ দু’টিতে বড় পাপ ও মানুষের জন্য উপকার রয়েছে, এ দু’টির পাপ উপকার অপেক্ষা অনেক বড়’।
আলোচ্য আয়াত মর্মে প্রমাণিত যে, মদ হারাম হওয়ার পূর্বেও তাতে اثم كبير (ইছমুন কবীরুন) বা মহাপাপ ছিল। ইতোপূর্বের তাফসীরের উদ্ধৃতি মর্মে প্রমাণিত যে, اثم (ইছম) বা পাপ মাত্রই رجس (রিজস) বা অপবিত্র; সুতরাং ইছমে কবীর বা মহাপাপ-তো রিজসে কবীর বা মহা-অপবিত্রই হবে। অতএব, এ রিজসে কবীরের সম্পর্কে মাওলা আলী (রা.)’র প্রতি যারা করেন, তাঁরা অজ্ঞ; নাকি আয়াতে তাত্বহীর ও আলোচ্য আয়াত মর্মে যারা করেননা, তাঁরা? কুরআন-সুন্নাহর জ্যোতিতে প্রাজ্ঞ-বিজ্ঞরা অনুসন্ধান করলে নিশ্চয় উত্তর পেয়ে যাবেন। আর যদি নিজের অন্তরের গতি ও আত্মম্ভরিতার আলেয়ার পিছু ছুটেন, তবে ‘বাবে হিত্তাতুন’ দিয়ে প্রবেশ সুদূর পরাহত; বরং ‘হিনত্বাতুন’ বা গম তথা রুটি রুটি জপ আর গোমরাহীর মরুদ্যানে ভবলীলা সাঙ্গ হবে।
আর যারা মুবাহ বা বৈধ কর্মের সম্বোধনে কারো মর্যাদার ব্যাঘাত ঘটেনা ভাবনায় মাওলা আলী (রা.)’র প্রতি মদ পানের সম্পর্ক করাকে নীরব সমর্থন করছেন, তাঁদের বলবো- ‘আয়াতে তাত্বহীর’ ও আয়াতে ‘ইছমুহুমা- আকবারু’ মর্মে নিজেদের ভাবনাকে আরেকটু বিস্তৃত করে নিন। ‘হাসা-নাতুল আবরা-রি সায়্যা-তুল মুকাররবীন’ প্রবাদ প্রবচনকে মনমগজে রেখে চিন্তার জগতে আরেকবার বিচরণ করে দেখুন।
মাওলা-ই কায়িনাত রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু মদ পান করেছেন প্রমাণে যারা আদাজল খেয়ে লেগেছেন, তাঁরা আল্লাহর اراده (ইরা-দাহ) বা ইচ্ছাকে ছেলেখেলা মনে করেন কিনা, জানিনা! অথচ আল্লাহর ইচ্ছা-তো হয়েই থাকে। ইরশাদ হচ্ছে, انما امره اذا ارادشئًا ان يَّقُول له كن فيكون ‘ইন্নামা- আমরুহূ ইযা- আরা-দা শাইয়ান আয়ঁ য়াকূলা লাহূ কুন্ ফায়াকূনু’
অর্থাৎ ‘আল্লাহর শান-তো এ-ই যে, যখন কিছু করতে ইচ্ছা করেন, তখন সেটার উদ্দেশ্যে হও বলেন, সেটা তৎক্ষণাৎ হয়েই যায়।’ সূরাহ য়াসীন ৮২ নম্বর আয়াত।
আল্লাহর ইচ্ছা পূরণ-অপূরণে এত্তো সন্দেহ-সংশয় আর আস্তিক্য? অংকের কোন সূত্রেই আমি হিসাবটা মেলাতে পারিনা! যাক, আমার হিসাবে সব অংক মিলবে, নিজেকে এমন পারদর্শী আমি ভাবিই-না। যোগ-বিয়োগের কতই সূত্র এখনও আমার অজ্ঞাত তার ইয়াত্তা নেই। তদুপরি ব্যক্তিগতভাবে ভাগ বিয়োগে আমার অনিহা আশৈশবের।
নবী করীম (দ.)’র বারংবারের দু‘আর ব্যাপারে তাঁদের বিশ্বাস, আবূ লাহাবের বিশ্বাসের সামনে কত্তো তুচ্ছ! আবূ লাহাব তনয় উতাইবাহর ব্যাপারে রসূলুল্লাহ (দ.) একবারই বলেছিলেন, اللهم سلّط عليه كلبًا ‘আল্লা-হুম্মা সাল্লিত্ব আলায়হি কলবান’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! তুমি তার ওপর একটি কুকুর লেলিয়ে দাও’। ব্যাস, আবূ লাহাব কোন প্রকার দ্বিধা-দ্বন্ধ ছাড়াই শঙ্কিত হয়ে পড়ে যে, ‘বাছাধনের আর রক্ষা নেই’। শেষতক রক্ষা করতে পারেওনি। পরন্তু আহলে বায়তের নাম ধরে ধরে নবী করীম (দ.) বারবার দু‘আ করেছেন তাঁদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং উত্তমরূপে পবিত্র করে পরিচ্ছন্ন করে দিতে। তদুপরিও একজন মু’মিন কী করে মদ রিজস হওয়া কুরআন মর্মে প্রমাণিত হওয়ার পরও মাওলা-ই কায়িনাত (রা.)’র প্রতি মদ পানের অপবাদ দিতে পারে?
ওই রাসূল, যার প্রতিটি দু‘আ কবূল; আহলে বায়তের ব্যাপারে তাঁর দু‘আর একটি ঝলক দেখুন।
وصح انّه صلي الله عليه وسلم جعل علي هؤلاء كساء وقال اللهم هؤلاء اهل بيتي وحامتي اي خاصتي اذهب عنهم الرجس وطهّرهم تطهيرا‘ وفي رواية انه قال بعد تطهيرا انا حرب لمن حاربهم وسلم لمن سالمهم وعدو لمن عاداهم وفي اخري القي عليهم كساء ووضع يده عليهم ثم قال : اللهم ان هؤلاء ال محمد فاجعل صلواتك وبركاتك علي ال محمد انّك حميد مجيد –
‘ওয়া সাহহা আন্নাহু সাল্লাল্লা-হু আলায়হি ওয়া সাল্লামা জা‘আলা আলা হাউলা-য়ি কিসা-য়ান ওয়া ক্বা-লা আল্লা-হুম্মা হাউলা-য়ি আহলু বায়তী ওয়া হা-ম্মাতী আয় খা-চ্ছাতী আযহাব আনহুমুর রিজসা ওয়া তাহহিরহুম তাত্বহীরা-। ওয়া ফী রাওয়া-য়াতিন আন্নাহু ক্বা-লা বা’দা তাত্বহীরা- আনা- হারবুন লিমান হা-রাবাহুম ওয়া সালমুন লিমান সা-লামাহুম ওয়া আদভুন লিমান আ-দা-হুম। ওয়া ফী উখরা- আলক্বা আলায়হিম কিসা-য়ান ওয়া ওয়াদ্বা‘আ য়াদাহু আলায়হিম ছুম্মা ক্বা-লা আল্লা-হুম্মা ইন্না হাউলা-য়ি আ-লু মুহাম্মাদিন ফাজ‘আল সালাওয়া-তিকা ওয়া বারাকা-তিকা আলা আ-লি মুহাম্মাদিন ইন্নাকা হামীদুম মাজীদুন’।
অর্থাৎ ‘বিশুদ্ধ বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (দ.) ইনাদের ওপর একটি চাদর ঢেলে দিয়ে বলেন, হে আল্লাহ! এরা আমার ঘরানা এবং আমার অন্তরঙ্গ বা বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। তাঁদের থেকে সমুদয় অপবিত্রতা দূর করে দাও এবং তাঁদের পূর্ণরূপে পবিত্র করে দাও। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তাত্বহীরা- এর পর নবী করীম (দ.) বলেছেন, আমি তাদের জন্য যুদ্ধ, যারা তাঁদের সাথে যুদ্ধ করে। আমি তাদের জন্য শান্তি, যারা তাঁদের সাথে শান্তি-সন্ধি করে। আমি তাদের জন্য শত্রুতা, যারা তাঁদের সাথে শত্রুতা করে। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, তাঁদের ওপর একটি চাদর ঢেলে দেন এবং তাঁদের ওপর হাত রেখে বলেন, হে আল্লাহ! নিশ্চয় এরা মুহাম্মদের আল বা বংশ, অতএব আলে মুহাম্মদের ওপর তোমার সালাওয়াত- বরাকাত তথা দয়া-প্রচুর্য দাও। নিশ্চয় তুমি সুপ্রশংসিত ও অতিমহান’।
সূত্র: আসসাওয়া-য়িকুল মুহরিক্বাহ ১৪৩-১৪৪ পৃষ্ঠা।
ইসলামী শরীয়তের দলীল চতুষ্টয়ের প্রধান আল কুরআনে কারীমের আলোকে আমরা তথ্য-প্রমাণ উল্লেখ পূর্বক মাওলা আলী (রা.)’র প্রতি মদ পানের নিসবত বা সম্পর্ক অসম্ভব হওয়ার সবুত উপস্থাপন করেছি। আরো সাক্ষ্য প্রমাণের প্রয়োজনীয়তা না থাকলেও প্রতিপক্ষের বাড়াবাড়ির উত্তরে ওই বিষয়ে আলোচনার প্রয়াস ব্যক্ত করে আজকের জন্য ইতি টানছি।
‘মা‘আসসালাম’।
চলমান…
1 thought on “মাওলা-ই কায়িনাত রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু”