গাউসে পাকের প্রতি অশিষ্টতায় ওলীর বেলায়ত চ্যুতি

[কারামাতে গাউসুল আ’যম মাইজভাণ্ডারী রাদ্বিয়ানহুল্লাহুল বারী]
(আইনায়ে বারী থেকে ভাষান্তরিত)
ভাষান্তরে: বোরহান উদ্দীন মুহাম্মদ শফিউল বশর
জনাবে হুযূরে পুরনূরে গাউসিয়ার নযরানার সাথে বেয়াদবী করে এক প্রসিদ্ধ ওলীর বেলায়ত হারাবার হৃদয় বিষন্ন করা ঘটনা; সত্যের স্মারক, সত্যবাক বর্ণনাকারীগণ এরূপ বর্ণনা করেন। ফটিকছড়ি থানাস্থ শাহনগর নিবাসী বাহরুল্লাহ নামক একজন, উচ্চ মর্যাদাবান, সাহেবে মকামাত, আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্ত ওলী ছিলেন। তিনি সমসাময়িক কোন ওলীয়াল্লাহকে আপন সমকক্ষ মনে  করতেন না। একদা গাউসুল আ’যম মাইজভাণ্ডারীর অনুরক্ত কাঞ্চনপুর নিবাসী এক ব্যক্তি বাজারবাছা এক হাড়ি মহিষের দই কিনে হাদিয়া দিবার মানসে দরবারে গাউসিয়ায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। বাহরুল্লাহ সাহেব তখন রাস্তার মাথায় বসা ছিলেন। আল্লাহ মা’লূম তার অন্তরে কি খিয়াল এসেছে? সে হাদিয়া সমেত গমনকারীকে দেখে জিজ্ঞাসা করল “তুমি এই দই হাদীয়া আমার সম্মুখ দিয়ে কোন মহান ও মর্যাদাবান ব্যক্তির জন্য নিয়ে যাচ্ছ?” সে জানাল যে, হুযূর! এই হাদিয়া-নযরানা হযরত ক্বুতবুল্লাহিল আফখম গাউসুল্লহিল আ’যম মাইজভাণ্ডারী ‘রদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র জন্য। আত্মাহমিকায় আঘাতকারী এ সংবাদ শুনামাত্র উক্ত শাহ সাহেব সত্ত্বর আপন বসার স্থান থেকে উঠে জোর পূর্বক ঐ দইয়ের হাঁড়ি ছিনিয়ে নিল। ‘এ যুগে আমার চেয়ে হাদিয়া খাওয়ার অধিক যোগ্য সে আবার কে?’ বলে গাউসুল আ’যমের হাদিয়ায় আঙ্গুল ডুবিয়ে উপর থেকে কিছু খেল এবং অবশিষ্টাংশে থুথু দিয়ে হাদিয়া আনয়নকারীকে দিয়ে দিল। সে অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত অন্তরে সজল নয়নে ঐ বেয়াদবের নালিশ দেয়ার জন্য গাউসুল আ’যমের আলীশান দরবারে নিরবে দইয়ের হাঁড়ি নিয়ে উপস্থিত হল। এখনও পর্যন্ত ঐ ব্যক্তি সুমহান আস্তানা শরীফের বারান্দা পর্যন্ত পৌঁছেনি, হযরত গাউসুল্লাহিল আ’যম এর জালালিয়তের সমুদ্র জোয়ারে উচ্ছ্বাসিত হয়ে ইরশাদ করলেন, “সাবধান! দইয়ের হাঁড়ি আমার দরবার পর্যন্ত পৌঁছাবে না। হারামযাদা! বাহরুল্লাহকে বলবে, দইয়ের হাঁড়ি গুহ্যদ্বারে দিতে।” হযরতের জালালিয়ত দেখে সম্মুখে গিয়ে ঘটনার বিবরণ দেয়ার সাহস হলোনা আগন্তুকের। সে স্বভয়ে সেখান থেকে ফিরে হযরত গউসে পাকের অবশ্য তামিল যোগ্য নির্দেশ মতে ঐ দইয়ের হাঁড়ি উক্ত বাহরুল্লাহর সামনে রেখে আপন নিবাসে প্রত্যাগমন করল। সেদিন থেকেই আল্লাহর মহান নি’য়ামত বেলায়ত বাহরুল্লাহ হতে ছিনিত হল এবং আল্লাহর দরবাবে যে মান-মর্যাদা ছিল তা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে গেল। প্রভুর দরবার হতে সম্পূর্ণ রূপে বিতাড়িত হল। ভদ্র-অভদ্র, অভিজাত-সাধারণ সর্বমহলে ধিক্কৃত হতে লাগল। যত্রতত্র অপমান ও লাঞ্চনার স্বীকার হচ্ছিল। কিছুকাল পর এমন তিরস্কৃত অবস্থায় ভবলীলা সাঙ্গ করে পরলোকগত হয়।  نعوذبالله من سوء الادب مع الاولياء “আউলিয়াদের সাথে বেয়াদবী থেকে আমরা আল্লাহর আশ্রয় নিচ্ছি।” সত্যই যখন ভাগ্যমন্দতা মুখ দেখায় তখন এই পরিণতিই হয়। اذا جاء القضاء ضاق الفضاء “যখন তাকদীরের ফয়সালা উপস্থিত হয় তখন বিস্তৃত ময়দান সংকীর্ণ হয়ে যায় এবং اذا جاء القدر عمي البصر “যখন ললাটের লিখন বাস্তবায়িত হতে চলে তখন চক্ষু অন্ধ হয়ে যায়।” এর মর্ম মতে যখন কারো দূর্ভাগ্য উপস্থিত হয় তখন সে নিজ অপেক্ষা সম্মানিত ও শীর্ষস্থানীদের বেয়াদবী করে।
“প্রভু মিলন পথে যে হল বেয়াদব, বঞ্চিত হল সে হতে প্রভু নি’য়ামত।
বেয়াদব যে সেতো নপুংসক বটে, অশিষ্ট পায়না কভু দরদ ও মুহব্বত।
শয়তানের অসম্মান বেয়াদবী হেতু, ঔদ্ধত্য ও অপমান এক বৃত্তে গুথিত।
পূত জনে পেল উচ্চতা শিষ্টতার কারণে, বল্গাহীনতায় জুটে শুধু অধপাত।
দেখ আদব হেতু আকাশ আলো জ্বলমল, আদবদারই হয় ফুল্ল, পুলকিত।
আল্লাহর বন্ধুসনে করে যে বেয়াদবী, তার থেকে প্রভু নি’য়ামত হয় ছিনিত।
সে কারণে বলেছেন আল্লামা রুমী, মসনবী খুলে দেখ হতে নিশ্চিত। 
আদবের শক্তি চাই প্রভুর সকাশে, প্রভু কৃপা হতে বেয়াদব যে বঞ্চিত।
আদব হেতু নূরে পূর্ণ এ আকাশ, আদবের কারণে ফিরিস্তাগণ হল পূত।
তরীকত পন্থে করে যে জন বেয়াদবী, গোমরাহী কূপে সে হবে নিক্ষিপ্ত।
আউলিয়া সহিত বেয়াদবী করে যে মরে, তার তরে মন্দ পরিণতি নিশ্চিত।
গাউসে হক মক্ববূল তব ভৃত্য হয়, আদবের তৌফিক দানে করো আলোকিত।”
“গাউসে মাইজভাণ্ডারীর আস্তানার ধুলি হবে যে,
কসম আল্লাহর! দুই জগতে সে সোলতান হবে।
উচ্চ শান আল্লাহ তাঁকে এমন করলেন দান,
গগণের তপন রূপ দর্শনে পর্দারাড়ে লুকাবে।
লাল তারকার মত তাকে করে দেন নূরানী,
খাঁটি অন্তরে যে জন দরবারের অণু হবে।
গাউসুল্লাহর মকবূল যে আল্লাহর অনুগৃহীত,
সে দ্বারের বিতাড়িত নিশ্চয় প্রভু নিগৃহীত হবে।
সে দরবারে আলীর প্রতি বেয়াদবী রাখলে মনে,
খোদার রোষানলে পড়ে তরবারীস্থ হবে।
করলে বেয়াদবী তাঁর শানে বেলায়ত হারাবে,
মহাপ্রতাপশালীর প্রতাপে শাস্তি যোগ্য হবে।
বেয়াদবী করবে যে, সে যে ঈমান হারাবে,
যথা তথা লাঞ্চিত আর অপমানিত সে হবে।
চরম হতভাগা নিশ্চয় গোসতাখে দরবার যে,
রোজ হাশরে নরকাগ্নির যোগ্য নিশ্চয় হবে।
ইয়াহুদ বা নসরা মূলে সেই ভাগ্যহত,
গাউসে খোদার  সাথে যে অন্তরে দ্বেষ রাখবে।
হবেনা মুনকের তাঁর, বিনে পাপিষ্ট নরাধম,
সে আদি হতভাগা খোদা কর্তৃক যে হবে।
ওয়াল্লাহে দু’জগতের সৌভাগ্যে ধন্য হবে সে,
কদাচ যে অন্তরে গাউসুল আ’যমের বাধ্য হবে।
হীন মকবুল অন্তরে, গাউসুল আযমে কুরবান,
নহে আশ্চর্য যদিচ দীদার নসিব হবে।”

Sharing is caring!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *