আল্লাহর নি’মাত-অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতার সাফল্য
✍️ এস এম জাফর ছাদেক আল্ আহাদী
পরম করুণাময় আল্লাহ্ তা‘আলার নাম স্মরণ-জপ সহকারে শরণ ও সূচনা। যথাসাধ্য প্রশংসা-কৃতজ্ঞতা, দুরূদ-সালাম ও তাহিয়্যাহ-অভিবাদন ক্রমধারায় সত্ত্ববানদের জন্য নিবেদিত।
অতঃপর জ্ঞাতব্য যে, মহান আল্লাহর নি’মাত-অনুগ্রহ অপরিসীম। পবিত্র কুরআন মজীদে আল্লাহ্ তা‘আলার বাণী ইরশাদ হচ্ছে- وان تعدوا نعمة الله لاتحصوها ‘যদি তোমরা আল্লাহর নি’মাত-অনুগ্রহ গণনা করো, তবে সেগুলোর সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবেনা’ (সূরা:১৬ নাহল, আয়াত ১৮)। এ অপরিসীম নি’মাত-অনুগ্রহের মধ্যে এমন কিছু নি’মাত-অনুগ্রহ রয়েছে, যা ক্ষেত্র বিশেষ শ্রেষ্ঠ। যেমন- নবী-রাসূল (আঃ) গণের উপর আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নি’মাত-অনুগ্রহ, তাঁদেরকে প্রদত্ত নবুয়ত-রিসালত। তাই আল্লাহর বাণী ইরশাদ হচ্ছে- الذين انعم الله عليهم من النبين ‘যাদের উপর আল্লাহ্ অনুগ্রহ করেছেন, উনারা নবীগণ’ ( সূরা:৪ নিসা, আয়াত ৬৯)।
আরো ইরশাদ হচ্ছে- تلك الرسل فضلنا بعضهم على بعض منهم من كلم الله ورفع بعضهم درجات ‘ওই রাসূলগণ, আমি তাঁদের কতেককে কতেকদের উপর মর্যাদায় শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি; তাঁদের মধ্যে এমনও রয়েছেন, যার সাথে আল্লাহ্ কথা বলেন এবং কেউ এমনও আছেন, যাকে সমূহ মর্তবায় উন্নীত করেছেন” (সূরা: ২ বাক্বারা, আয়াত ২৫৩)।
মু’মিনদের উপর সর্বশ্রেষ্ঠ অনুগ্রহ:
পবিত্র কুরআন মজীদের ইরশাদ সূত্রে মু’মিনদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহসমূহের মধ্যে নিম্নোক্ত অনুগ্রহসমূহ লক্ষণীয়।
১। আল্লাহর বাণী ইরশাদ হচ্ছে- لقد من اللہ علی المؤمنين اذ بعث فيهم رسولا ‘নিশ্চয় আল্লাহ্ মু’মিনদের উপর মহান অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মধ্যে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন’ ( সূরা: ৩ আল্-ই-ইমরান, আয়াত ১৬৪)।
২। ইরশাদ হচ্ছে- كذالك كنتم من قبل فمن الله عليكم ‘পূর্বে তোমরাও ঐরূপ ছিলে; অতঃপর আল্লাহ তোমাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন’ {ঈমান-ইসলামে দৃঢ়তার প্রসিদ্ধি দান করে (সূরা: ৪ নিসা, আয়াত ৯৪)}।
৩। ইরশাদ হচ্ছে- هؤلاء من الله عليهم ‘এরাই, যাদের উপর আল্লাহ্ অনুগ্রহ করেছেন’ {ঈমান ও হিদায়ত দান করে (সূরা: ৬ আন্‘আম, আয়াত ৫৩)}।
উক্ত দলিলসমূহে উল্লেখিত অনুগ্রহসমূহের মধ্যে প্রথমটিই মু’মিনদের উপর আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ অনুগ্রহ। কেননা ঈমান, ইসলাম, হিদায়ত, ঈমান-ইসলামে দৃঢ়তার প্রসিদ্ধি প্রভৃতি দান করেছেন, রাসূল প্রেরণ করেই, রাসূলেরই মাধ্যম যোগে। অতএব রাসূল প্রেরণ করার অনুগ্রহটাই মু’মিনদের উপর আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ অনুগ্রহ।
আল্লাহর এ সর্বশ্রেষ্ঠ অনুগ্রহকে এ ধরার বুকে আমরা মু’মিনগণ পেয়েছি, নবী করীম (দ.)’র শুভাগমন অর্থাৎ ঈদে মীলাদুন্নবী (দ.)’র বদৌলতেই। তাই এর কৃতজ্ঞতায় আমাদের বহু করণীয় অবধারিত।
কৃতজ্ঞতায় করণীয়:
১। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা অত্যাবশ্যক। পবিত্র কুরআন মজীদে আল্লাহ্ তা‘আলার বাণী ইরশাদ হচ্ছে– واشكروا نعمة الله ان كنتم اياه تعبدون ‘এবং আল্লাহর নি’মাত-অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদত করে থাকো’ (সূরা: ১৬ নাহল, আয়াত ১১৪)।
২। স্মরণ করা আবশ্যক। আল্লাহর পবিত্র বাণী ইরশাদ হচ্ছে- واذكروا نعمت الله عليكم ‘স্মরণ করো আল্লাহ্র নি’মাত-অনুগ্রহকে, যা তোমাদের উপর রয়েছে’ (সূরা:২ বাক্বারা, আয়াত ২৩১)।
৩। চর্চা ও আলোচনার আয়োজন করতে হবে। আল্লাহর বাণী ইরশাদ হচ্ছে- واما بنعمة ربك فحدث ‘এবং আপনার প্রতিপালকের নি’মাতের চর্চা-আলোচনা করুন’ (সূরা: ৯৩ দোহা, আয়াত ১১)।
৪। স্মরণ করিয়ে দেওয়ার আয়োজন করতে হবে। আল্লাহর বাণী ইরশাদ হচ্ছে- وذكرهم بايام الله ‘এবং তাদেরকে আল্লাহর দিবসসমূহ স্মরণ করিয়ে দাও’ (সূরা: ১৪ ইব্রাহীম, আয়াত ৫)।
৫। আনন্দ উদযাপনের আয়োজন করতে হবে। আল্লাহ্ তা‘আলার পবিত্র বাণী ইরশাদ হচ্ছে- بفضل الله وبرحمته فبذالك فليفرحوا هو خير مما يجمعون قل ‘আপনি বলুন, আল্লাহর দয়ার দান ও রহমতকে কেন্দ্র করে তারা যেন আনন্দ উদযাপন করে; এটাই হবে তারা যা সঞ্চয় করবে তদ্মধ্যে সর্বোত্তম’ (সূরা: ১০ য়ূনুস, আয়াত ৫৮)।
সর্বশ্রেষ্ঠ দয়া লাভের আনন্দ উদযাপনের সাফল্য:
পূর্বোক্ত দলিলসমূহের আলোকে স্পষ্ট যে, মু’মিনদের উপর আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ অনুগ্রহ হলো- নবী করীম (দ.)কে প্রেরণ করা। আর উপর্যুক্ত ৫ নং দলিলালোকে ‘আল্লাহর দয়ার দান ও রহমতকে কেন্দ্র করে আনন্দ উদযাপন যে সর্বোত্তম সঞ্চয়’ তা সুস্পষ্ট। অতএব মু’মিনদের উপর আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ অনুগ্রহ হিসেবে প্রেরিত নবী-রাসূলবর মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ (দ.)’র শুভাগমন কেন্দ্রিক ‘পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী (দ.)’ সকল ঈদের সেরা ঈদ ও সর্বোত্তম সঞ্চয় লাভের সাফল্যমণ্ডিত মহান ঈদ।
আল্লাহ্ প্রদত্ত নি’মাত-অনুগ্রহে কৃতজ্ঞ হলে, আরো অধিক নি’মাত-অনুগ্রহ প্রাপ্তি অবধারিত। আল্লাহ্ তা‘আলার পবিত্র বাণী ইরশাদ হচ্ছে- لئن شكرتم لازيدنكم ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও, তবে আমি আরো অধিক দেবো’ (সূরা: ১৪ ইব্রাহীম, আয়াত ৭)। এখানে আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ নি’মাত-অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতায়ও আরো অধিক দানের ব্যতিক্রম ঘটবেনা যে, এ সর্বশ্রেষ্ঠ অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী (দ.) যথাযথ ভাবে উদযাপনের মাধ্যমে সবকিছুরই মালিক স্বয়ং আল্লাহ্কেই পাওয়া যাবে।
তাই এ মর্মকে ধারণ করে পরিশেষে ছন্দে ছন্দে বলতে পারি-
সৃষ্টিকুল সেরা আসিলেন স্রষ্টাকে পেয়ে দিতে,
এরচেয়ে বড় নি’মাত আছে কি তুল্য হতে!
কৃতজ্ঞ বান্দার নিকট তাই ঈদে মীলাদুন্নবী,
সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ঈদ হয়, অন্য সকল ঈদ হতে।
সর্বজগতেরি রহমতকে পেয়ে কী-যে খুশী,
বুঝেনা তা কৃতঘ্নরা, তাই তারা নাখোশ তাতে।
দুই কূলে সাফল্য লাভের পন্থ দেন যিনি এসে
তাঁর শুভাগমনেরি ঈদ, সেরা যে সব ঈদ হতে।
ঈমান-ইসলাম-কুরআন, সবি পাই যিনি হতে,
তিনি আগমনের এ ঈদ, শ্রেষ্ঠ তাই সবি হতে।
যিনি না এলে পেতামনা অন্য সকল খুশীর ঈদ,
তাই নবীর আগমনের ঈদ, শ্রেষ্ঠ ঈদ সবি হতে।
যিনি আসায় খুশী হয়ে কাফিরও শান্তি লভে;
মু’মিনের সাফল্য অতুল লব্ধ হয় এ ঈদ হতে।
আল্লাহর সেরা দয়া যে, নবীকে প্রেরণ করা,
কুরআনে আছে সে প্রমাণ দেখরে মু’মিন তাতে!
আল্লাহর দয়া লাভে যে, আনন্দ প্রকাশ করা,
সর্বশ্রেষ্ঠ সঞ্চয় যে, সাক্ষ্য দেয় কুরআন তাতে।
শ্রেষ্ঠ দয়ার আনন্দ-ঈদ, শ্রেষ্ঠ সঞ্চয়েরি ঈদ,
ঈদে মীলাদুন্নবী তাই শ্রেষ্ঠ সকল ঈদ হতে।