গাউসে ধনের প্রেম সাগরে ঈমান রত্ন ভেসে যায়’

গাউসে ধনের প্রেম সাগরে ঈমান রত্ন ভেসে যায়’

✍️মুক্তিধারা ডেস্ক

আল্লাহর নিয়ামতকে মূল্য দিলে, সকৃতজ্ঞতায় স্মরণ করলে, তদপরে স্তুতিবাদ-প্রশংসাবাদে রসনা মুখরিত আর অন্তর হর্ষিত হলে দয়ানুগ্রহে প্রবৃদ্ধি-প্রাচুর্য আনয়নের নিশ্চিত ঘোষণা যেমন পাক কুরআনে বিবৃত, তেমনি অবমূল্যায়ন অকৃতজ্ঞতা-অবজ্ঞা-অবহেলা করা হলে কঠিন শাস্তির প্রজ্ঞাপনও একই আয়াতে বর্ণিত।
সর্বজন বিদিত যে, অলিয়ুল্লাহদের অস্তিত্ব আল্লাহর অনুগ্রহই বটে। হাদীসে পাকের ভাষ্য মতে তাঁদের কল্যাণেই উম্মতে মুহাম্মদী ‘আলা সাহিবিহাসসালাতু ওয়াস্ সালাম’র বালা-মসিবত নিবারিত, আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষিত, ভূমি হতে শষ্য অঙ্কুরিত হয়।
আল্লাহর মাহবূবীয়্যতে বরিত সত্তাদের শ্রবণ-দর্শন-চলন- কর্তৃত্বকরণ ইত্যাদি আল্লাহর কুদরত। আল্লাহর দরবারে তাঁদের চাওয়া কখনো প্রত্যাখ্যাত হয়না। বরং অতি-অবশ্যই কবুলের ঘোষণা হাদীসে কুদসীতে নবী (দ.)’র পবিত্র মুখে আল্লাহ দিয়ে রেখেছেন।
আশরাফুল মাখ্লূকাত মানবের মর্যদার সাথে অন্য কোন সৃষ্টির তুলনা হতে পারে না। পরন্তু স্বভাব-দোষে চতুষ্পদ জন্তু অপেক্ষাও হীনতর হওয়ার কথা যেমন কুরআন শরীফে রয়েছে, তেমনি তাদের উৎকৃষ্টতার বয়ানেও কুরআন-সুন্নাহ ভরপুর। “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন যে, আমি রাসূলুল্লাহ (দ.) কে দেখেছি, খানায়ে কা’বা তাওয়াফ করছেন আর ফরমাচ্ছেন, ‘ওই সত্তার শপথ! যার কুদরতের করায়াত্ত্বে আমার প্রাণ; আল্লাহ তা‘আলার নিকট একজন মু’মিনের ইজ্জত-হুরমত তোমার ইজ্জত-হুরমত অপেক্ষা মহত্ত্বর’ (ইবনু মাজাহ ২৯০ পৃষ্ঠা)।
‘এক ব্যক্তি একটি গোত্রের ইমামতি করছে, অতঃপর ক্বিবলার তথা মসজিদের ক্বিবলার দিকস্থ দেয়ালে থুথু ফেলেছে আর রাসূলুল্লাহ (দ.) দেখছেন। নামায শেষ করলে রাসূলুল্লাহ (দ.) তার গোত্রীয় লোকদের বললেন, সে যেন তোমাদের ইমামতি না করে। অতঃপর সে নামায পড়াতে চাইলে লোকেরা বারণ করতঃ রাসূলুল্লাহ (দ.)’র নিষেধ বাণীর সংবাদ দেয়। সে রাসূলুল্লাহ (দ.)’র নিকট বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি (দ.) হ্যাঁ বলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয় রাসূলুল্লাহ (দ.) তাকে বলেছেন, তুমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দিয়েছ’ (আবু দাউদ শরীফের উদ্ধৃতিতে মেশকাতুল মাসাবীহ শরীফ ৭১ পৃষ্ঠা) কা’বার দিকে থুথু ফেললে যদি ইমামতি দুরস্ত না হয়, অলিয়ুল্লাহদের শানে কটাক্ষকারীর ইমামতি কি বৈধ হতে পারে? ইবনু মাজাহ শরীফের উদ্ধৃতিতে বিবৃত বর্ণনা মতে-তো কা’বা অপেক্ষা মর্দে মু’মিনের মর্যাদাও আল্লাহর নিকট মহত্ত্বর। 
অলিয়ুল্লাহগণের শানে কটাক্ষ-কটুক্তিকারী ব্যক্তি মাত্রই জাহেল; হোকনা সে মোল্লা-মুন্সী, মাওলানা-মৌলভী, মুফাস্সির-মুহাদ্দিস-মুফতী, হাজ্বী-গাযী, নামাযী। ইরশাদ হচ্ছে, ‘রহমান তথা আল্লাহর (বিশেষ) বান্দা, যারা ভূপৃষ্ঠে বিনয়ের সাথে আস্তে আস্তে চলে এবং অজ্ঞ লোকেরা অহেতুক কথা বললে বলেন, সালাম। এবং যারা আপন প্রভুর জন্য সিজদাহ ও ক্বিয়ামে রাত কাটায়’ (সূরা ফুরক্বান ৬২, ৬৩ নং আয়াত)।
আল্লাহর বন্ধুদের শত্রুতার মাধ্যমে যারা আল্লাহর সাথে শত্রুতা করে, তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহ তা‘আলা যুদ্ধ ঘোষণা করে রেখেছেন। আল্লাহর বন্ধুদের শত্রুতা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন শান-মান সংকোচিত করা, সমালোচনা করা, অবদান অস্বীকার করা, রীতি-নীতি তথা ত্বরীক্বার বিরোধীতা করা আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতা-কর্তৃত্ব অস্বীকার ইত্যাদি। 
আল্লাহর দেওয়া চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে জগতের কেউই জয়ী হতে পারেনা। যে বা যারা জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে এ চ্যালেঞ্জ নিয়েছে, সবাই লাঞ্ছিত, অপদস্থ, অপমানিত সর্বোপরি আল্লাহর ক্ষোভানলে পরকালে নরকাগ্নির উপযুক্তই হয়েছে। আরিফ রূমী (রা.) যথার্থই বলেন, 
‘হুব্বে  দরবেশাঁ কলীদে জন্নাতাস্ত, দুশমনে ইশাঁ সযায়ে লা’নতাস্ত’
অর্থাৎ ‘ফকীর-দরবেশের প্রেম-ভালবাসা জন্নাতের চাবি আর তাদের শত্রুদের গ্রীবায় শোভা পায় লানত বা অভিশাপ’। 
রূমী (রা.)’র উক্ত মন্তব্য কুরআন-সুন্নাহর দলীলে বলিষ্টই বটে। পরন্তু বাস্তব জীবনের হাজারো ঘটনায় ওই প্রমাণ আরো শক্তিশালীরূপে সত্যায়িত। 
একজন অলীর শত্রুতা আর বন্ধুত্বের যদি এমন তিরষ্কার-পুরস্কার হয়; তবে গাউসুল আ’যমের বেলায়তো অনুমানই চলেনা। গাউসুল আ’যম মাইজভাণ্ডারী (রাদ্বি.)’র প্রেম-ভালবাসা, ভক্তি-শ্রদ্ধার পরিণতিতে হিন্দু বারই, বৌদ্ধ ধননজয়ের সফলতাসহ অগণিত-অসংখ্য ভাগ্যহতের সৌভাগ্য মণ্ডিত হওয়ার বিষয় যেমন প্রমাণিত, তেমনি বেয়াদবীর কারণে বেলায়ত হারানোর ঘটনাও সংঘটিত। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহতভাবে চলমান। সুতরাং সাফল্য প্রত্যাশীদের প্রতি মকবুল কাঞ্চনপুরী (রা.)’র ভাষায় আহ্বান রইল,
‘গাউসে ধনের প্রেম সাগরে ঈমান রত্ন ভেসে যায়;
ধনী হতে সাধ থাকে যার হঠাৎ করে নিতে আয়।
সে সকলের শিরোমণি প্রেমাকাশের দিনমণি,
ঈমান জ্যোতে করে ধনী যে মিশেছে নূরী পায়।
সাফল্য জীনব আর সাফল্য নয়ন তার,
তাঁর নূরী পদ যেবা জীবনে দেখিতে পায়।
আল্লাহ তা‘আলার মহান দরবারে, নবী আকরম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়াসাল্লাম’র উসিলায় অলিয়ুল্লাহগণের অনুশীলিত ইসলাম জানার-মানার তৌফিক কামনা করছি। 

আমীন বিহুরমাতি সৈয়্যিদিল মুরসালীন সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া ‘আলা আলিহী ওয়া সাল্লামা ওয়া বিবরকতি গাউসিল আ’যম মাইজভাণ্ডারী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু।  

পরিশেষে গাউসুল আ’যম শাহানশাহে মাইজভাণ্ডার রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু’র ১১৫ তম উরসে পাক উপলক্ষে সর্বস্তরের মাইজভাণ্ডারী আশিক্বগণের প্রতি রইল আন্তরিক মুবারকবাদ।

Sharing is caring!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *