খলীফাতুল্লাহিল আকরম গাউসুল্লাহিল আ’যম মাইজভাণ্ডারী (রাদ্বি.)’র প্রভু-মিলন আলিঙ্গন
🖊 আল্লামা বোরহান উদ্দিন মুহাম্মদ শফিউল বশর
فدعاه ربه شائقا‘ معراجه كرسوله
فأجابه له سرعة‘ حمدا على أفضاله
ডাকিলেন তবে তাঁরে প্রভু তাঁর মিলন-প্রেরণায়,
মিলন-আলিঙ্গন তাঁর রাসূলুল্লাহর মিলনপ্রায়,
সাড়া দিলেন তবে তিনি তাঁর তরে অতি ক্ষিপ্রতায়,
তাঁর দয়া-কৃপা ওপর প্রশংসা কৃতজ্ঞ অবস্থায়।
-আল্লামাহ মক্ববূল।
অত্যাসন্ন যিলক্বা’দের সপ্তবিংশ রজনী, গাউসুল আ’যম মাইজভাণ্ডারী (রাদ্বি.)’র বিসাল (বিছাল) শরীফের স্মৃতিধন্য মহিমাময় রাত। আজ থেকে ১১৮ বছর পূর্বে (চান্দ্রবর্ষ গণনায়) ১৩২৩ হিজরীর ২৭ যিলক্বা’দ মঙ্গলবার রাত দেড় ঘটিকায় তিনি (রা.) আপন প্রভুর সান্নিধ্যে গমন করেন। তাঁর বিসাল শরীফের স্মৃতিধন্য রজনীতে তাঁর দরবারে আমাদের ফরিয়াদ,
‘হ্যায় সগে দরবার নালাঁ আপকে শয়দা,
বাহরে অছলত দরপেঃ তেরে গাউসে মাইজভাণ্ডার’
-আল্লামাহ আব্দুল হাদী।
ایک مہینہ آگے جناب فضیلت مآب مولانا شاہ سید امین الحق صاحب دام لطفہ خلف جناب مولانا سید عبد الکریم صاحب فرہادآبادی مرحوم کو رویاے صادقہ میں کسی نے کہا کہ آیندہ چاند کی ستائسویں تاریخ کو معراج محمدی صلی اللہ علیہ وسلم ہے چنانچہ مولانا موصوف صاحب کو شوال کے چاند میں یہ خبر ہو گیا تھا اور شہر ذیقعدہ کی ستائسویں تاریخ کو واقعہ و صال باکمال وقوع میں آئی ہے رموز خواب اسرار مآب ضمائر مہرنظائر اولوالالباب پرروشن ومبرہن ہے ورنہ کور دلاں بے بصر کیلئے کیا سنگ اور کیا درپن
‘(বিসাল [বিছাল] শরীফের এক মাস পূর্বে মর্যাদাবান জনাব মাওলানা শাহ সৈয়্যদ আমীনুল হক্ব ছাহেব দামা লুৎফাহু পিতা মাওলানা সৈয়্যদ আব্দুল করীম ছাহেব ফরহাদাবাদী মরহূমকে সত্যস্বপ্নে কেউ বললেন যে, আগামী চাঁদের সাতাশ তারিখ মি’রাজে মুহাম্মদী (দ.)। উক্ত মাওলানা ছাহেব শাওয়াল চাঁদে এ সংবাদ জ্ঞাত হন আর যিলক্বা’দের সাতাশ তারিখে বিসালে বাকামাল বা পরিপূর্ণ মিলন সংঘটিত হয়। গুপ্ত রহস্যধর স্বপ্নের রহস্যাবলী জ্ঞানীদের কাছে সুস্পষ্ট ও প্রমাণবলিষ্ট; অন্যথায় হিংসুক অন্ধের জন্য পাথরও কি দর্পণও কি!’ (আঈনায়ে বারী ফি তরজুমাতি গাউসিল্লাহিল আ’যম মাইজভাণ্ডারী (রাদ্বি.) ২২১-২২২ পৃষ্ঠা)।
রাজদ্রোহীতা হতে আত্মরাক্ষার জন্য যুগনিয়ন্তা খলীফাতুল্লাহর পরিচয়-পরিচিতি জানা অত্যাবশ্যক। আজকের নিবন্ধ যুগনিয়ন্তা খলীফাতুল্লাহ পরিচিহ্নিত করার প্রয়াসে নিবেদিত। এ বিষয়ে গাউসুল আ’যম শাহানশাহে বাগদাদ (রা.)’র বিবৃতি প্রণিধানযোগ্য।
قلبى فى مكنون علم الله عز وجل فى زاوية عن الخلق‘ ملك على باب الحق سبحانه‘ اظهره قبلة لكل وارد من اهل زمانى‘ واصل من وراء الاغلاق على بساط الانس والقرب جالس‘ والملك الفرد له مؤانس مطلع على اسرار الخليقة ناظرالى وجوه القلوب قدصفاه الحق عن دنس رؤية سواه حتى صار لوحا ينقل اليه ما فى اللوح المحفوظ‘ وسلم اليه ازمة امور اهل زمانه وصرفه فى عطائهم ومنعهم‘ وقال له بلسان الغيب انك اليوم لدينا مكين امين‘ واقعده مع ارواح اهل اليقين على دكة بين الدنيا والاخرة‘ بين الخلق والخالق بين الظاهر والباطن‘ بين ما يدرك وبين ما لا يدرك‘ وجعل له اربعة وجوه: وجه ينظربه الى الدنيا‘ ووجه ينظربه الى الاخرة‘ ووجه ينظربه الى الخلق‘ ووجه ينظربه الى الخالق‘ وصيره خليفة فى ارضه وعوالمه‘ فاذا اراد به امرا قلبه من صورة الى صورة‘ ومن هيئة الى هيئة فاطلعه على خزائن الاسرار لانه مفردالملك ونائب انبيائه‘ وامين مملكته فى وقته‘ وله فى كل يوم وليلة ثلاثمائة وستون نظرة اليه –
অর্থাৎ- ‘আমার ক্বলব বা অন্তরাত্মা সৃষ্টি থেকে দূরে এক কিনারায় আল্লাহ তা’আলার জ্ঞানের আবাসে গোপন অবস্থানে রয়েছে। তা আল্লাহ সুবহানাহুর দরজায় এক ফিরিশতারূপ ব্যক্তিত্ব, যাকে আমার যমানাবাসীর মধ্য থেকে তথায় গমনকারী প্রত্যেকের জন্য ক্বিবলারূপে প্রকাশ করেছেন; যা বদ্ধ দরজাসমূহ ভেদ করে মিলন লাভকারী রূপে একান্ত ভালবাসা ও নৈকট্যের বিছানায় উপবিষ্ট। আর তা এমন অন্যতম একক বাদশাহ, যার পরস্পর সমকক্ষ এমন একজন বন্ধু রয়েছেন, যিনি সৃষ্টির রহস্যাবলী জ্ঞাপনকারী; অন্তরসমূহের অবস্থাদি-অভিনিবেশ-অভিমুখ অবলোকনকারী। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে আল্লাহ ভিন্ন কিছু দেখার পঙ্খিলতা থেকে পরিচ্ছন্ন করে দিয়েছেন; এমনকি তিনি এরূপ তক্তিতে পরিণত হয়ে গেছেন, যাতে ‘লওহে মাহ্ফূয’র সমগ্র বিষয় অবিকল প্রতিফলিত হয়। তাঁর যমানাবাসীর সমুদয় কার্যাবলীর নিয়ন্ত্রণ তাঁকেই সোপর্দ করলেন এবং তাদের থেকে যাকে ইচ্ছা স্বাধিকারে দান করার ও বঞ্চিত করার ক্ষমতা তাঁকে দিলেন। আর গায়বের জবানে তাঁকে বললেন- ‘আজ তুমি আমার নিকট মর্যাদাশালী আমানতদার’। তাঁকে আহলে ইয়াক্বীন বা সম্পূর্ণ সংশয়মুক্তদের সমূহ আত্মার সাথে দুনিয়া ও আখিরাতের মধ্যবর্তী, সৃষ্টি ও স্রষ্টার মধ্যবর্তী, ব্যক্ত ও গুপ্তের মধ্যবর্তী এবং বোধ্য ও দুর্বোধ্যের মধ্যবর্তী উচ্চাসনে বসিয়েছেন। তাঁর জন্য চারটি চেহারা বানিয়েছেন: একটি দিয়ে দুনিয়া, একটি দিয়ে আখিরাত, একটি দিয়ে সৃষ্টিকুল এবং একটি দিয়ে স্রষ্টাকে দেখেন। আর তাঁকে নিজ জমিন ও জগতসমূহের মাঝে খলীফাহ্ বা প্রতিনিধি রূপে বিবর্তন করেন। যখন তাঁর বিষয়ে ইচ্ছা করবেন, তখন এক আকার থেকে অপর আকারের দিকে এবং এক অবস্থা থেকে অপর অবস্থার দিকে তা পাল্টে দেবেন। অতএব তাঁকে রহস্যাবলীর সমূহ ভাণ্ডার সম্পর্কে অবগত করালেন; কারণ তিনি সমগ্র রাজত্ব ব্যাপী একমাত্র একজন, যিনি তাঁর সমস্ত নবীগণের নায়েব বা স্থলাভিষিক্ত এবং নিজ সময়কালে তাঁর বাদশাহীর আমানতদার। আর প্রতি দিনরাত আল্লাহর তিনশ’ ষাটটি বিশেষ দৃষ্টি তাঁর প্রতি হয়ে তাকে।” (বাহজাতুল আসরার ওয়া মা’দিনুল আন্ওয়ার, বায়রূত লেবনান ৫৫ পৃষ্ঠা; আল ক্বাহেরাহ মিসর ৬৪ পৃষ্ঠা)।
হযরত গাউসুল আ’যম জীলানী (রাদ্বি.) বর্ণিত বিবৃতিতে পরিচিহ্নিত সত্তা গাউসুল আ’যম মাইজভাণ্ডারী (রাদ্বি.)ই হন; তা তাঁর বাণী দ্বারা প্রতিভাত। যেমন- তিনি রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন (ক) ‘আমার নাম পীরানে পীর সাহেবের নামের সাথে সোনালী অক্ষরে লিখা আছে’ (বেলায়তে মোতলাকা- ১০৫ পৃষ্ঠা)। (খ) ‘রাছুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার হস্ত মোবারকে দু’টি তাজ (বর্ণনান্তরে টুপী) ছিল; একটি ‘তাজ’ আমার মাথায় পরিয়ে দেন, অপরটি আমার ভাই পীরানে পীর শায়খ আবদুল ক্বাদির জীলানী সাহেবের মাথায় পরানো হয়’। (গ) ‘আমি একদিন আমার ভাই পীরানে পীর সাহেবের সহিত কাবা শরীফে ঢুকিয়া দেখিতে পাইলাম, রছুল করিম (দ.) এর ‘ছদর’ মোবারক (ছিনা) এক অসীম দরিয়া, আমরা উভয়ে উহাতে ডুব দিলাম।’ (জীবনী ও কেরামত-২০০ পৃষ্ঠা)।
শাহানশাহে বাগদাদ (রাদ্বি.)’র বর্ণনামতে وصيره خليفة فى ارضه وعوالمه‘ ‘আর তাঁকে নিজ জমিন ও জগতসমূহের মাঝে খলীফাহ্ বা প্রতিনিধি রূপে বিবর্তন করেন’ মর্মে প্রতিভাত যে শাহানশাহে মাইজভাণ্ডার (রাদ্বি.) আপন যুগবৃত্তের যুগনিয়ন্তা খলীফাতুল্লাহ্।
খলীফাতুল্লাহর তা’যীম-সম্মান বাদ দিয়ে প্রভু ভজন ইবলীসের তৌহীদ দর্শনেরই নামান্তর। অ হ্যাঁ বগলে ইট মুখে শেখ ফরিদ মার্কা তা’যীম-সম্মান ফলপ্রদ হবেনা; যেহেতু তিনি রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ناظرالى وجوه القلوب ‘অন্তরসমূহের অবস্থাদি-অভিনিবেশ-অভিমুখ অবলোকনকারী’। আল্লাহ সকলকে বুঝার তৌফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমীন।
মা’আসসালামা।