চিন্তকদের চিন্তা বন্ধ্যত্ব কাটবে কবে?

চিন্তকদের চিন্তা বন্ধ্যত্ব কাটবে কবে?

✍️ বোরহান উদ্দিন মুহাম্মদ শফিউল বশর 

নবীনরা নব নবীনের গান গেয়ে মহাশ্মশান সজীব করবেন, এ প্রত্যাশা জাতির চিরদিনের। মহাশ্মশান সজীব করার পরিবর্তে বাম না চেনা ডেকা গরুর মতো নেকড়ের ভুরি ভোজন হতে চলায় জাতি  চরম শঙ্কিত। যারা নবীনদের নিয়ে স্বপ্ন দেখেন, তাদের যৌক্তিক চাওয়া পূরণ না করতে পারলেও অন্তত তাদের হতাশ করা থেকে বিরত থাকাতো জরুরি।
সিন্নি খাওয়া যেমন পাগলের কাজ নয়, তেমনি পাগল হওয়াও সিন্নিখোরের সাধ্যাতীত। খঞ্জনের নাচ শিখতে গিয়ে কাকের খঞ্জ হয়ে যাওয়া হেরে খঞ্জন গঞ্জন আঁখি দরবেশদের নগমাঃ বা সংগীত আর রাক্ব্স বা নৃত্য নিয়ে কটাক্ষ কটুক্তি চিন্তা বন্ধ্যত্ব বৈকি!
মিলন মুহূর্তে দরবেশগণ কেন নৃত্য করেন,তা তাঁদেরও অজানা,কিন্তু তাঁরা যে প্রেমাস্পদের সামনেই নাচছেন; সেটার ওপরই তাঁদের গর্ব অহঙ্কার। নৃত্য যার তার কর্ম নয়; নৃত্যের জন্যেও জিগর লাগে। সহস্র লাঞ্ছনা ভর্ৎসনা উপেক্ষা করে, মৃত্যুভয় পায়ে ঠেলে প্রকাশ্য বাজারে, তরবারির নীচে, কাঁটা কিংবা শুলির ওপর নাচার সৎসাহস লাগে।  খাজা উসমান হরনী (হারূনী) মতান্তরের সৈয়দ উসমান মারওয়ান্দী ওরফে লাল শাহবায ক্বলন্দরের নিম্নোক্ত গীতি এখানে প্রণিধানযোগ্য।
نمی دانم کہ آخر چوں دمِ دیدار می رقصم
مگر نازم بہ ایں ذوقے کہ پیشِ یار می رقصم
تو ہر دم می سرائی نغمہ و ہر بار می رقصم
بہ ہر طرزِ کہ می رقصانیَم اے یار می رقصم
تُو آں قاتل کہ از بہرِ تماشا خونِ من ریزی
من آں بسمل کہ زیرِ خنجرِ خوں خوار می رقصم
بیا جاناں تماشا کن کہ در انبوہِ جانبازاں
بہ صد سامانِ رسوائی سرِ بازار می رقصم
اگرچہ قطرۂ شبنم نہ پویَد بر سرِ خارے
منم آں قطرۂ شبنم بہ نوکِ خار می رقصم
خوش آں رندی کہ پامالش کنم صد پارسائی را
زہے تقویٰ کہ من با جبّہ و دستار می رقصم
منم عثمانِ ہرنی کہ یارے شیخ منصورم
ملامت می کند خلقے و من بر دار می رقصم
উক্ত গীতির গীতিকার ওই দু’জনের যেই হোন না; তাঁদের কেউই জ্ঞানে গুনে, শরাফত কামালিয়্যাতে, সর্বোপরি মাযহাব মিল্লাতের খেদমতে আজকের  স্কলারদের চেয়ে অনেক উর্ধ্বের বৈ নীচের ছিলেন না।
আকাবিরদের কালামের মর্ম সূত্রে যে কোন কবি গীতিকারের উক্তি বুঝতে যত্নবান হওয়া বাঞ্ছনীয়। বুঝতে অক্ষম হলে আমার বোধের অগম্য বলাই নিরাপদ ; ফায়সালা শুনিয়ে দেওয়া নয়।
গান গীতি কবিতায় ব্যবহৃত শব্দ ব্যঞ্জনাধর্মী; তাতে শব্দের আভিধানিক অর্থ ভিন্ন কবির অভিপ্রেত অন্য এক গূঢ় অর্থের দ্যোতনা থাকে।
ক. যেমন জামীর এ পংক্তিতে “সালমা” ।
”احنً شوقا الی دیار لقیت فیہا جمال سلمیٰ“
খ. গাউসুল আ’যম শাহানশাহে বাগদাদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বিরচিত হামদের নিম্নোক্ত পংক্তির “ফিৎনাঃ আঙ্গীয”।
” فتنہ انگیز مشو کاکل مشکیں مکشائے ،
تاب زنجیر نہ دارد دل دیوانۂ ما “
গ. আমীর খসরূর না’তের নিম্নোক্ত পংক্তির “সরা পা আফতে দিল”।
” پیری پیکر نگارے سرو قدے لالہ رخسارے،
سراپا آفت دل بود شب جائے کہ من بودم “
যে কোন বিষয়ে ধীরতা অবলম্বন করে সিদ্ধান্তে পৌঁছা মঙ্গলজনক, ক্ষিপ্রতায় সমূহ ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষত আকাবিরগণ যে সকল বিষয়ে নীরবতা পালন করেছেন, সে সব বিষয়ে বুঝে সমঝে কথা বলা জরুরি। হাদীসে পাকের বর্ণনায় এসেছে,
عن أنس بن مالك رضي الله عنه عن النّبيّ صلّى الله عليه وسلّم: ” التّأنّي من الله والعجلة من الشّيطان”رواه أبو يعلى.
অর্থাৎ আনাস বিন মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, “ধীরতা আল্লাহর পক্ষ থেকে আর ক্ষিপ্রতা শয়তানের।” হাদীসটি আবূ ইয়া’লা সংকলন করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলার নিকট বান্দার মুখের বুলি নয়, বরং অন্তরের ভক্তি বিশ্বাসই গ্রহণযোগ্য। ইরশাদ হচ্ছে,
وفى حديث النعمان بن بشير زيادة : ( ثم قال من شدة الفرح اللهم أنت عبدي وأنا ربك أخطأ من شدة الفرح ) رواه مسلم .
 يشير الحديث إلى أنّ الله سبحانه وتعالى لا يحاسب العبد على الألفاظ والأقوال التي تصدر منه دون قصد ، فالرّجل قال من شدّة الفرح : ( اللهم أنت عبدي وأنا ربك ) فظاهر العبارة كفرٌ ، لكنّ العبرة بما وقر في قلبه وما أراده في نفسه
অর্থাৎ “এবং নু’মান বিন বশীরের হাদীসে “অতঃপর খুশির আতিশয্যে বলল, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা, এবং আমি তোমার প্রভু’ খুশির প্রবলতায় ভুল করেছে, অতিরিক্ত রয়েছে। হাদীসটি ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন।
হাদীস এ দিকে ইঙ্গিতবহ যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বান্দার মুখনিঃসৃত অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দাবলি ও উক্তিসমূহের হিসেবে নিকেশ করেন না। অতএব  উক্ত বান্দার খুশির আধিক্যের উক্তি “হে আল্লাহ তুমি আমার বান্দা এবং আমি তোমার প্রভু” এর বাহ্যিক ভাষ্য কুফর; পরন্তু ধর্তব্য হল, যা তার হৃদয়ে স্থির আর মনে উদ্দেশ্য করে ছিল।
এখানে মাওলানা রূমীর মাসনবী শরীফের দ্বিতীয় দপ্তরে সংকলিত হযরত মূসা আলাইহিস্সালাম ও রাখালের ঘটনা ইসরাঈলী রাওয়ায়ত হলেও সাক্ষ্য রূপে প্রণিধানযোগ্য।
وحی آمد سوئے موسیٰ از خدا
بندۂ ما را ز ما کردی جدا
تو برائے وصل کردن آمدی
نے برائے فصل کردن آمدی
تا توانی پا منہ اندر فراق
کابغض الاشیا عندی الطلاق
ہر کسے را سیرتے بنہادہ ایم
ہر کسے را اصلاحے دادہ ایم
در حق او مدح در حق تو ذم
در حق او شہد و در حق تو خار
در حق او نیک در حق تو بد
در حق او ورد در حق تو خار
در حق او نیک در حق تو بد
در حق او خوب در حق تو رد
ما بری از پاک و ناپاکی ہمہ
از گراں جانی و چالاکی ہم
من نکردم امر تا سودے کنم
بلکہ تا بر بندگاں جودے کنم
ہندیاں را اصلاح ہند مدح
سندیاں را اصلاح سند مدح
من نگردم پاک از تسبیح شاں
پاک ہم ایشاں شوند و در فشاں
ما بروں را ننگریم و قال را
ما دروں را بنگریم و حال را
ناظر قلبیم اگر خاشع بود
گرچہ گفت لفظ نا خاضع بود
زاں کہ دل جوہر بود گفتن از
پس طفیل آمد عرض جوہر غرض
چند ازیں الفاظ و اضمار و مجاز
سوز خواہم سوز با آں سوز ساز
آتشے از عشق در جاں بر فروز
سر بہ سر فکر و عبارت را بسوز
موسیا آداب داناں دیگر اند
سوختہ جاں و رواناں دیگر اند
عاشقاں را ہر زماں سوزید نیست
بردہ ویراں خراج و عشر نیست
در خطا گوید و را خاطی مگو
گر بود پرخوں شہید آں را مشو
خوں شہیداں را از آب اولیٰ تر ست
ایں خطا از صد صواب اولیٰ ترست
در درون کعبہ رسم قبلہ نیست
چہ غم ار غواص را پا چیلہ نیست
تو ز سرمستاں قلاؤ و زی مجو
از رفو مر جامہ چاکاں را مگو
ملت عشق از ہمہ ملت جداست
عاشقاں را مذہب و ملت خداست
لعل را گر مہر نبود باک نیست
عاشق از دریائے غم غم ناک نیست
مأخذ :
کتاب : مثنوی مولوی معنوی (دفتر دوم) (Pg. 173)
আশা করি, আমাদের বিজ্ঞ চিন্তক মহল আপন চিন্তা কক্ষের দরজা জানালা বন্ধ করে না রেখে উন্মুক্ত করবেন এবং প্রকৃত খোদা প্রেমিকদের প্রেমের সুবাতাসে আপন হৃদয়ও একটু সুগন্ধিত করে নিবেন।

Sharing is caring!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *