তাসাওউফ বা আধ্যাত্মিকতার কতিপয় রীতি-নীতি ও সুন্নতে নববী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লাম।

-আল্লামা বোরহান উদ্দীন মুহাম্মদ শফিউল বশর
বিসমিল্লাহির রাহমানির রহীম। আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন। ওয়াস্‌সালাতু ওয়াস্‌সালামু আলা রহমতুল্লিল আ’লামীন, ওয়া আলা আলিহীত্‌ ত্বয়্যেবিনাত্‌ ত্বাহেরীন, ওয়া আসহাবীহিল হাদিয়্যীনাল মাহদিয়্যীন, ওয়া ওলামায়ি উম্মতিহীর রাসিখীন, ওয়া আওলীয়ায়ি মিল্লাতিহীল কামিলীনাল্‌ মুকাম্মিলীন ওয়া আলায়না মা’আহুম আজমাঈন; আম্মাবদু।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামা’র পুরো জিন্দেগী মানবতার জন্য অনুসরণীয়-অনুকরণীয় আদর্শ। পবিত্র কুরআনের সূরা আহযাবের ২১ নং আয়াতে বিঘোষিত, “নিশ্চয় তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামা’র সত্তায় রয়েছে অনুসরণীয় উত্তম আদর্শ।” উক্ত আয়াতে প্রতিভাত হয় যে, নবী করীম রউফুর রহীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামা’র নবুয়তের জাহেরী ঘোষণাপূর্ব ও পর উভয় জীবনই অনুসরণীয়-অনুকরণীয়। শুধু প্রচারকার্য সূচনাত্তোর ২৩ বছরের জীবনে নয়, বরং সূচনাপূর্ব সুদীর্ঘ চল্লিশ বছরের জিন্দেগীতেও রয়েছে বিবেকগ্রাহ্য আদর্শ। কালামুল্লাহ শরীফে বিঘোষিত, আমি তোমাদের মাঝে ইতোপূর্বে (দ্বীন প্রচার শুরুর আগে) জীবনের একটা অংশ অতিবাহিত করেছি; তোমাদের কি বিবেক নেই? (সূরা ইউনুস ১৬ নং আয়াত সংক্ষেপিত)।
জ্ঞাতব্য যে, বিবেকবানের কোন কাজই উদ্দেশহীন হতে পারেনা। মানুষের প্রতিটি কর্মের পেছনেই কোন না কোন উদ্দেশ্য অন্তর্নিহিত থাকে। যেমন- ক্ষুধা নিবারণের জন্যই আহার করা হয়; পূর্ব থেকে উদরপূর্ণ থাকলে খাদ্যের প্রয়োজনই পড়েনা। অসুখ করলেই তো নিরাময়ের জন্য ঔষধ সেবন করতে হয়; আগ থেকে সুস্থ থাকলে তো স্বাদে কেউ ঔষধ গিলে না। অনুরূপ আত্মার পরিশুদ্ধি ও হৃদয়ের পবিত্রতা অর্জনের নিমিত্তেই আধ্যাত্মিক সাধনা পরিশ্রম। মানুষ যদি প্রবৃত্তির কদর্যতা ও অন্তরের অপবিত্রতা হতে পূত-পবিত্র হয়ে পূর্ব থেকেই আত্মশুদ্ধি ও পবিত্রতার চূড়ান্ত পরিপূর্ণতায় উপনীত হয়, তবে তার জন্য আধ্যাত্মিক সাধনার কিবা দরকার? সুতরাং সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন দেখা দেয় যে, যে রাসূলের রূহানী অবস্থানের শুরু ত্বরীক্বত ও বেলায়তের শীর্ষচূড়ারও বহু উর্ধ্বে; তিনি সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামা যেহেতু উম্মতের জন্য প্রত্যেক পছন্দনীয় কাজের বাস্তব নমুনা পেশকারী, সেহেতু তিনি সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামা তাসাওউফের মূলনীতি প্রণয়ন ও আপন জীবনে বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে গিয়েছেন। ওইসব মূলনীতির ভিত্তিতেই সূফীয়ায়ে কেরাম নিজেদের জীবনের কর্মপন্থা নির্ধারণ করেছেন। তাসাওউফ মনগড়া কোন মতবাদ নয়, বরং কুরআন-সুন্নাহ উৎসারিত কর্মপন্থাই। আলোচ্য নিবন্ধে সুন্নতে নববী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামা’র আলোকে কতেক সূফীয়ানা রীতি-নীতির নিরীক্ষণের প্রয়াস পাবো; যাতে প্রমাণিত হয় যে, তাসাওউফ নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামা’র আদর্শ বহির্ভূত কোন নীতি পদ্ধতির নাম নয়, বরং নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামা’র আদর্শেরই যথার্থ অনুসরণ-অনুকরণ।
খাল্‌ওয়াত নশীনী বা নির্জনতায় সাধনাব্রত: কোলাহল বিবর্জিত নির্জন-নিরিবিলি স্থানে একাকী প্রভুর ধ্যানে নিমগ্ন হয়ে থাকা সূফীদের অন্যতম রীতি। সূফীগণের সাধনার এ পদ্ধতি নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামা’র পবিত্র রীতি-নীতি বিশেষতঃ হেরার নির্জনতায় ধ্যান বিভোর মৌনতা, আল্লাহ ভিন্ন সবকিছু থেকে গুপ্তে-ব্যক্তে বিচ্ছিন্ন হয়ে গভীর মনোযোগে আল্লাহর স্মরণ ও একাগ্র উপাসনারই অনুসরণ-অনুকরণ। আল্লামা হালবী বিরচিত আস্‌সিরাতুল হালবীয়্যা  প্রথম খণ্ড ৩৮২ পৃষ্ঠায় বিবৃত, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামা বাল্যকাল থেকেই ইবাদত ও নির্জনতা প্রিয় ছিলেন।’ রিসালতের প্রকাশকাল ঘনিয়ে এলে তাঁর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামা নির্জনতা প্রিয়তার রুচি আরো প্রবলতর হয়। উম্মুল মু’মেনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ‘অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামা’র নিকট নির্জনতা পছন্দনীয় হয়ে ওঠে এবং তিনি সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামা হেরার নির্জনতায় উপবেশন পূর্বক কয়েক রাত পর্যন্ত ইবাদতে নিমগ্ন হয়ে থাকেন’। (বুখারী শরীফ, প্রথম খণ্ড, ২ পৃষ্ঠা) সিরাতে ইবনে হিশাম ২৩৪ পৃষ্ঠায় বিবৃত হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ‘আল্লাহ তা’আলা হযূর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামা’র অন্তরে নির্জনতা কাম্য করে দেন। অতএব তাঁর নিকট নির্জনতায় একাকীত্বের চেয়ে পছন্দনীয় অন্য কিছুই ছিল না।’ মোল্লা আলী ক্বারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামা’র নির্জনস্থানে সাধনাব্রতের মেয়াদ তিন থেকে সাত দিন, কখনো ত্রিশ থেকে চল্লিশ দিন পর্যন্ত দীর্ঘ ছিল। সূফীয়ায়ে কেরামের চিল্লা বা চল্লিশ দিনব্যাপি নির্জন স্থানে সাধনাব্রত পালন নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামা’র ওই রীতিরই অনুসরণ’। (মিরকাতুল মাফাতীহ, ৫ম খণ্ড, ৪০১ পৃষ্ঠা)।
পশমী খিরকহা বা  তালি দেওয়া পশমের কাপড় পরিধান: পশমী পোষাক পরিধান তাসাওউফের আবশ্যকীয় শর্ত না হলেও প্রথম ও দ্বিতীয় যুগের সূফীগণ বিনয়-নম্রতার প্রকাশ ও কঠোর সাধনার সুবিধার্থে ওই পোশাকই পছন্দ করতেন এবং পরতেন। সূফ বা পশমী পোশাক পরিধান হেতু সূফীয়ায়ে কেরামের সূফী নামকরণ মর্মীয় একটি অভিমতও তাসাওউফ ইতিহাসে প্রচলিত রয়েছে। তাঁদের এ রীতিও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামা’র সুন্নত থেকে সংগৃহীত। মুগীরাহ বিন শুবাহ থেকে বর্ণিত, ‘অতঃপর তিনি সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামা স্বীয় চেহরা মোবারক ও পবিত্র হস্তদ্বয় ধৌত করেন; এমন অবস্থায় তাঁর পরনে পশমী জুব্বা ছিল’। (বুখারী শরীফ, ২য় খণ্ড, ৮৬৩ পৃষ্ঠা) আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নীয়ায় বর্ণিত, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামা পশমী পোশাক পরিধান করতেন।’ উম্মুল মু’মেনীন আয়েশা সিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ‘আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামা’র জন্য পষমের কাপড় বুনেছি, যা তিনি সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামা পরিধান করেছেন।’
ইসমে যাত বা ‘আল্লাহু-আল্লাহু’ যিক্‌র: কুরআনে পাকের মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা আপন মাহবুব সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামাকে ইসমে যাত বা আল্লাহু যিক্‌রের শিক্ষা দেন। আল কুরআনের সূরা মুয্‌যাম্মিলের ৮নং আয়াতে ঘোষিত, ‘এবং আপন প্রতিপালকের নাম স্মরণ করুন, আর সবকিছু থেকে নির্লিপ্ত হয়ে তাঁরই প্রতি একাগ্র হোন’। কাযী সানা উল্ল্যাহ পানিপথি রাহমাতুল্লাহি আলায়হি উক্ত আয়াতের আলোকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের পর মত ব্যক্ত করেন যে, ‘আলোচিত ব্যাখ্যার ভিত্তিতে উক্ত আয়াতে ইসমে যাত বা আল্লাহু বারংবার স্মরণের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।’ (তাফসীরে মায্‌হারী, ১০ম খণ্ড, ১১১ পৃষ্ঠা) জিক্‌র দু’ধরণের; মৌখিক ও আন্তরিক। সূফীয়ায়ে কেরাম এ দু’ধরণের যিক্‌র’র দীক্ষা দেন; যাতে মানুষ আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারে। কেননা আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ করবো।’ (সূরা বাকারা ১৫২নং আয়াত সংক্ষেপিত) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামা বলেন, ‘তোমরা যখন জন্নাতের বাগিচা দেখবে, তখন তাতে বিচরণ করবে’। কোন একজন জিজ্ঞাসা করলেন, হে রাসূল! জন্নাতের বাগান কি? প্রত্যুত্তরে তিনি সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামা  বললেন, যিক্‌রের মজলিস।’ (তিরমিযী শরীফ, ৩৫০৯ ও ৩৫১০ নং হাদীস)
বিভিন্ন ত্বরীক্বায় বিশেষতঃ মাইজভাণ্ডারী ত্বরীক্বায় শয়নে-জাগরণে, মনে-মনে, দমে-দমে অনুচ্চ স্বরে যিক্‌রের সাথে সাথে দলবদ্ধভাবে উচ্চৈঃস্বরে যিক্‌র মাহফিল আয়োজনের রীতি প্রচলিত রয়েছে। এটা নূতন কোন প্রথা নয়, বরং উপরিউক্ত হাদীসের মর্মানুসারে জন্নাতের বাগানের বিচরণই বটে। আল্লাহু আল্লাহু যিক্‌রের গুরুত্ব-মাহত্ম্য ও হাদীস মর্মে সুপ্রতিভাত  যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামা বলেন, ‘আল্লাহু আল্লাহু বলেন, এমন কারো ওপর ক্বিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে না।’ অর্থাৎ ক্বিয়ামত অনুষ্ঠানের পূর্বেই সকল মু’মিন তিরোহিত হবেন; শুধু বেঈমানদের ওপরই ক্বিয়ামতের ভয়াবহতা আবর্তিত হবে। (মুসলিম শরীফ, কিতাবুল ঈমান)
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ যিক্‌রপবিত্র কুরআনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামাকে নেতি ও ইতিবাচক যিক্‌র তথা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু যিক্‌রের শিক্ষা দেন। ‘রাব্বুল মুশরিক্বি ওয়াল মাগরিবি লা ইলাহা ইল্লাহ হুয়া’ অর্থাৎ ‘তিনি (আল্লাহ) পূর্ব ও পশ্চিমের পালনকর্তা, তিনি ভিন্ন কোন উপাস্য নেই’। (সূরা মুয্‌যাম্মিল ৯নং আয়াত সংক্ষেপিত)। কাযী সানা উল্ল্যাহ পানিপথি এ আয়াতাংশের তাফসীরে লিখেন, ‘আল্লাহর এ বাণীতে সৃষ্টির সাথে আল্লাহ তা’আলাকে ব্যাপিত ধ্যান ও নেতি ও ইতিবাচক যিক্‌রের প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। সর্বোতভাবে এ দু’টি বিষয় বেলায়তে পরিপূর্ণতার অধিকারীদের ত্বরীক্বার ভিত্তি’। (তাফসীরে মাযহারী, ১০ম খণ্ড, ১১১ পৃষ্ঠা) ত্বরীক্বতের মশায়িখগণ মুরীদ-ভক্তদের যিক্‌রের এ শিক্ষাই দেন। নফী ও নেতিবাচক ও ইসরাত বা ইতিবাচক যিক্‌র তথা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু এর মাঝে বহু নিগূঢ় রহস্য গুপ্ত রয়েছে; যা শিষ্যরা প্রকৃত শায়খ বা গুরুর দীক্ষা মতে যিক্‌রের প্রাক্কালে অনুভব করে থাকেন। হাদীসে পাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামা এটাকে উত্তম যিক্‌রে আখ্যায়িত করে এর ফযিলত সমূহ বর্ণনা করেছেন। মাইজভাণ্ডারী ত্বরীক্বায় দমে দমে এ যিক্‌র করার উদাত্ত আহ্বান দেখতে পাওয়া যায়। গাউসুল আ’যম মাইজভাণ্ডারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুল বারী’র বিশিষ্ট খলিফা আল্লামা আবদুল হাদী কাঞ্চনপুরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু লিখেছেন, 
দমে দমে জপরে মন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ,
ঘটে ঘটে আছে জারি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।
ঘটের সারেঙ্গি বিছে; প্রেম রতনের তার লাগাইছে,
মাওলাজির নাম জপ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। 
সপ্ত রঙি টঙি বিছে; রূহধন কামিনী নাচে,
প্রেমেতে বিভোর জপ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।
মনযিলে মনযিলে মন; গাউসে ধনের সিংহাসন,
হাদীরে তলকিন করে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।
যওকে সাম্‌’আ: সূফীয়ায়ে কেরামদের মাঝে সাম’আ উপভোগের প্রবণতা পরিলক্ষিত। পক্ষান্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামা থেকে বিভোরতা, তন্ময়তা, প্রসন্নতা, প্রফুল্লতা ইত্যাদি প্রকাশ পেত। তিনি সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামা না’তিয়া কালাম শুনার জন্য রীতিমতো মাহফিলের ব্যবস্থা করতেন। হযরত হাস্‌সান বিন সাবিত রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে নাত পড়ার নির্দেশ দিতেন। উম্মুল মু’মেনীন আয়েশা সিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামা মসজিদে হাস্‌সান বিন সাবিত রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর জন্য মিম্বর স্থাপন করতেন; যাতে দাঁড়িয়ে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামা’র পক্ষ থেকে গর্ব প্রকাশ করতেন। অথবা বর্ণনাকারী বলেছেন, বিরোধীদের সমালোচনার জবাব দিতেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামা বলতেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা হাস্‌সানকে রূহুল কুদস বা পবিত্র আত্মার মাধ্যমে সাহায্য করেন, যতক্ষণ তিনি আল্লাহর রাসূলের পক্ষ থেকে গর্ব করতে থাকেন। অথবা প্রত্যুত্তর দানে রত থাকেন।’ (মিশকাতুল মাসাবীহ, ৪০৩ পৃষ্ঠা) 
উল্লেখ্য যে, সূফীয়ায়ে কেরামের আচরিত রীতি-নীতি গভীর মনোযোগে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তাঁদের প্রতিটি কর্মের পক্ষে কুরআন-হাদীসের জোরালো দলীল রয়েছে। সুতরাং, তাঁদের কোন কর্মকাণ্ড বাহ্যিক দৃষ্টিতে শরীয়তের সাথে বৈসাদৃশ্য ঠেকলেও হারাম কিংবা বিদ্‌আত মর্মীয় আপত্তি অনুচিৎ। এ বিষয়ে মহাগ্রন্থ আল কুরআনের সূরা ক্বাফ্‌-এ বিবৃত মুসা আলায়হিস্‌সালাম ও খিজর আলায়হিস্‌সালাম’র ঘটনা আমাদের জন্য শিক্ষণীয়। আল্লাহ তা’আলা সকলকে বুঝার তৌফিক দানকরুন। আমিন বিহুরমতি সাইয়্যেদিল মুরসালীন সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামা।
ফেসবুক মুক্তিধারা CLICK ME

Sharing is caring!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *