মুরশিদে করীম হাদীয়ে যমান গাউসুল ওয়াক্ত রাদ্বিয়ানহুল্লাহুল বারীর ত্বাকরীর

চলিত ভাষায় রূপান্তর: মঈনুদ্দীন মুহাম্মদ মামুনুর রশীদ

[বি. দ্র.: ১৯৮৭ সনের ১২ রবিউল আওয়াল আঞ্জুমানে তৌহীদ বতোফায়লে রশীদের উদ্যেগে হারুয়ালছড়ি গাউসিয়া রহমানিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত জশনে জুলূসে ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা  আলায়হি ওয়াসাল্লাম মাহফিলে সভাপতির ভাষণে প্রদত্ত ত্বাকরীরের চুম্বকাংশ]
[পর্ব-এক: সৃষ্টি রহস্য]
খুৎবা, দুরূদ-সালাম ও সম্ভাষণোত্তর ইরশাদ করলেন,
‘মারহাবা আয় ক্বাসিদে ত্বয়্যারি মা,
মীদেহী হার দম খবর আয্ ইয়ারি মা’।
(মারহাবা! হে আমার বার্তাবাহক পাখি (রূহ)! দাও সর্বদা আমার প্রেমাস্পদের (আল্লাহর) সংবাদ।)
আমি দীর্ঘ আলোচনা করবোনা। আমি একটি আয়াত তিলাওয়াত করেছি। ‘ওয়ামা খালাক্বতুল জ্বিন্না ওয়াল ইনসা ইল্লা লিইয়া’বুদূন’। আল্লাহ রাব্বুল ইযযত ইরশাদ করছেন ‘আমি জ্বিন ও ইনসান জাতিকে বানাতামনা, বানিয়েছি কেবল মাত্র আমার ইবাদত করার জন্য- আমাকে চেনার জন্য’। (সূরা যা-রিয়াত ৫৬ নং আয়াত) আবার ‘লাক্বাদ কাররামনা বনী আদমা’ অবশ্য আমি আদমের ফরযন্দকে সম্মান-মর্যাদা দান করেছি বলে ইনসান জাতিকে আলাদা করে দিয়েছেন। তাহলে বুঝা যায় মানব-শ্রেষ্ঠত্বের কারণ ইবাদত নয়। অতএব মানব শ্রেষ্ঠত্বের হেতু ও আল্লাহকে চিনতে গেলে কিছু কথা আমাদের বুঝতে হবে, না বুঝলে আমরা আল্লাহ চিনব কেমনে, আল্লাহ চেনার পন্থা ধরব কিভাবে?
আল্লাহ তা’আলা হাদীসে কুদসীতে ইরশাদ ফরমান, ‘কুনতু কনযান মখফিয়ান’। হাদীসে কুদসী হল আল্লহর কালাম, রাসূল (দ.)’র জবানে পাকে। এটা বুঝতে আপনাদের কষ্ট হচ্ছে। কারণ আল্লাহর কথা রাসূলে পাকের জবানে বের হল কিভাবে। আমি বুঝালেও এগুলি আপনারা বুঝবেন না। কাজেই এটুকু বুঝুন যে, কুরআন হচ্ছে যেটা ‘বিওয়াসিতায়ে জিব্রাঈল’ জিব্রাঈল (আ.)’র মাধ্যমে আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূলুল্লাহ (দ.)‘র ওপর অবতীর্ণ হয়েছে। হাদীসে কুদসীতে জিব্রাঈল, মিকাঈল, ইস্রাফীল কেউ নেই। এটা ‘বিলাওয়াসিতাহ’ সরাসরি আল্লাহ ও তাঁর হাবীবের মধ্যকার কথোপকথন। সরকারে দু’আলম (দ.)’র নিজস্ব বাণী হল হাদীস।
উক্ত হাদীসে কুদসীতে ইরশাদ হচ্ছে, ‘কুনতু কনযান মখফিয়ান ফাআহবাবতু আন উযহিরা আও উ’রিফা বিযাতি ওয়া সিফাতি ফাখালাকতুল খলকা’ আমি (আল্লাহ) পুশিদা (গুপ্ত) খনি ছিলাম, যখন যাত (সত্তা) ও সিফাত (গুণাবলী) সহ প্রকাশ অথবা পরিচয় হতে ভালবাসলাম; তখন সৃজন করলাম, এক বিশেষ সৃষ্টি।
আল্ কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘ইন্নামা-আমরুহূ-ইযা-আরাদা শাইয়ান আঁয়য়াক্বূলা লাহূ কুন ফায়াকুনা’ আল্লাহর শানতো এ যে, তিনি যখন কোন কিছু করতে ইচ্ছা করেন, তখন সেটা লক্ষ্যে বলেন হও, অতএব তখনি তা হয়ে যায়। (সূরা ইয়াসীন ৮২ নং আয়াত)।
যখন আল্লাহ আল্লাহই ছিলেন, তিনি ছাড়া আর কিছুই ছিলনা, তখন আত্মপ্রকাশের প্রেম জেগে ওঠল। ওই প্রেমের হিল্লোলে তরঙ্গিত সাগরের প্রেমের মৌজে প্রেমের উচ্ছ্বাসে আপন জ্যোতি লক্ষ্যে বল্লেন ‘কুন মুহাম্মদা’ মুহাম্মদ বা পরম প্রশংসিত সত্তা হও। হাদীসের বর্ণনায় রয়েছে, ইয়া জাবির! ইন্নাল্লাহা তা‘আলা ক্বাদ খালক্বা ক্বাবলাল আশিয়ায়ি নূরা নবীয়্যিকা মিন নূরিহী’ হে জাবির! নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা সকল সৃষ্টির পূর্বে তোমার নবীর নূর তাঁর (আল্লাহর) নূর হতে সৃজন করেছেন’। (কুস্তলানীর আল্ মাওয়াহিবুল লাদুনীয়া ১ম খণ্ড ৫১ পৃষ্ঠা; হালবীর আসসিরাতুল হালবীয়্যা ১ম খণ্ড ৫০ পৃষ্ঠা) আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, ‘ক্বাদ জা-আকুম মিনাল্লাহি নূরুওঁ ওয়া কিতাবুম মুবীন’ নিশ্চয় তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে নূর আর্থাৎ মুহাম্মদ মুস্তফা (দ.) ও সুস্পষ্ট কিতাব বা কুরআন মজীদ এসেছে। (সূরা আলমায়িদাহ ১৫ নং আয়াত)।
অতঃপর হাদীসে জাবির আলোক সকল সৃষ্টি নবী (দ.)’র নূরের কিরণ হতে হওয়ার আলোচনা করে মুস্তফা (দ.)’র আবুল আরওয়াহ বা রূহসমূহের পিতা হওয়া, আদম (আ.)’র আবুল বশর বা মানবজাতির পিতা হওয়া, নবী (দ.) আদমযাদা আবার আদমের মূল হওয়া, দুয়ের তফাৎ, আয়াতে মীসাকের আলোকে নবীগণের অঙ্গিকার, মুস্তফা (দ.)’র ওপর ঈমান আনয়ন ও সকল নবীর কলিমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ’ হওয়া এবং নবীগণ কর্তৃক রাসূলে পাকের আগমন সুসংবাদ দেওয়া ও সকল আসমানী কিতাবে নবীর প্রশংসা উচ্চারিত হওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেন।

Sharing is caring!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *