উরসে পাকে হাদীয়ে যমান (রাদ্বি.)
মহান ১১ রজব ০৩ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার
আশহুরে হুরুম বা বিশেষ মর্যাদান্বিত পবিত্র মাহে রজব আবারো আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছে। পবিত্র হাদীস শরীফ সূত্রে এ মাসের প্রথম রাতটিও জেগে ইবাদতকারীর জন্য মুক্তির সুসংবাদবহ। পবিত্র কুরআন মাজীদ ও হাদীস শরীফ সূত্রে বিশ্বমানবতার মুক্তির কাণ্ডারী, সর্বজগতের করুণার আধার, অনাবিল শান্তির পরশ বিতরণকারী, মাহবুবে খোদা, নবীবর হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামা’র মি’রাজ শরীফের স্মৃতিধন্য এ মাসের ২৬ তারিখ দিনগত ২৭ তারিখের পবিত্র রজনী। ঐতিহাসিক সূত্রে সৈয়্যদুনা হযরত ইমাম জা’ফর সাদিক্ব (১৫ রজব), হযরত ইমাম মূসা কাযিম (২৫ রজব), হযরত ইমাম আবুল হাসান আসক্বরী (২ রজব), হযরত সালমান ফার্সী (১০ রজব), হযরত খাজা হাসান বসরী (১ রজব), হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (৬ রজব) ও হাদীয়ে যমান হযরত হারূনুর রশীদ (১১ রজব) রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমসহ অসংখ্য মহান সত্তার বিসাল শরীফ স্মারক এ পবিত্র মাহে রজব। এমনকি তৎপূর্বকালীন বর্বরতার যুগে পর্যন্ত এ মাসের সম্মান-মর্যাদা লক্ষ্যে যুদ্ধ বিরতি পালিত হতো। ধর্মীয় মূল্যবোধে ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠায় পুরোধা সত্তা সুলতানুল হিন্দ খাজা গরীব নওয়ায মুঈনুদ্দীন চিশতী (রাদ্বি.)’র স্মৃতি দীপ্তে এ উপমহাদেশের মানুষ এক অনন্য আধ্যাত্মিক চেতনায় উদ্দীপ্ত।
সেই সাথে মহান ১১ রজব “সুন্নীয়ত ও মাইজভাণ্ডারী ত্বরীক্বা দর্শনের যুগশ্রেষ্ট কাণ্ডারী হাদীয়ে যমান গাউসুল ওয়াক্ত কাযী সৈয়্যদ হারুনুর রশীদ (রাদ্বি.)’র” বিসাল বার্ষিকী উরসে পাক দীপ্তে আমরা অধিকতর উদ্ভাসিত হওয়ার অবকাশে ধন্য।
এ জনপদের অনেকেরই জানা যে, হাদীয়ে যমান (রাদ্বি.) হন প্রমাণিত অসংখ্য কশফ-কারামাতের অধিকারী একজন উচ্চস্তরের কামিল-মুকাম্মিল ওলীয়ুল্লাহ। হযরত গাউসুল আ’যম মাইজভাণ্ডারী (রাদ্বি.)’র ত্বরীক্বা-দর্শনালোকে আলোকিত ও ধারাবাহিক বিকশিত অসংখ্য ওলীয়ে কামিলীন-মুকাম্মিলীনের অন্তর্গত তিনি এক সমুজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। হযরত গাউসুল আ’যম মাইজভাণ্ডারী (রাদ্বি.)’র বিশিষ্ট খলীফা, গাউসে যমান, পেশোয়ায়ে ফাদ্বিলা, তাজে ফখরে আরিফাঁ, রুকনে আ’যমে সুন্নিয়াঁ, শায়খুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমীন হযরতুল আল্লামা সৈয়্যদ আমীনুল হক্ ফরহাদাবাদী (রাদ্বি.)’র তিনি খাতিমুল খুলফার বৈশিষ্ট্যে মহিমান্বিত খলীফা হন। ধর্ম, দর্শন, ত্বরীক্বা, মানবতা ও সৃজনশীলতা ইত্যাদির শিক্ষা- দীক্ষা দানে তিনি এক সুবৃহতাঙ্গিক বহুমুখী প্রতিষ্ঠান রূপেই বিকশিত। সুদীর্ঘ ৮৮ বছর তথা হিজরী সন মোতাবেক ৯১ বছর বয়সকাল পর্যন্ত ধর্ম-দর্শন-ত্বরীক্বার হিদায়তকার্য আঞ্জাম দিয়ে আলোকিত বহু মানব সন্তান তৈরী করে এবং সে হিদায়ত ধারাকে গতিশীলতার শক্তিতে উজ্জীবিত রেখে ১১ রজব ১৪৩২ হিজরী, ১৪ জুন ২০১১ খ্রীস্টাব্দ, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮ বাংলা, মঙ্গলবার সুবহে সাদিকের সময় বিসাল শরীফ আলিঙ্গন করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন অর্থাৎ “নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্যই এবং নিশ্চয় আমরা তাঁর নিকট প্রত্যাবর্তনকারী।” এ আয়াত মর্মে আমরা সকলেরই ইহ-পরকালীন সফল- সার্থক জীবন কামনা করি।
এ পবিত্র মাসের আগমনে মানব-চিত্ত ব্যাকুল হয়ে ওঠে পরম প্রিয় প্রভুর মিলনের আকুলতায়। পার্থিব মোহ-মায়ার শিকল ছিড়ে ওড়ে যেতে চায় অসীমের পানে, মিশতে চায় পরমাত্মার সনে। হৃদয় হতে নিঃশব্দে উৎসরিত হতে থাকে,
‘পাখা ঝাড়, ধূলা ছাড়, পরিষ্কার হও একবার;
আর্শের কাঙ্গুরা পরে চল এবে মাটি ছাড়ি’।
মাহে রজবের এ চেতনা যদি অপর এগারটি মাস অবধি মনোপ্রাণে জাগরুক থাকে, তবে ইহ-জাগতিক স্বার্থের দ্বন্ধ, হিংসা-বিদ্বেষ, ধন-ঐশ্বর্যের মোহ, ঘৃণা-নিন্দা, গর্ব-অহঙ্কার এক কথায় প্রবৃত্তির চাহিদা চরিতার্থের বিকর্ষণে মহাপ্রভুর প্রেমাকর্ষণে মানবাত্মার চরম উৎকর্ষ যেমন সাধিত হবে-তেমনি যাবতীয় সংঘাত-হানাহানিও বিদূরীত হবে।
প্রভু ভিন্ন সবকিছুর বন্ধন ছিন্ন করার রজবীয় আহ্বানে যথাযথ সাড়া দানে সক্ষম হলেই ইবাদত-বান্দেগী, জীবন-মরণ, মিত্রতা-বৈরিতা, চলন-বলন, আচার-আচরণ, সভ্যতা-সংস্কৃতি সবকিছুই আল্লাহর সন্তুষ্টি ঘিরে আবর্তিত হবে। চিত্তের অশান্তি রূপান্তরিত হবে প্রশান্তিতে। সন্তুষ্ট ও সন্তুষ্টিত হয়ে সাধারণ বান্দার পর্যায় হতে আল্লাহর বান্দায় অন্তর্ভূক্তি ও মিলনের আহ্বান তথা পরমাত্মায় প্রত্যাবর্তনের নিমন্ত্রণ লাভে জীবন ধন্য হবে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে প্রশান্ত প্রাণ! আপন প্রতিপালকের দিকে সন্তুষ্ট ও সন্তুষ্টি-অর্জিত অবস্থায় প্রত্যাগমন কর। অতঃপর আমার বিশেষ বান্দায় এবং আমার জান্নাতে (মিলন আবাসে) প্রবেশ কর’। (সূরা ফজর ২৭-৩০ নং আয়াত)
পরিশেষে রজবীয় সার্বিক চেতনায় উদ্ভাসিত হয়ে ধন্য হোক বিশ্ব মানবতা। আল্লাহ তা’আলা তাঁর হাবীব (দ.) ও হাবীবের প্রিয়জন সকলের সদক্বায় কবুল করুন। আমীন।
সকলের প্রতি আন্তরিক মোবারকবাদ এবং আগামী ১১ রজব ০৩ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার হারুয়ালছড়ি দরবার শরীফে উরসে পাকে হাদীয়ে যমান (রাদ্বি.) উপলক্ষে দাওয়াত রইল।