শত বর্ষের পাপ

লেখকঃ প্রমিত মুন্তাসির পান্থ

কোমলমতি বন্ধুরা! তোমরা আমাদের প্রিয় নবী (দ.)’ র নাম জানো? জানি, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লা-হু আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লাম)।বাহ, তোমরাতো শুধু নাম নয়, নাম বললে, শুনলে দুরূদ পড়তে হয়, তাও জানো!

রসূলুল্লাহ (দ.)’ র প্রতি দুরূদ -সালাম নিবেদনের নির্দেশ আল্লাহ তা’আলা তাঁর পাক কালামে দিয়েছেন।ইরশাদ হচ্ছে,”নিশ্চয় আল্লাহ ও তাঁর ফিরিশতাগণ নবী (দ.)’র ওপর দুরূদ পড়েন,হে মু’মিনগণ! তোমরা তাঁর ওপর দুরূদ পড়ো এবং উত্তমরূপে সালাম নিবেদন বরো” (সূরাহ আহযাব, আয়াত ৫৬)।

দুরূদ -সালাম নিবেদন করলে আমাদের লাভ,নাকি ক্ষতি? অবশ্যই লাভ।প্রথমে দুরূদের উপকারিতা বিষয়ক একটি হাদীস উল্লেখ করছি।আল্লাহর হাবীব (দ.) ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দুরূদ প্রেরণ করবে,আল্লাহ তার ওপর দশটি রহমত অবতীর্ণ করেন,তার দশটি পাপ মার্জনা এবং তার মর্যাদা দশ স্তর উন্নতি করে দেওয়া হয়”। সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী,সুবহানাল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম।আর সালাম নিবেদনে স্বয়ং নবী করীম (দ.)’র পক্ষ থেকে উত্তর লাভে ধন্য হওয়া যায়।প্রিয় নবী (দ.)’র ঘোষণা, “পূর্ব-পশ্চিমে যে সালাম নিবেদনকারীই আমাকে সালাম নিবেদন করে,আমি এবং আমার প্রভুর ফিরিশতাগণ তার সালামের উত্তর দিই”।

বুদ্ধিমান বন্ধুরা! প্রিয় নবী (দ.)’র নামের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের সুফল প্রাসঙ্গিক একটি ঘটনা আমরা আলোচনা করবো।

তোমরা নিশ্চয় হযরত মূসা আলায়হিস সালামের নাম শুনেছ। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে তাঁর নামের উল্লেখ রয়েছে।তাঁর উম্মতের এক ব্যক্তি শত বছর ধরে আল্লাহর অবাধ্যতায় ডুবে ছিল।সে মারা গেলে বনী ইস্রাঈলগণ কাফন-দাফনের ব্যবস্থা না করে মরদেহ ময়লার স্তুপে ফেলে দিল।উল্লেখ্য যে, হযরত ইয়াকূব (আ.)’র বংশধরকে বনী ইস্রাঈল বলা হয়।

অতএব আল্লাহ তা’আলা হযরত মূসা (আ.)’র প্রতি অহি বা প্রত্যাদেশ করলেন, “তার মরদেহ ময়লার স্তুপ থেকে বের করো এবং জানাযার নামায পড়ো”।

আদিষ্ট হয়ে মূসা (আ.) আবেদন জানালেন ,”হে প্রভু বনু ইস্রঈল সাক্ষ্য দিচ্ছে যে,”ওই ব্যক্তি শত বছর পর্যন্ত তোমার নাফরমানিতে লিপ্ত ছিল”। অর্থাৎ যে ব্যক্তি শত বর্ষ ধরে তোমার বিরুদ্ধাচরণ করেছে,আমি কেন তার লাশ ময়লা থেকে বের করবো?কেন তার কাফন,জানাযার নামায ও দাফনের ব্যবস্থা করবো?

প্রত্যুত্তরে আল্লাহ তা’আলা মূসা (আ.)’র প্রতি প্রত্যাদেশ করলেন, “তদ্রূপই বটে।অর্থাৎ বনু ইস্রাঈল সঠিকই বলছে।পরন্তু সে যখনই ‘তাওরাত” খুলতো এবং মুহাম্মদ (দ.)’র নাম দেখতো, তা চুমতো আর তার দু’চোখের ওপর রাখতো।আমার হাবীবের প্রতি তার এমন সম্মান ও প্রেম-ভালবাসার কারণে আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি এবং সত্তর জন হূর তার স্ত্রীত্বে দান করেছি”।সুবহানাল্লাহ।

উল্লেখ্য যে, হযরত মূসা (আ.)’র ওপর অবতীর্ণ আসমানি কিতাবের নাম “তাওরাত”।হযরত দাউদ (আ.)’র ওপর অবতীর্ণ আসমানি কিতাবের নাম”যাবূর”।হযরত ঈসা(আ.)’র প্রতি অবতীর্ণ কিতাবের নাম”ইনজিল”।এবার তোমরা বলতো দেখি, আমাদের প্রিয় নবী (দ.)’র ওপর অবতীর্ণ কিতাবের নাম কি? “আল্ কুরআন”।মারহাবা।

সোনামণিরা! মূসা (আ.)’র উম্মতের উক্ত পাপী লোকটিকে আল্লাহ কেন ক্ষমা করে দিয়েছেন? আমাদের প্রিয় নবী (দ.)’র নামকে চুমো দিয়ে ও চোখের ওপর রেখে প্রেম-ভালবাসা ও সম্মান প্রদর্শনের কারণে।মূসা (আ.)’র উম্মতের এক পাপীর শত বর্ষের পাপ যদি আল্লাহ তাঁর হাবীবের প্রতি উক্তরূপ ভক্তি-শ্রদ্ধা-সম্মান প্রদর্শনের কারণে ক্ষমা করে দেন,তবে আমরা উম্মত হয়ে নবী করীম (দ.)’র নাম শুনে উভয় হাতের তর্জনীর পেট আর বৃদ্ধাঙ্গুলির নখ একত্রিত করে চুমে দু’চোখেরর ওপর বুলালে আল্লাহ কি আমাদের বঞ্চিত করবেন? না, কখনো না।

সুবিবেচক বন্ধুরা! আমরা যখন এ বরকতময় কাজটি করতে যাবো, তখন কেউ কেউ হয়তো বিদ’আত বিদ’আত রবও তুলতে পারে, এ আমলের বৈধতার প্রমাণও চাইতে পারো।এসো আমরা কিছু দলীল আলোচনা করি।

“হযরত আদম (আ.) জন্নাতে থাকাকালে হযরত মুহাম্মদ (দ.)’র সক্ষাতাগ্রহী হলেন।আল্লাহ তা’আলা তাঁর প্রতি অহি করলেন,”তিনি তোমার ঔরসে হবেন এবং শেষ যুগে আবির্ভূত হবেন।” আদম (আ.) জন্নাতে থাকাবস্থায়ই মুহাম্মদ (দ.)’র সাক্ষাৎ প্রার্থনা করলেন।আল্লাহ তাঁর প্রতি অহি করলেন এবং নূরে মুহাম্মদী (দ.)কে তাঁর ডান হাতের তর্জনীতে রাখলেন। তখন ওই নূর তসবীহ পড়লেন, এ জন্যই ওই আঙ্গুলকে মুসাববাহাহ বা তসবীহ পাঠিকা নাম দেওয়া হয়।অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তাঁর হাবীব (দ.)’র সৌন্দর্যকে আদম (আ.)’র উভয় হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির নখদর্পণে স্পষ্ট করলেন।এতদদর্শনে আদম (আ.) নিজের উভয় বৃদ্ধাঙ্গুলির নখদ্বয় চুমে উভয় চোখে মুছলেন।আদি পিতার এ কর্ম পুত্রদের জন্য সনদ হয়ে রইল। জিব্রাঈল (আ.) যখন এ ঘটনা নবী করীম (দ.)’র নিকট বর্ণনা করলেন, তখন তিনি (দ.) ইরশাদ করলেন, “যে ব্যক্তি আযানে আমার নাম শুনে উভয় বৃদ্ধাঙ্গুলির নখদ্বয় চুমে দু’চোখে লাগাবে, সে কখনো অন্ধ হবেনা”।

ছোট্টমণিরা! হযরত আদম (আ.)’র উক্ত আমল সূত্রে আমরা উভয় বৃদ্ধাঙ্গুলির নখদ্বয় চুম্বন ও দু’চোখে মুছার সনদ পেয়েছি।ইতোপূর্বে আমরা উভয় হাতের তর্জনীর পেট আর বৃদ্ধাঙ্গুলির নখ একত্রিত করে চুমে দু’চোখে বুলানোর কথা উল্লেখ করেছি।এসো উভয় তর্জনীর ভিতরাংশ চুম্বন ও দু’চোখে মুছার প্রমাণটিও আলোচনা করি।

“হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু যখন মুয়াযযিনকে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ’ বলতে শুনলেন, ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রসূলুহু রাদ্বীতু বিল্লাহি রব্বান ওয়া বিলইসলামি দ্বীনান ওয়া বিমুহাম্মাদিন সল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামা নবীয়্যা’ বলে শাহাদত আঙ্গুলিদ্বয়ের ভিতরাংশ চুমে উভয় চোখে বুলালেন। এতদদর্শনে নবী করীম (দ.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রিয় বন্ধুর (আবূ বকর সিদ্দীকের) কার্যরূপ কর্ম করবে, তার জন্য আমার শাফা’আত অবধারিত”।

ছোট্ট বন্ধুরা! এবার তোমরাই বল, উক্ত বরকতময় আমল আদি পিতা হযরত আদম (আ.) ও প্রথম খলীফাহ হযরত সিদ্দীকে আকবর (রা.)’র সুন্নাত, নাকি বিদ্’আত? অবশ্যই হযরত আদম (আ.) ও হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা.)’র সুন্নাতই বটে। পিতারর সুপুত্র আর খুলাফা-ই রাশিদীনের প্রকৃত অনুসারী হলে আমরা আমলটি করবো, নাকি বিদ্’আত বলে বাধা দেবো? নিশ্চয় করবো।

অ হ্যাঁ, খুলাফা-ই রাশিদীনের সুন্নাতেরর অনুসরণ তো স্বয়ং নবী করীম (দ.)’র ঘোষণা মর্মেই আমাদের ওপর আবশ্যক। ইরশাদ হচ্ছে, “তোমাদের ওপর আমার পর আমার সুন্নাত এবং আমার খুলাফা-ই রাশিদীনের সুন্নাত আবশ্যক”।

বুদ্ধিমান বন্ধুরা! তোমরা হয়তো লক্ষ্য করে থাকবে যে, আম্বিয়া-ই কিরাম ও আওলিয়া-ই ইযামের তা’যীম সংশ্লিষ্ট যে কোন কর্মে এক শ্রেণীর মানুষের চুলকানি আছে।এ ভাইরাসের উৎসমূল হল ইবলীস।ইবলীসই-তো আল্লাহর নির্দেশ সত্তেও আদম (আ.)কে সম্মানে অস্বীকৃত ছিল। সুতরাং এ ভাইরাসে আক্রান্তদের আমরা যতই দলীল-প্রমান দেই, তারা মানবেই না।তারা মানছেনা, মানবেনা, তাতে বিপত্তি নেই।বিপত্তি দেখা দেয় তখনই, যখন তারা ইবলীসকেও ডিঙ্গিয়ে মান্যকারীদেরর বাধা দেয়, শিরক বিদ্’আত ফতওয়া জারি করে।ওই সব ফতওয়াবাজদের সাথে বিতর্কে জড়িয়ে গল্পের আমেজ নষ্ট হোক, তা আমরা চাইনা।তাদের শুধু বলবো, ফতওয়াবাজির আগে ফতওয়ার কিতাব ভালভাবে পড়ে নিন। তাদের মুরুব্বীরাও আস্থা রাখতেন,এমন কয়টি কিতাবের পৃষ্ঠা নম্বর আমরা এখানে উল্লেখ করছি।

১.রদ্দুল মুহতার আলাদ্ দুররিল মুখতার ১ম খণ্ড, ৩৯৮ পৃষ্ঠা।

২.কাওয়’ইদুল ফিকহ ১ম খণ্ড,২৩৩ পৃষ্ঠা।

৩.মজমূ’আ ফতওয়া ১ম খণ্ড, ১৮৯ পৃষ্ঠা।

প্রকাশনী ভিন্নতায় পৃষ্ঠা নম্বর এদিক ওদিক হতে পারে।উক্ত কিতাব তিনটির পৃষ্ঠাত্রয়ে দৃষ্টি দিলে আমাদের আলোচিত আমল বিদ্’আত নয়, বরং মুস্তাহাব রূপেই তারা দেখতে পাবেন।বিদ্’আত ভাইরাসে আক্রান্ত বন্ধুদের খিদমতে সবিনয় অনুরোধ, একবার পড়ে দেখুন;হয়তো এন টি ভাইরাসের কাজ দিতে পারে।আপনারা গুটিকয়েক ভাইরাসবাহী সুস্থ হলে পুরো জাতি নিরাপদ।

“আল্লাহ সকলের সহায় হোন”।

Sharing is caring!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *