হায়রে অসহায়ত্ব (তৃতীয় পর্ব)

হায়রে অসহায়ত্ব 

✍️ বোরহান উদ্দিন মুহাম্মদ শফিউল বশর

[তৃতীয় পর্ব]
[পূর্ব ধারাবাহিকতায়]
একজন প্রাজ্ঞ বিজ্ঞ মুফতী সাহেবকে যখন কোন কিছু প্রমাণের জেদ পেয়ে বসে, তখন জেদের বশে তিনি বড়ই অসহায় হন; যেকোনো ধরনের তাহরীফ বা বিকৃতিতে তাঁর বাঁধেইনা। এক বিজ্ঞ মুফতীরও এমন কিছু কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমার কমবেশি জানাশুনা ছিল, পরন্তু তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার কারণে বিষয়গুলো আনদেখা করে চলতাম পুরোদমে; এমনকি পুরোদস্তুর এড়িয়েও গিয়েছি। কিন্তু একটি পক্ষ তাঁর লিখনীকে ঢাল-তলোয়ার করে আওলিয়ায়ে কিরাম ও তাঁদের দরবারে আচারিত একটি বিষয়কে অত্যন্ত অশ্লীল ভাষায় বরাবর আক্রমণ করে চলছিল। ওই মুফতীর ফতোয়াকে খোঁটা করে, খোঁটার জোরে মেষ যখন সিংহে অনবরত শিঙ দেখিয়ে চলছে তখন মেষ পালক ও চারকের দৃষ্টি আকর্ষণ চেষ্টায়ও আমাদের কোনো কমতি ছিল না। কিন্তু আমাদের এ প্রচেষ্টা তাঁদের বিবেচনায় দুর্বলতা ঠেকল, আপন মেষ পালের শিঙ দোলানো আর মুণ্ড হেলানো দেখে তাঁরাও যেন গর্বিত; তাঁরা উল্লাসে মেতে ওঠছিল যে, আমাদের মেষদের শিঙের গুঁতোয় সিংহ এবার গর্তে ঢুকেছে!
ওদের সদম্ভ আস্ফালন ওই মুফতীর ফতোয়াই নাকি শেষ কথা! সুতরাং আমাদের সামনে ওই ফতোয়ার পর্যালোচনা ছাড়া গত্যন্তরই রইল না। আশা করি আমার এ অগত্যা কর্ম ক্ষমার্হ বিবেচিত হবে।
ফতোয়ার পর্যালোচনা করতে গিয়ে মুফতী সাহেব হুজুরের নিজের করা তরজুমায় দুই জায়গায় কত ফারাক, তা প্রথম কিস্তিতে তুলে ধরেছি। এতে প্রতিভাত যে, ফতোয়ার স্বার্থে কুরআনে কারীমের আয়াতের অপব্যাখ্যা অবশ্যই হয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তিতে মওদূদীবাদের পক্ষে যেই হাতিয়ার সরবরাহ করা হয়েছে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো হয়েছে। ওই হযরতের মসলকই কেবলমাত্র সুন্নীয়্যাত বলে জাতির সামনে ওই মুলা ঝুলিয়ে রাখলে মওদূদীর শিষ্যরা অনন্তর সুন্নীদের আপন দলে ভিড়িয়ে নিতে সক্ষম হবে। এমনিতেই ওই হযরতের ফতোয়ার ভিত্তিতে সৈয়্যদ আহমদ ব্রেলভী প্রশ্নে সুন্নীদের একটি পক্ষ দোদুল্যমান অবস্থার শিকার হয়েছেন।
“প্রথম অধ্যায়: কুরআনে কারীমের আয়াত দ্বারা সিজদায়ে তাহিয়্যাহ’র নিষিদ্ধকরণ” শীর্ষক অধ্যায়ে মান্যবর হযরত সূরাতুল আলে ইমরানের ৮০ নাম্বার আয়াত উদ্ধৃত করেছেন; যা ইতিপূর্বের দুই কিস্তিতে কিঞ্চিত আলোচিত হয়েছে। ওই আয়াতে সিজদায়ে তাহিয়্যাহ’র নিষেধাজ্ঞা নির্দেশ করা হয়েছে প্রমাণ করতে গিয়ে বিজ্ঞ মুফতী সাহেব হাসান বসরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর প্রতি সম্পৃক্ত কৃত একটি শানে নুযূল উদ্ধৃত করেছেন। এখানে হুজুরের চয়িত মূল পাঠ, কৃত উর্দু অনুবাদ এবং এস এম আশরাফ আলী আল-কাদেরী অনুবাদিত মুহাম্মদী কুতুবখানা আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম প্রকাশিত বাংলা ভাষান্তরিত রূপ হুবহু তুলে ধরছি।
بلغنى ان رجلا قال يا رسول الله نسلم عليك كما يسلم بعضنا على بعض افلا نسجد لك قال لا ولٰكن اكرموا نبيكم واعرفوا الحق لأهله فإنه لاينبغى ان يسجد لاحد من دون تعالى فانزل الله تعالى ما كان لبشر إلى قوله بعد اذ انتم مسلمون
مجھے حدیث پہنچی کہ ایک صحابی نے عرض کی یا رسول اللہ ہم حضور کو بھی ایسا ہی سلام کرتے ہیں جیسا کہ آپس میں – کیا ہم حضور کو سجدہ نہ کریں- فرمایا نہ بلکہ اپنے نبی کی تعظیم کرو اور سجدہ خاص حق خدا کا ہے، اسے اسی کے لئے رکھو اس لئے کہ اللہ کے سوا کسی کو سجدہ سزاوار نہیں اس پر اللہ عزوجل نے یہ آیت اتاری –
[ফতোয়ায়ে রজভীয়া ২২ খণ্ড ৪৩২ – ৪৩৩ পৃষ্ঠা, মারকাযে আহলে সুন্নাত বরাকাতে রাদ্বা গুজরাট।]
অর্থাৎ- আমার কাছে এ হাদীছটি পৌঁছেছে যে, জনৈক সাহাবী হুযূরের কাছে আরয করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমরা পরস্পর যেভাবে সালাম আদান প্রদান করি, আপনাকেও সেভাবে করে থাকি। আমরা কি আপনাকে সিজদা করতে পারিনা? তিনি (দঃ) ইরশাদ ফরমালেন- না, বরং তোমাদের নবীর সম্মান কর। সিজদা একমাত্র আল্লাহর জন্য খাস এবং তাঁরই জন্য সংরক্ষিত রেখ। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ সিজদার উপযোগী নয়। এর প্রেক্ষিতে উপরোক্ত আয়াতটি নাযিল হয়। তাজিমী সিজদা ৮ পৃষ্ঠা।
এবার পরিপূর্ণ ইনসাফের সাথে কেউ কি বলবেন,
“اور سجدہ خاص حق خدا کا ہے، اسے اسی کے لئے رکھو اس لئے کہ اللہ کے سوا کسی کو سجدہ سزاوار نہیں اس پر اللہ عزوجل نے یہ آیت اتاری -‘
( আর সিজদা শুধু আল্লাহর অধিকার, ওটাকে তাঁরই জন্য রেখো; এ জন্য যে , আল্লাহ ছাড়া কাউকে সিজদা যথোপযুক্ত নয়; এ প্রেক্ষিতে আল্লাহ আয্যা ওয়া জাল্লা এ আয়াত অবতীর্ণ করেছেন।) বা [ সিজদা একমাত্র আল্লাহর জন্য খাস এবং তাঁরই জন্য সংরক্ষিত রেখ। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ সিজদার উপযোগী নয়। এর প্রেক্ষিতে উপরোক্ত আয়াতটি নাযিল হয়।] কথাগুলোর মধ্যে
(اس لئے کہ اللہ کے سوا کسی کو سجدہ سزاوار نہیں-
এ জন্য যে , আল্লাহ ছাড়া কাউকে সিজদা যথোপযুক্ত নয়) অংশটি ছাড়া বাকি কোন কথাটি মূল আরবীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ? এ গরমিল কি মুদ্রণপ্রমাদ, নাকি অনবধানতা, নাকি বিকৃতি?
اور سجدہ خاص حق خدا کا ہے، اسے اسی کے لئے رکھو
( আর সিজদা শুধু আল্লাহর অধিকার, ওটাকে তাঁরই জন্য রেখো) বা [ সিজদা একমাত্র আল্লাহর জন্য খাস এবং তাঁরই জন্য সংরক্ষিত রেখ।] কথাটা দ্বারা কুরআন দ্বারা প্রমাণিত সিজদায়ে তাহিয়্যাহ’র প্রকার অস্বীকার হয় কিনা? ইবলীসতো তা-ই করেছিল, তবে সে অভিশপ্ত হল কেন? আসমানে আল্লাহ তা’আলা আদমের সাথে তা ভাগাভাগির কল্পনাও কীভাবে করা যেতে পারে? যখন শরীকে বারী বা আল্লাহর সাথে অংশীদারিত্ব সর্বদা ممتنع মুমতানি’।
*মুফতী সাহেব হুজুরের উদ্ধৃত আরবী ইবারতে রয়েছে, فانزل الله تعالى ما كان لبشر إلى قوله بعد اذ انتم مسلمون
অর্থাৎ- “অতএব বা এ প্রেক্ষিতে আল্লাহ তা’আলা ‘মা কানা লিবাশারিন’ থেকে তাঁর বাণী ‘বা’দা ইয্ আন্তুম মুসলিমূন’ পর্যন্ত অবতীর্ণ করেন” আর মুফতী সাহেব হুজুর ৭৯-৮০ দুই আয়াত থেকে এক আয়াত চয়ন করে লিখেছেন, اس پر اللہ عزوجل نے یہ آیت اتاری (এ প্রেক্ষিতে আল্লাহ আয্যা ওয়া জাল্লা এ আয়াত অবতীর্ণ করেছেন।) বা [ এর প্রেক্ষিতে উপরোক্ত আয়াতটি নাযিল হয়।]; এটাকে প্রতারণা ছাড়া আর কোন শব্দে ব্যাখ্যা করতে পারি?  দয়া করে কেউ কি বলে দিবেন? যাতে সর্বজনাবের মর্যাদা রক্ষা হয়, এমন শব্দে নিজের ভাষার ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতে পারি।
সূরাতু আলে ইমরানের ৮০ নাম্বার আয়াতের
( وَلاَ يَأْمُرَكُمْ أَن تَتَّخِذُواْ الْمَلاَئِكَةَ وَالنِّبِيِّيْنَ أَرْبَابًا أَيَأْمُرُكُم بِالْكُفْرِ بَعْدَ إِذْ أَنتُم مُّسْلِمُونَ)
স্বাতন্ত্র্য কোন শানে নুযূল ক্বিয়ামতের দ্বিপ্রহর পর্যন্ত সময় দিলেও কেউ দেখাতে পারবেনা।
هَاتُواْ بُرْهَانَكُمْ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ
(বি. দ্র.: গঠনমূলক  আলোচনা ও পরামর্শ বিবেচনায় নেওয়া হবে।)
প্রথম পর্ব পড়তে 👉 ক্লিক করুন
দ্বিতীয় পর্ব পড়তে 👉 ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *