ঈদের নয়া জামা

মাইজভাণ্ডারী দর্শন

✍আল্লামা বোরহান উদ্দিন মুহাম্মদ শফিউল বশর (ম.)

 

রমদ্বান শরীফের মুবারক মাস উনত্রিশতম দিবস অতিক্রম করতে চলছেন। হযরত হাসান ও হুসাইন (রাদ্বি.) তখনও কচি শিশু। মা সৈয়্যদাহ ফাত্বিমাতুয যাহারা (রাদ্বি.) আটা পিষে অবসর হলেন। তিনি নামাযের মুসাল্লা বিছানো মাত্রই হাসনাইনে করীমাইন তদপরে শুয়ে পড়লেন। তিনি ওঠতে বললে উভয়ে বিচলিত হয়ে বললেন,আম্মাজান! কাল সকালে ঈদ হবে,অন্যান্য শিশুরা নূতন কাপড় পরবে; আমাদেরও নূতন কাপড় এনে দিন।

ধৈর্য-সন্তোষ রাজ্যের সম্মানিত সম্রাজ্ঞী, দারিদ্র্য রাজ্যের রাজাধিরাজের শাহযাদী সৈয়্যদাহ ফাত্বিমাহ’র অন্তর হেলে ওঠল। তিনি শিশুদ্বয়কে বুকে জড়িয়ে বললেন, শশীগো আমার! আমাকে নামাযতো পড়তে দেবে, ইনশা-আল্লাহ আগামি কাল তোমাদের নূতন কাপড় এনে দেবো।

আম্মু কালতো ঈদ, কাপড় কাল আনলে সেলাই হবে কী করে!

তিনি বললেন, সোনামণিরা আমার! চিন্তা করোনা, দর্জি তোমাদের জন্য সেলাই করা কাপড়ই নিয়ে আসবেন।

অতঃপর তিনি নামাযে নিমগ্ন হলেন। নামাযান্তে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে ফরিয়াদ জানালেন, হে প্রভু! তুমি সবই জানো। তোমার বান্দি ছেলেদের শুধু এ জন্যই ওয়াদাহ দিলেন; যেন তাদের কচিমন ভেঙ্গে না পড়ে। হে আল্লাহ! তুমি সুপরিজ্ঞাত যে, ফাত্বিমাহ জীবনে কখনো মিথ্যা বলেনি; তুমি তার উত্তোলিত হাতের সম্ভ্রম রাখো। হে জগতপালক! আমিতো তোমার দয়ার ভরসায় বাচ্চাদের নূতন কাপড় আসার ওয়াদাহ দিয়ে দিয়েছি। হে দয়াময় তুমি আমার ওয়াদাহ পূরণ করো।

অতঃপর ইফতারের সময় হতেই শাওয়ালের নূতন চাঁদ উদিত হল। মদীনাহ-ই তৈয়্যবাহ’য় ঘোষণা হচ্ছিল, সকালে ঈদ হবে। ঈদের খুশিতে একে অপরে মুবারকবাদ দিচ্ছিলেন। মদীনাহ’র শিশুরা এখন থেকেই ঈদের প্রস্তুুতি নিতে শুরু করল।

রাতে শোবার সময় শিশুদ্বয় মাকে ওয়াদাহ’র কথা ফের স্মরণ করিয়ে দিলেন।

রমণীকুল সরদার পূর্ব থেকেই রাতজাগা ইবাদতকারী ছিলেন, ঈদের রাতও আপন রীতি অনুসারে নফল ইবাদতে অতিবাহিত করলেন।

ফজরের নামাযান্তে দু’আয়-ই নিমগ্ন ছিলেন, অমনি দরজায় করাঘাতের শব্দ হল। তিনি জানতে চাইলেন, কে? উত্তর এল নবী-তনয়ার দর্জি, শাহযাদাদের কাপড় নিয়ে এসেছি। তিনি আল্লাহর অদৃশ্য সাহায্য জ্ঞানে কাপড় গ্রহণ করলেন। অনেক সুন্দর ও দামি পোষাকই ছিল।

তিনি মাত্র পুত্রদ্বয়কে পোষাক পরিধান করাচ্ছিলেন, অমনি ইমামুল আম্বিয়া (দ.) এসে পৌঁছলেন। হাসনাইনে করীমাইনের নূতন জামা-কাপড় দেখে বহু খুশি হলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, বেটি! এ কাপড় কোত্থেকে এল? আরয করলেন,আব্বাজান! একজন দর্জি দিয়ে গিয়েছেন। আমি বাচ্চাদের নূতন কাপড় দেওয়ার ওয়াদাহ করেছিলাম, আল্লাহ তা পূর্ণ করে দিয়েছেন।

তিনি (দ.) ফরমালেন, বেটি! জান কি দর্জি কে?

সৈয়্যদাহ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রসূলই ভাল জানেন। বিশ্বকুল সম্রাট সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামা ইরশাদ করলেন, হাসনাইনের দর্জি বেশে আগমনকারী ছিলেন জিব্রাইল। তিনি আল্লাহর নির্দেশে এ পোষাক জান্নাত থেকে নিয়ে এসেছিলেন।

কৃতজ্ঞতার অশ্রুতে খাতুনে জন্নাতের আঁখি ভরে ওঠল। তিনি কৃতজ্ঞতা-প্রণতি আদায় করে আল্লাহর দরবারে আরয করলেন, ইলাহী! তোমার সহস্র হাজার শুকর যে, তুমি ফাত্বিমাহ’র উত্তোলিত হাতের সম্ভ্রম রক্ষা করেছো।

Sharing is caring!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *