✍️ বোরহান উদ্দিন মুহাম্মদ শফিউল বশর
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা অনুমোদিত, শায়খ সা’দী রাহমতুল্লাহি আলাইহি রচিত না’ত বা নবীবন্দনা যুক্ত একটি দুরূদ আমাদের দেশের সর্বস্তরের মুসলিমের কাছে খুব প্রিয়। আমাদের ইসলামী জলসায় এই দুরূদ আবহমান কাল ধরে প্রচলিত এবং বক্তা শ্রোতাদের কোরাস কন্ঠে গীত হয়ে চলেছে। মীলাদ মাহফিলে ওয়ায়েয যখন সুর দিয়ে দুরূদটি পড়েন, তখন উপস্থিত ছোট-বড় সবাই তাঁর সঙ্গীত মাধুরিতে রাসূলে আকরম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ভালবাসায় বিমোহিত হন। তাঁরাও সমস্বরে পাঠ করেন বিন্দুর মাঝে সিন্ধুর ব্যঞ্জনাযুক্ত এই চৌপদী। অনেকেই হয়তো শুদ্ধ উচ্চারণ করতে পারেন না, অনেকেই অর্থও বুঝেন না, তবুও এতে যেই আবেগের সৃষ্টি হয়, তা সত্যিই বিস্ময়কর। ইতিবৃত্ত ও অর্থ জানা থাকলে আরো অধিক আবেগ – অনুরাগের সৃষ্টি এবং অধিক পুণ্য লাভ সুনিশ্চিত। সুতরাং এই দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করছি।শায়খ সা’দী রাহমতুল্লাহি আলাইহি রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর স্তুতিতে رباعي বা চৌপদী রচনা করছিলেন। তিনি তিন পংক্তি যথা بلغ العلىٰ بكماله، كشف الدجىٰ بجماله،حسنتت جميع خصاله،(বালাগাল উলা বি-কামালিহি,কাশাফাদ্দুজা বি-জামালিহি,হাসুনাৎ জামিয়ু খিসালিহি) পর্যন্ত রচনা করলেন, কিন্তু অনেক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও যথার্থ চতুর্থ পংক্তি মেলাতে পারছিলেননা। বিষয়টি তাঁকে অত্যন্ত চিন্তিত করে তুলেছে। তিনি দিবারাত্র ভেবে চলছেন। এমতাবস্থায় একদা রাতে তন্দ্রা এলে স্বপ্নে দেখলেন, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা স্বয়ং উপস্থিত। তিনি আলাইহিস্সালাতু ওয়াস্সালাম বললেন, সা’দী! তুমি যে তিন পংক্তি রচনা করেছ, একটু শুনাও। “তিনি বালাগাল উলা বি-কামালিহি,কাশাফাদ্দুজা বি-জামালিহি,হাসুনাৎ জামিয়ু খিসালিহি” পর্যন্ত পাঠ করে নীরব হয়ে রইলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা বললেন, “সাল্লূ আলায়হি ওয়া আলিহি” যুক্ত করে নাও। এভাবে সা’দীর চৌপদী পূর্ণাঙ্গতায় রূপ পেল। بلغ العلىٰ بكماله، كشف الدجىٰ بجماله، حسنتت جميع خصاله، صلوا عليه وآله- উচ্চারণঃ বালাগাল উলা বি-কামালিহি,কাশাফাদ্দুজা বি-জামালিহি,হাসুনাৎ জামিয়ু খিসালিহি,সাল্লূ আলায়হি ওয়া আলিহি।
ফার্সী অনুবাদঃبہ واسطۂ کمال خود بہ مرتبۂ بلند رسید، و با جمال نورانئ خود تاریکیہا را برطرف کرد، همہ خویہا و صفات او زیباست؛ بر او و خاندانش درود بفرستید.
উর্দু অনুবাদ:پہنچے بلندیوں پہ ، وہ ﷺ اپنے کمال سے،چھٹ گئے اندھیرے آپ ﷺ کے حسن و جمال سے،آپ کی سبھی عادات مبارکہ اور سنتیں بہت پیاری ہیں،آپ ﷺ پر اور آپ ﷺ کی آل پرصلاۃ و سلام ہو –
বঙ্গানুবাদ: স্বয়ং পূর্ণতায় সবার উপরি,আঁধার সব দূর চমকে যারি,সর্ব সৌন্দর্য স্বভাব যারি,তাঁর পরে দুরূদ ও আল উপরি। – আহাদী।
এ চৌপদীর ভাব নিয়ে কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচনা করেন,”কুল মাখলূক্ব গাহে হযরত,বালাগাল উলা বি-কামালিহি,আঁধার ধরায় এলে আফতাব,কাশাফাদ্দুজা বি-জামালিহি।রৌশনীতে আজও ধরা মশগুল,তাইতো ওফাতে করি না কবুল।।হাসানাতে আজও উজালা জাহান,হাসুনাৎ জামিয়ু খিসালিহি।নাস্তিরে করি নিতি নাজেহাল,জাগে তাওহীদ দীন-ই কামাল; খুশবুতে খুশি দুনিয়া বেহেশত,সাল্লূ আলায়হি ওয়া আলিহি।”আলোচিত ঘটনা প্রবাহে সুস্পষ্ট যে, এই চৌপদীর প্রতিটি শব্দ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা অনুমোদিত। এ না’তযুক্ত দুরূদ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দরবারে গৃহীত। তাইতো মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র আবালবৃদ্ধবনিতা সকলের কন্ঠে এই চৌপদী অনুরণিত। এতে বাড়াবাড়ি কিংবা শিরকের গন্ধ পাওয়া মানে আপন ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের প্রদাহ গ্রস্ততার লক্ষণ। হ্যাঁ, এটি দুরূদ শরীফ কিনা, সেই প্রশ্ন হয়তো তোলা যেতে পারে। পরন্তু প্রায় সাড়ে সাতশ’ বছর ধরে প্রচলিত যে চৌপদী স্তুতি গীতি নিয়ে আকাবির উলামায়ে ইসলামের কেউই কোন আপত্তি করেননি বরং পড়েছেন, সেটির বিরুদ্ধে কুফরের অভিযোগ চরম অজ্ঞতা মূর্খতা বৈ কিছু না।তাদের আপত্তির সারমর্ম, ‘নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা নিজের পূর্ণতায় সর্বোশীর্ষে পৌঁছেননি, তাঁকে আল্লাহ তা’আলা নিয়েছেন ; সুতরাং কামাল বা পূর্ণতার সম্বন্ধ – সম্পর্ক তিনি আলাইহিস্সালামের প্রতি করা শির্ক- কুফর’।তাদের কাছে আমার জিজ্ঞাসা, সন্তান কে দান করেন? আপনাদের উত্তর যদি আল্লাহ হয়, তবে দেখুন জিবরাঈল কি বলছেন, قَالَ إِنَّمَا أَنَا رَسُولُ رَبِّكِ لِأَهَبَ لَكِ غُلَامًا زَكِيًّا‘সে বললঃ আমি তো শুধু তোমার পালনকর্তার প্রেরিত, যাতে তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করবো’সূরাতুল মারিয়াম ১৯ নাম্বার আয়াত।এ আয়াতে জিবরাঈল সন্তান দানের সম্বন্ধ নিজের প্রতি করেছেন, নাঊযুবিল্লাহ তিনি কি কুফর-শির্ক করলেন? রূপক অর্থে কিংবা দৃশ্যত দিক বিবেচনায় এই সম্বন্ধ করা যদি যথার্থ হয়, তবে ঐ চৌপদী স্তুতিতে কেন হবেনা।