আলীর যিকর ইবাদত (পর্ব- দুই)

আলীর যিকর ইবাদত

(পূর্ব ধারাবাহিকতায়)

✍️বোরহান উদ্দিন মুহাম্মদ শফিউল বশর

গত পর্বে আলোচিত প্রমাণাদি আলোকে তাঁর প্রথম পর্যায়ের যুক্তি-প্রমাণের অসারতা স্বয়ং তাঁর মডেল হুজুরের মতানুসারে প্রমাণিত। ذكر علي عبادة হাদীসে যিকরের মর্ম তার সমুদয় অর্থ যোগে গ্রহণের যৌক্তিকতা প্রতিভাত। অনবধানতাকে বিবেচনায় নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার মান মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টার অভিযোগ না তুললেও আল্লামা হযরত সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়ব শাহ্’র ব্যাখ্যালোকে তাঁর বদনসীবীর ওপর মাতম অবশ্যই অপরিহার্য।
এবার তাঁর অন্যান্য দলীল একটু পর্যালোচনা করা যাক। তিনি লিখেছেন,
“এবার আমরা লক্ষ্য করে দেখি কথিত শিয়াদের ব্যাখ্যা মুহাদ্দিগণ আদৌ গ্রহণ করেছেন কিনা।

আল্লামা মুনাভী (রহ.) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন-
وَالْمرَاد ذكره بالترضي عَنهُ أَو بِذكر مناقبه وفضائله وَنَحْو ذَلِك
অর্থাৎ: এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তাঁর (আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর) প্রতি সন্তুষ্টির সাথে তাঁর আলোচনা করা অথবা তাঁর মানাকিব এবং ফজিলত ইত্যাদি দ্বারা আলোচনা করা।
(আল্লামা মুনাভী, আত-তাইসীর বি শরহু জামেয়িস সাগীর, ২/২০ পৃ. এবং মুনাভী, ফয়জুল কাদীর, ৩/৫৬৫ পৃ.)

আল্লামা সান‘আনী (রহ.) বলেন-
أي ذكركم مناقبه وفضائله وصفاته الشريفة.
-“আলীর যিকর ইবাদত মানে অর্থাৎ হযরত আলী (রা.)’র মর্যাদা, ফযীলত এবং সম্মানিত গুণাবলী আলোচনা করা ।” (আল্লামা সান‘আনী, আত-তানভীর শরহু জামেয়িস সাগীর, ৬/১৭৮ পৃ. হা/৪৩৩২-এর আলোচনা।)

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! আপনারা একটু ভেবে দেখুন! শিয়াদের মনগড়া শিরকিপূর্ণ ব্যাখ্যা গ্রহণ করবেন নাকি নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দিসদের ব্যাখ্যা গ্রহণ করবেন।”

‘শিয়াদের মনগড়া শিরকপূর্ণ ব্যাখ্যা’ উল্লেখে তিনি যে ব্যাখ্যার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন, পূর্ব কিস্তির উদ্ধৃতি মর্মে তা-তো তাঁর মডেল হুজুর এবং হুজুরের পীর সাহেব হুজুরেরও ব্যাখ্যা; যেহেতু সূরা ইনশিরাহ্’র ৪ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যায় তাঁরা তা গ্রহণ করেছেন। জানিনা তিনি তাঁদেরও ‘নব্য শিয়া’ আর ‘শিরকপূর্ণ ব্যাখ্যাকার’ খিতাবে ভূষিত করবেন, নাকি নিজের ব্যাখ্যাকে ভুল আর তাঁদের ব্যাখ্যাকে সঠিক মেনে সেটি শিয়াদের নয়, বরং আহলে সুন্নাতেরই ব্যাখ্যা জ্ঞানে গ্রহণ করবেন?

আত-তায়সীর বি শরহি জামি‘ইস সাগীর, ২/২০ পৃ. এবং ফয়দ্বুল ক্বাদীর, ৩/৫৬৫ পৃষ্ঠার উদ্ধৃতিতে আল্লামা মুনাভীর যে ব্যাখ্যা তিনি তুলে ধরেছেন, তা তাঁর দাবির বিপরীতেই দলীল বটে। জানিনা অনুবাদের অসমাঞ্জস্য তাঁর অনবধানতা বশত ভুল, নাকি উদ্দেশ্য প্রণোদিত ছলচাতুরি?

প্রথমে সঠিক অনুবাদ তুলে ধরা হলো,
وَالْمرَاد ذكره بالترضي عَنهُ أَو بِذكر مناقبه وفضائله وَنَحْو ذَلِك
অর্থাৎ: ‘(আলীর যিকর ইবাদতের ) উদ্দেশ্য হলো, রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু যোগে তাঁর নাম নেওয়া অথবা মানাক্বিব, ফাদ্বায়িল ও তদ্রূপ অন্যান্য কিছু উল্লেখে তাঁর স্মরণ- আলোচনা করা’।

তাঁর অনুবাদ ইতোপূর্বে আপনাদের পাঠগত হয়েছে, এখানে ফের উত্থাপিত হল,
“অর্থাৎ: এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তাঁর (আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর) প্রতি সন্তুষ্টির সাথে তাঁর আলোচনা করা অথবা তাঁর মানাকিব এবং ফজিলত ইত্যাদি দ্বারা আলোচনা করা”।

এখানে অনবধানতা অথবা কৌশলে الترضي শব্দের পারিভাষিক অর্থ এড়িয়ে শাব্দিক অর্থ গৃহীত হয়েছে।
পারিভাষিক অর্থ জানার পর যে কেউ সে অর্থ গ্রহণের ন্যায্যতা এবং যিকর’র অর্থ আলোচনার পরিবর্তে নাম নেওয়া তথা জপ করা হওয়ার যৌক্তিকতা অনায়াসে হৃদয়ঙ্গম করতে সক্ষম হবেন।
الترضي: قول: رضي الله عنه( على سبيل النحت ).
‘আত্তারাদ্ব্দ্বী: রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলা ( সাংকেতিক/সংক্ষেপিত পদ্ধতিতে)’।

তাছাড়া ‘আও বিযিকরি মানাক্বিবিহী ওয়া ফাদ্বায়িলিহী ওয়া নাহ্বি যালিকা’র অনুবাদে ‘যিকর’ শব্দটি গিলে ‘বা’কে নিয়ে ‘মানাক্বিবিহী’র সাথে যুক্ত করে অনুবাদ করার মাধ্যমে হাদীসস্থ ‘যিকর’র ব্যাপক মর্মকে শুধু আলোচনায় সংকোচনের কৌশল মাদরাসা পড়ুয়া ছাত্র মাত্রই অবগত।
এতে প্রতিভাত যে, তিনি যা শিয়াদের মনগড়া শিরকপূর্ণ ব্যাখ্যা বলেছেন, তা তাঁর উত্থাপিত মুনাভীরও ব্যাখ্যা বটে।

তাঁর বক্তব্য,
“আল্লাহ আল্লাহ নাম জপা যেমনিভাবে ইবাদত তেমনিভাবে আলী আলী নাম জপাও ইবাদত। নাউযুবিল্লাহ !”

যেমনি-তেমনির মারপ্যাঁচে সমতুল্য অর্থ নিয়ে জপাকে যদি শিরকপূর্ণ বলা যায়, অনুরূপ ‘আল্লাহর আলোচনা যেমনিভাবে ইবাদত, তেমনিভাবে আলীর আলোচনাও ইবাদত’ কথাটিও শিরকপূর্ণ বৈকি! অবশেষে শিরক থেকে বাঁচার রাস্তা আবিস্কৃত হল কৈ? অ-হ্যাঁ তজ্জন্যই হাদীসের মান নিয়ে প্রশ্ন! এ বিষয়ক আপত্তির উত্তরও ইনশায়াল্লাহ আগামী কিস্তিতে দেওয়া হবে।

প্রথম পর্ব পড়ুন- আলীর যিকর ইবাদত 

চলমান…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *