গাউসুল আ’যম মাইজভাণ্ডারী ও মাইজভাণ্ডারী ত্বরীকা-দর্শন

মাইজভাণ্ডারী
আল্লামা বোরহান উদ্দীন মুহাম্মদ শফিউল বশর
ভূমিকা:
গোপন খনি থাকা কালে (যখন কালেরও অস্তিত্ব ছিলনা) আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলী সমেত প্রকাশের প্রীতিই প্রেম। এ প্রেমের কারণেই সৃষ্টির সূচনা। হাদীসে কুদ্সীতে আল্লাহর ঘোষণা “আমি লুকায়িত খনি ছিলাম, অতঃপর যাত-সিফাত বা সত্তা ও গুণাবলীসহ প্রকাশে প্রীত হলে বিশেষ সৃষ্টি (তথা নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) সৃজন করলাম”। ওই নূর জমালে খোদাওয়ান্দী তথা আল্লাহর জলওয়া বা নৈরূপের রূপ হওয়াতে আল্লাহ ওই নূরের প্রতি অনুরাগী। গাউসুল আ’যম মাইজভাণ্ডারী (রা.)’র বিশিষ্ট খলিফা বাহরুল উলূম আল্লামা আবূল বরাকাত আব্দুল গণি কাঞ্চনপুরী (রা.) বলেন,
“আজব নামে খোদা হু তোম পিয়ারে জানি মুহাম্মদ,
খোদা আশেক মা’শুক হু তোম পিয়ারে জানি মুহাম্মদ”।
মুসান্নিফে আব্দুর রাযযাকে হযরত জাবির বিন আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর বর্ণিত হাদীসের মর্মালোকে সমগ্র সৃষ্টিজগত নূরে মুহাম্মদী সল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামা হতেই পর্যায়ক্রমিক ভাবে সৃজিত। সুতরাং সমস্তই আল্লাহর প্রেমময় বিকাশ হেতু তিনি সর্বব্যাপী ও সর্বত্র বিরাজিত সর্বময় ক্ষমতাধর। তিনি ভিন্ন সবকিছুরই অস্তিত্ব আপেক্ষিক। এ পরম সত্যের উপলব্ধিতে ক্ষণস্থায়ী সৃষ্টি অনুরাগ বিসর্জিয়ে স্রষ্টার প্রতি আকর্ষিত-আকৃষ্ট হওয়াই সত্য প্রেম। আল্লাহ বান্দার অন্তরে ওই সত্য-প্রেমের আকর্ষণ জাগান আপন কোন মাহবূব বা প্রেমাষ্পদ বান্দার মাধ্যমে; যিনি নূরে মুহাম্মদী (দ.)’র ধারক-বাহক রূপে শানে মাহবূবীর মূর্ত প্রতীক আল্লাহর কুদরতের কারখানা এবং সমুদয় সৃষ্টির নিয়ন্ত্রক। হযরত গাউসুল আ’যম শাহ্সূফী সৈয়্যদ আহমদুল্লাহ্ মাইজভাণ্ডারী রাদ্বিয়ানহুল্লাহুল বারী উক্তরূপ সত্তাই হন।
আল্লাহর প্রেম-ভালবাসা সিক্ত হওয়ার জন্য আল্লাহর প্রেমাষ্পদ সত্তার অনুসরণ অপরিহার্য। ইরশাদ হচ্ছে,“ (হে হাবীব!) বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস তবে আমার অনুসরণ কর; আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন”। আল্লাহর প্রেমসিক্ত অনুগ্রহধন্য বান্দাদের পথই সিরাতে মুস্তাকীম; যে পথে পরিচালনার সকাতর আর্তি সূরা ফাতিহায় বিবৃত। অনুগ্রহধন্য বান্দাদের পর্যায়ক্রমিক বর্ণনা কুরআনের ভাষায় নবীগণ, সিদ্দীকিন, শুহাদা ও সালেহীন। আলকুরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘এবং আমারই (আল্লাহর) দিকে প্রত্যাবর্তনকারীর পন্থা অনুসরণ কর’।
গাউসুল আ’যম মাইজভাণ্ডারী:
হযরত গাউসুল আ’যম মাইজভাণ্ডারী (রাদ্বি.) হন হযরত গাউসুল আ’যম জিলানী (রাদ্বি.) কর্তৃক আপন ক্বলব (অন্তরাত্মা) সংশ্লিষ্ট বর্ণনায় নাম উল্লেখ ব্যতীত “পরষ্পর সমকক্ষ বন্ধু বা সাথী” বলে বিঘোষিত বৈশিষ্ট্যাবলি উল্লেখে পরিচিহ্নিত সত্তাই। সায়্যিদুনা গাউসুল আ’যম শায়খ আবদুল ক্বাদের জিলানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র বর্ণনা, “আমার ‘ক্বলব’ বা অন্তরাত্মা সৃষ্টি থেকে দূরে এক কিনারায় আল্লাহ আযযা ওয়াজাল্লাহর জ্ঞানের আবাসে গোপন অবস্থানে রয়েছে। তা আল্লাহ সুবহানাহুর দরজায় এক ফিরিশতা ব্যক্তিত্ব, যাকে আমার জমানাবাসীর মধ্য থেকে  তথায় গমনকারী প্রত্যেকের জন্য ক্বিব্লা রূপে প্রকাশ করেছেন; যা বদ্ধ দরজার নেপথ্যে পৌঁছে অন্তরঙ্গতা ও নৈকট্যের বিছানায় উপবিষ্ট। আর তা এমন অন্যতম একক বাদশাহ, যার পরস্পর সমকক্ষ এমন একজন সাথী বা বন্ধু রয়েছেন, যিনি সৃষ্টির রহস্যাবলী জ্ঞাপক; অন্তরসমূহের অবস্থাদি অবলোকনকারী। হক তা‘আলা তাঁকে ভিন্নতা দেখার পঙ্খিলতা থেকে পরিচ্ছন্ন করে দিয়েছেন; এমন কি তিনি এরূপ ফলকে পরিণত হয়ে গেছেন যাতে ‘লাওহে মাহফুয’র সমগ্র বিষয় অবতীর্ণ হয়। তাঁর জমানাবাসীর সমুদয় কার্যাবলীর নিয়ন্ত্রণ তাঁকেই সোপর্দ করলেন এবং তাদের থেকে যাকে ইচ্ছা স্বাধিকারে দান করার ও বঞ্চিত করার ক্ষমতা তাঁকে দিলেন। তার ‘গায়বী জবানে’ তাঁকে বললেন- ‘আজ তুমি আমার নিকট মর্যাদাশীল মহাসচিব।’ তাঁকে আহলে ইয়াক্বীন বা সম্পূর্ণ সংশয়মুক্তদের সমূহ আত্মার সাথে দুনিয়া ও আখিরাতের মধ্যবর্তী সৃষ্টি ও স্রষ্টার মধ্যবর্তী, ব্যক্ত ও গুপ্তের মধ্যবর্তী এবং বোধ্য ও দূর্বোধ্যের মধ্যবর্তী উচ্চাসনে বসিয়েছেন। তাঁর চারটি মুখমণ্ডল বানিয়েছেন: এক মুখে দুনিয়া, এক মুখে আখিরাত, এক মুখে সৃষ্টিকুল এবং এক মুখে স্রষ্টার দিকে দেখেন। আর তাঁকে নিজ জমিন ও জগতসমূহে খলীফাহ্ বা প্রতিনিধি রূপে রূপান্তর করেন। যখন তাঁর বিষয়ে ইচ্ছা করবেন, তখন এক আকার থেকে অপর আকারের দিকে এবং এক অবস্থা থেকে অপর অবস্থার দিকে তা পাল্টে দেবেন; কারণ তিনি সমগ্র রাজত্বব্যাপী একাই একজন, যিনি তাঁর সমস্ত নবীগণের নায়েব বা স্থলাভিষিক্ত এবং নিজ সময়কালে আপন বাদশাহীর জিম্মাপ্রাপ্ত। আর প্রতি দিনরাত আল্লাহর তিনশ’ ষাটটি বিশেষ দৃষ্টি বা জ্যোতি বিচ্ছুরণ তাঁর  প্রতি হয়ে থাকে”। (বাহজাতুল আসরার ৫৫ পৃ. বায়রূত- লেবনান প্রকাশিত)
হযরত গাউসুল আ’যম মাইজভাণ্ডারী (রা.) আপন মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান বর্ণনায় বলেন, 
(ক) ‘আমার নাম পীরানে পীর ছাহেবের নামের সাথে সোনালী অক্ষরে লিখা আছে’। (বেলায়তে মোতলাকা ৮২ পৃ. ৯ম সংস্করণ)
(খ) ‘রাছূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা’র হস্ত মোবারকে দুইটি ‘তাজ’ ছিল; একটি ‘তাজ’ আমার মাথায় পরিয়ে দেন, অপরটি আমার ভাই পীরানে পীর শায়খ আবদুল ক্বাদের জীলানী সাহেবের মাথায় পরানো হয়’। (জীবনী ও কারামত ২০০ পৃ. ৬ষ্ঠ সংস্করণ)
(গ) ‘আমি একদিন আমার ভাই পীরান পীর ছাহেবের সহিত কাবা শরীফে ঢুকিয়া দেখিতে পাইলাম-রছূল করিম (দ.)-এর চদর মোবারক (ছিনা) এক অসীম দরিয়া। আমরা উভয়ে উহাতে ডুব দিলাম’। (প্রাগুক্ত)
ত্বরীকাহ:
এটি আরবী শব্দ; এর অর্থ পথ, পন্থা, মত, পদ্ধতি, রীতি, উপায় ইত্যাদি। ফীরূযুল লুগাত অভিধানে রয়েছে, ‘ত্বরীকত অর্থ ১. রাস্তা ২. তাসাওউফের পরিভাষায় আত্মার পরিশুদ্ধিতে-সূফীগণের অবলম্বিত পন্থা, যদ্ধারা রূহানী পূর্ণতা অর্জন হয়’। আল্লামা সৈয়্যদ শরীফ জুরজানী লিখেছেন, ‘মর্যাদায় উন্নতি ও স্তরসমূহ অতিক্রম ইত্যাদিতে আল্লাহর পানে গমনকারীদের সাথে সংশ্লিষ্ট বিশেষ আচার-আচরণ-স্বভাব-প্রকৃতি হল ত্বরীকাহ’। (আততা’রীফাত ১০১ পৃষ্ঠা)
মোদ্দাকথা হল, বাত্বিনে নবূয়তে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়াসাল্লামা’র প্রত্যক্ষ দীক্ষায় লব্ধ প্রভুর পরিচয় ও মিলন লাভের জ্ঞান, পদ্ধতি, প্রণালী, উপায়কে মশরব বা ত্বরীকাহ বলা হয়; যদ্ধারা মানুষ বাত্বিনী শরীয়ত পালন করে পরিপূর্ণ সফলতা তথা অভীষ্ট অর্জনে সক্ষম হয়।
দর্শন:
দর্শন মানে চোখে দেখা। এখানে দর্শন তত্ত্ব-দর্শন অর্থে জগত ও জীবনের স্বরূপ উপলব্ধি, সত্যের প্রত্যক্ষ উপলব্ধি বা সাক্ষাৎকারই দর্শন। আর একটু স্পষ্ট করে বলতে গেলে সত্যের খণ্ডিত দিক বাদ দিয়ে এক অখণ্ড সত্যের উপলব্ধি তথা সমগ্র সত্তার অধ্যয়ন। যা কুরআনের ভাষায় ‘অচিরেই আমি সারা বিশ্বজগতে ও তাদের মাঝে আমার নিদর্শনসমূহ দেখাব, যাতে তাদের নিকট সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, নিশ্চয় তা সত্য’ (সূরা হা-মীম-সাজ্দাহ ৫৩ নং আয়াত)। আরো ইরশাদ হচ্ছে, ‘খবরদার! নিশ্চয় তিনি প্রত্যেক বস্তুকে পরিবেষ্টনকারী’ (পূর্বোক্ত ৫৪ নং আয়াত)।
হযরত শায়খ সা’দী (রা.) বলেন, ‘বৃক্ষরাজির সবুজ পত্রসমূহের প্রতিটি পাতাই সুচতুর ব্যক্তির দৃষ্টিতে আল্লাহর পরিচয়ের দপ্তর’।
মাইজভাণ্ডারী ত্বরীকাহ:
আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ তা‘আলা আপন অসীম অনুগ্রহ ও অনন্ত দয়ায় আপন হাবীবে মুকাররম, খলিফায়ে মু‘আযযম, কুতবে আলম, গাউসুস্ সাকলায়ন, গাউসুল আ’যম শাহসূফী সৈয়্যদ আহমদুল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (১৮২৬-১৯০৬ খ্রী.) রদ্বিয়ানহুল্লাহুল বারীকে হযরত মাহবূবে সুবহানী গাউসে সমদানী পীরে পীরান মীরেমীরান আবু মুহাম্মদ মুহী উদ্দীন আবদুল কাদির জীলানী রদ্বিয়ানহুল্লাহুল বারী’র ছয়শত বিরাশি বছর পর জযব বা আকর্ষণ ও সুলূক বা অনুসরণ চলনের অলংকারে সুসজ্জিত করে নবীগণের মধ্যে উলূল আ’যম পয়গাম্বরের ন্যায় অলিগণের মাঝে আপন প্রতিনিধি ও খলীফা করে প্রেরণ করেছেন। তাঁর হিদায়ত ইরশাদের আলোতে ভ্রষ্টতার ময়দানে পথহারাদের হিদায়তের রাজপথে আনয়ন করে ধূলির ধরাকে অষ্টস্বর্গের চিরবাসন্তী বাগিচার ইর্ষণীয়তে পরিণত করেছেন।
প্রতিবন্ধকতার অপসারণ অভীষ্ট অর্জনের আগে হওয়ার কারণে পূর্ববর্তী অধিকাংশ অলিয়ুল্লাহ সুলূককে জযবের ওপর অগ্রণী রাখতেন এবং মুরীদগণকে যিকর-আযকার ও রিয়াযতের তলকীন বা দীক্ষা দিয়ে আপন প্রভুপ্রদত্ত ক্ষমতা-কর্তৃত্বকে মুরীদের সাহায্যে নিয়োজিত রাখতেন। খোদাপথযাত্রী আলমে আমর বা রূহজগতে লতিফাসমূহ স্বচ্ছ-নির্মল এবং নফস বা প্রবৃত্তি সন্তোষজনক চরিত্র যথা- তাওবা, ইনাবাত, যুহদ, তাওয়াক্কুল, সবর, রদ্বা ইত্যাদি দশ মকামের সাথে গুণান্বিত হয়ে ক্বলব আল্লাহর নৈকট্যের জন্য প্রস্তুত হলে তবেই শায়খ তাকে জযব বা আকর্ষণের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছাতেন। এদেরকে তাসাওউফের পরিভাষায় সালিকে মাজযূব বলা হয় এবং তাদের ওই সায়র বা পরিভ্রমণকে সায়রে আফাকী বা জগতগত পরিভ্রমণ বলা হয়। এ পরিভ্রমণ অতি দূর-দূরান্তের ও কষ্টের;  যাত্রাকালে খোদা পথযাত্রীর মৃত্যুও হতে পারে এবং অভীষ্ট অর্জনে ব্যর্থও রয়ে যেতে পারেন। অতএব আল্লাহ সুবহানুহু তা‘আলা স্বীয় পরিপূর্ণ দয়া ও সর্বব্যাপী অনুগ্রহে হযরত গাউসুল্লাহিল আ’যম মাইজভাণ্ডারী রাদ্বিয়ানহুল্লাহুল বারীকে মাজযূবে সালিক করে সমস্ত উম্মতের প্রতি প্রেরণ করেন এবং জযবকে সুলূকের ওপর অগ্রণী করার শিক্ষা দেন। তিনি আপন গোলামদেরকে প্রথমে বাত্বিনী দৃষ্টিতে আলমে আমর বা রূহজগতে লতিফাসমূহে যিকর প্রক্ষেপ করেন। এমনকি তাঁর দৃষ্টির বরকতে ক্বলব, রূহ, সির, খফী ও আখফা আপন আপন নীতিতে বিলীন হয়ে যায়। এ পরিভ্রমণকে আনফুসী বা সত্তাগত পরিভ্রমণ বলা হয় এবং এ পরিভ্রমণের মাধ্যমে আফাকী পরিভ্রমণও অর্জিত হয়ে যায়। (তাসাওউফ-দর্শন মতে ব্যক্তির সত্তাই পুরো জগৎ সদৃশ, যার পরিভ্রমণ সারা জগত পরিভ্রমণের সমতুল্য। আর ব্যক্তি সত্তার পরিচয় লাভ মানে হক বা অখণ্ডিত সত্য তথা মহাসত্যের পরিচয় অর্জন।) এটাকে ‘প্রান্তকে প্রারম্ভে প্রবিষ্ট বা প্রতিস্থাপন’ বলা হয়। কেননা জযব হচ্ছে কার্য আর সুলূক হল কারণ, এ ত্বরীকায় কার্যকে কারণের পূর্বে স্থাপন করা হয়েছে। যখন রূহজগতে লতিফাসমূহ বিলীন হয়ে যায় তখন রিয়াযত-মুজাহিদার নির্দেশ দেন। এমতাবস্থায় রূহজগতের লতিফাসমূহ সচল হওয়ার কারণে নফসের জন্য সাধন-ভজন হাল্কা হয়ে যায়। এ পরিভ্রমণ ও যাত্রা অন্যান্য পরিভ্রমণ ও যাত্রা অপেক্ষা অভীষ্টের পানে দ্রুত অগ্রসরকারী। খোদা পথযাত্রী যাত্রাকালে পূর্ণতা লাভের পূর্বে ইন্তিকাল করলেও সর্বোত ব্যর্থ হবেনা; কেননা এখানে প্রথম সাক্ষাতেই অন্তরের যিকর অর্জিত হয়। (আঈনায়ে বারী ৫৩৮-৫৪১ পৃষ্ঠা)
মাইজভাণ্ডারী ত্বরীকা-দর্শনের মূলশিক্ষা:
আমরা জানি মূল হচ্ছে যার ওপর ভিত্তি করে পুরো কাঠামো নির্মিত ও স্থায়ী হয়। এ দৃষ্টিকোণকে সামনে রেখে মাইজভাণ্ডারী ত্বরীকা-দর্শনের মূলশিক্ষা খুঁজতে গেলে আমরা দু’টি বিষয় স্তম্ভ রূপে দেখতে পাই। যথা-
এক. অনুসৃত শায়খের সাথে প্রেমের সংযোগে যুক্ত হওয়া।
দুই. পরিপূর্ণ আদবসহ শায়খের সাহচর্য ও অনুসরণ।
মাইজভাণ্ডারী ত্বরীকার সফল ভাষ্যকার বাহরুল উলূম আল্লামা আবুল বরাকাত সৈয়্যদ আবদুল গনি কাঞ্চনপুরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র আঈনায়ে বারী গ্রন্থালোকে উক্ত বিষয়ের বর্ণনা নিম্নে প্রদত্ত হল।
ক. অনুসৃত শায়খের সাথে প্রেমের সংযোগে যুক্ত হওয়া:
 
পীর-মুর্শিদের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য হাতে হাত রেখে বায়‘আত গ্রহণ আবশ্যকীয় শর্ত নয়। বরং যে কোন উপায়ে সংযোগ প্রতিষ্ঠিত হলেই চলবে। যেমন- পীর মুর্শিদ কর্তৃক খিরকা অথবা টুপী প্রদত্ত হওয়া, চুলে কাচি চলানো, দয়া করে সাহচর্য ও সংস্পর্শে কবুল করা ইত্যাদি যথেষ্ট। হাফেয সিরাজী আলাইহি রহমতু রব্বিহিল বারী বলেন, ‘প্রেমাস্পদের গ্রহণ করাই সৌভাগ্য ভাণ্ডের চাবি’।
আমাদের শায়খ গাউসে পাক রাদ্বিয়ানহুল্লাহু আনহুল বারী’র ত্বরীকায় পূর্ণতার স্তরে উপনয়ন অনুসৃত শায়খের সাথে প্রেমের সংযোগে যুক্ত হওয়ার সাথেই সম্পৃক্ত। এ ত্বরীকায় শায়খের সাথে প্রেমের বন্ধনের মাধ্যমে মুরীদ শায়খের বাত্বিন হতে ফয়য-বরকত অর্জন করেন এবং অভ্যন্তরীণ সাদৃশ্য হেতু পীরের রঙে রঙিন হন। ত্বরীকতের বুযুর্গগণ বলেন, ফানা ফীশ্ শায়খ ফানা ফীল্লাহ’র সূচনা।
পূর্বোক্ত সংযোগ ও ফানা ফীশ শায়খ হওয়া ব্যতীত শুধু যিকর আল্লাহর সান্নিধ্যে উপনয়নকারী নয়। যদিও যিকর উপনয়নের উপকরণ, পরন্তু অধিকাংশ সময় তা প্রেমের সংযোগ ও ফানা ফীশ শায়খের সাথে শর্তযুক্ত। সাহচর্যের আদব দৃষ্টে এবং পীর-মুর্শিদের তাওয়াজ্জুহ বা শুভদৃষ্টি সাপেক্ষে শুধু সংযোগ কোনরূপ যিকর প্রণালী ছাড়াও আল্লাহর সান্নিধ্যে উপনয়নকারী। অন্যান্য ত্বরীকায় কার্যসিদ্ধি অযিফা, দ‘আ-দুরূদ, যিকর, রিয়াযত, নির্জন সাধনা ইত্যাদির সাথে সংশ্লিষ্ট পীরে ত্বরীকতের সাথে নয় বিধায় সর্বস্তরের মানুষ উপকৃত হতে পারেনা। মহান মাইজভাণ্ডারী ত্বরীকায় উপকারের আদান-প্রদান আকর্ষণমূলক হওয়ার কারণে আদবযোগে অনুসৃত শায়খের সাহচর্য যথেষ্ট; অন্যান্য অযিফা, আযকার সহায়ক রূপে পরিগণিত। যেমন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়াসাল্লামা’র সাহচর্য; ঈমান বা বিশ্বাস, তসলীম বা আত্মসমর্পণ, ইনক্বিয়াদ বা বশ্যতার শর্তে যথেষ্ট ছিল। এ কারণে খোদার সান্নিধ্যে উপনয়ন পন্থা এ ত্বরীকায় সহজসাধ্য; জোয়ান-বুড়া, নর-নারী, জীবিত-মৃত সবাই শায়খে কামিলে মুকাম্মিলের ফয়ূযাত-বরাকাত অর্জনে সমান। যে কেউ এ স্থায়ী নিয়ামত লাভে ধন্য হবে, সে দ্বীন-দুনিয়ার সফলতা লাভে সমর্থ হবে; অন্যান্য বিষয়াবলী শায়খের বেলায়তী প্রভাবে সুসম্পন্ন হয়ে যাবেই। এ কারণেই হিন্দু বাড়ই, বৌদ্ধ ধননজয় প্রমুখদের সা‘আদতে আবদী বা স্থায়ী সৌভাগ্য অর্জন করতে দেখা যায়। কাঞ্চনপুরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
‘গাউসে ধনের প্রেম সাগরে ঈমান-রত্ন ভেসে যায়, 
ধনী হতে সাধ থাকে যার হঠাৎ করে নিতে আয়।
সে সকলের শিরমণি প্রেমাকাশের দিনমণি
ঈমান জ্যোতে করে ধনী যে মিশেছে নূরী পায়।
সাফল্য জীবন আর সাফল্য নয়ন তার
তান নূরী পদ যেবা জীবনে দেখিতে পায়’।
মশায়িখে কিরামের ঐকমত্যে সাব্যস্ত যে, জযব-প্রধান ত্বরীকার চেয়ে উন্নততর কোন ত্বরীকা নেই। রিসালায়ে বরযখিয়ায় রয়েছে, সূচনাকারী বা প্রাথমিক মুরীদ প্রথমে শায়খের কথা খেয়াল করবে, তাতে সমর্থ হলে কর্মের প্রতি মনোনিবেশ করবে অতঃপর গুণাবলীর প্রতি লক্ষ্য রাখবে, যদি তা রপ্ত করতে পারে তবে শায়খের সত্তা বা আসরার তথা রহস্য নিয়ে  কাজ শুরু করবে। শায়খের মাঝে বিলীন হতে পারলে ফানা ফীর রাসূল ও ফানা ফীল্লাহ’র মকামও অর্জিত হয়ে যায়। আল্লামা জালালুদ্দীন রূমী বলেন, ‘যখন তুমি পীরের সত্তাকে কবুল করেছ, খোদা ও রাসূলও তাঁর সত্তায় শামিল। দুই জাননা, দুই দেখনা, দুই বলনা; আপন মুনিব-পীর মুর্শিদের মাঝে আল্লাহকে বিরাজিত জান’।
জ্ঞাতব্য যে, মুর্শিদ ধরে ভুলে যাবে কিংবা কুকুরের ন্যায় এখানে-ওখানে ঘুরবে তা হতে পারেনা। এক দরজা আঁকড়ে ধর। যে একজনের নিকট গৃহীত, সে সকলের নিকট গৃহীত, যে একজনের নয়, সে কারো নয়। কেননা সকল আউলিয়া মিলে এক অভিন্ন সত্তা হন।
সকল আউলিয়া নিশ্চয় এক দেহ, বেশী নয়; হয় শাহে মাইজভাণ্ডারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র দরবারের কুকুর হও, কিংবা শাহে বাগদাদের। আহম্মকের ন্যায় যাকে দেখ তার বনে যাবেনা। অবশ্য সকলের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা রাখবে কিন্তু নিজের পীরকে ছাড়বেনা। ‘আমরা তাঁর (আল্লাহর) কোন রাসূলদের মাঝে (ঈমান স্থাপনে) তারতম্য করিনা’ নীতির ওপর অটল থাকবে। পিতা সকলের হযরত আদম হলেও যার সাথে তোমার নিকটতর সম্পর্ক, তিনিই তোমার পিতা; তাঁর সম্পদেরই উত্তরাধীকারী হতে পারবে, বরং পিতার মাধ্যমে উর্ধতন পিতৃপুরুষদের সম্পদের অংশও পাবে। পরন্তু পিতার মাধ্যম ব্যতীত কোন পূর্বপুরুষের অংশই পাবেনা। আজ একজনের ভক্ত কাল অন্য জনের, এমন ব্যক্তি সর্বদা বঞ্চিত হয়, কেননা কোন শায়খ এমন ব্যক্তির প্রতি আন্তরিক ভাবে মনোনিবেশ করেননা।
উল্লেখ্য যে, কারো সাথে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপিত হলে, কল্পনায় ভাবনায়-মনের আয়নায় তারই অবয়ব ভেসে ওঠে। এটাকে তাসওউফের ভাষায় ‘শায়খের অবয়ব ধ্যান’ বলা হয়। মুর্শিদের রঙে রঙিন হওয়ার ক্ষেত্রে এ ধ্যানের বড়ই প্রভাব রয়েছে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে এটি মূর্তি সদৃশ হলেও প্রকৃত পক্ষে মূর্তি বিনাশকারী।
‘নিশ্চয় আল্লাহ আদমকে রহমানের আকৃতিতে সৃজন করেছেন’ এবং ‘যে আমাকে দেখেছে, সে মহাসত্য দেখেছে’ এ দিকেই ইঙ্গিতবহ। আল্লামা মকবুল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
‘সুরত পে পিয়ার কা বিলকুল নকশা ওয়াহদত কী হে;
আব লাযেম হে পূজনা হার কুঈ উস বুতখানে কো।’
শায়খের ধ্যান ইবাদত ও যিকরুল্লাহও বটে। হাদীসের ভাষ্য ‘আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র প্রতি দেখা ইবাদত’ এবং ‘যাদের দেখলে তোমাদের খোদা স্মরণ হয়’ এ দিকেই ইঙ্গিত করে। হযরত গাউস গাওয়ালয়ারী জাওয়াহিরে খামসাহ কিতাবে লিখেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর রহস্যাবলী মুর্শিদের বরযখের সাথে শর্তযুক্ত’। শাহ অলিয়ুল্লাহ কাওলুল জমীল গ্রন্থে লিখেছেন, ‘খোদার নৈকট্যর প্রধান স্তম্ভ হল প্রেম ও শ্রদ্ধার সাথে শায়খের সঙ্গে আত্মার সম্পর্ক গড়া ও তাঁর আকৃতি ধ্যান করা- মনোযোগসহ দেখা’।
আমাদের দাদা হুযূর হযরত শাহ মুহাম্মদ ছালেহ লাহূরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু রিসালায়ে আখলাক্বে সূফীয়াহ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছার তৃতীয় পন্থা হল, এমন পীরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা, যিনি মুশাহিদাহ বা আল্লাহকে প্রত্যক্ষ করণের স্তরে অধিষ্ঠিত এবং আল্লাহর সত্তার জ্যোতিরাজির সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত; এ রূপ শায়খের দর্শন ‘তারা  এমন সত্তা, তোমরা যখন তাদের দেখবে, তখন আল্লাহ স্মরণ হবে’ বাণীর দাবী মতে যিকরের উপকার পৌঁছায় এবং তাঁদের সাহচর্য ‘তারা আল্লাহর বন্ধু’ মর্মে অগণিত মঙ্গল প্রাচুর্য প্রদান করে’।
খ. পরিপূর্ণ আদবসহ শায়খের সাহচর্য ও অনুুসরণ:
 
হাদীসের বাণী ‘ওলামায়ে হক্কানীগণ নবীগণের উত্তরসূরী’ মর্মে শায়খের সাহচর্য ও অনুসরণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া আলা আলিহী ওয়াসাল্লামা’র সাহচর্য-অনুসরণ। পীরের খেদমত, সহবত ও আনুগত্য আল্লাহরই আনুগত্য জানবে। আল্লাহর বাণী, ‘যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল’। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস তবে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন’।
পীরের আনুগত্য মুরীদের জন্য ফরযে আইন। পীরের আমল মুরীদের জন্য ফিকাহ-ফতওয়া তথা শরীয়তের সিদ্ধান্ত। প্রতিটি কাজ সামগ্রিক কিংবা আংশিক অর্থাৎ ইবাদত, বন্দেগী, পানাহার, ওঠা-বসা, চলা-ফেরা, শয়ন-জাগরণ সবকিছুতে অনুসৃত শায়খের অনুসরণ করবে এবং গুপ্তে-ব্যক্তে পীরের রঙে রঙিন হতে সদা সচেষ্ট থাকবে। পীর হতে প্রকাশিত সবকিছু বিধিসম্মত মনে করবে; যদিও বাহ্যিকভাবে বিধিসম্মত মনে না হয় তবুও পীরের প্রতিটি কাজকে ইলহাম বা খোদা কর্তৃক পীরের অন্তরে প্রক্ষেপিত জানবে। পীরের কোন কাজে আপত্তি করবেনা। কেননা তাঁর ওপর সামান্য আপত্তিও দুর্ভাগ্য ও বঞ্ছনা বয়ে আনে।
‘বেয়াদব আল্লাহর অনুগ্রহ হতে বঞ্চিত হয়’। যদি কোন কিছুর ক্ষেত্রে সংশয় জাগে শীঘ্রই পীরের নিকট জেনে নিবে, যদি বুঝে না আসে, তবে নিজের ত্রুটি জ্ঞান করবে। মুরীদের উচিৎ নিজের হৃদয়ের মুখ সর্বদিক হতে ফিরিয়ে আপন পীরের সমীপে মনোনিবেশ করা এবং তাঁর ফয়য-রহমতের জন্য অপেক্ষমান থাকা; এমনকি তাঁর নির্দেশ ছাড়া নফল ইবাদত ও যিকরেও মশগুল না হওয়া। রূমী বলেন, ‘অলিদের ক্ষণিকের সান্নিধ্য শত বছরের অকপট ইবাদত অপেক্ষা উত্তম’।
শিষ্যের জন্য আবশ্যক যে, গুরুর ছায়ায় ছায়া পড়ে এমন যায়গায় না দাঁড়ানো, পীরের মুসল্লায় পা না রাখা, পীরের ওযুর স্থলে ওযু না করা, পীরের পাত্র ব্যবহার না করা, অনুমতি ছাড়া বিচ্ছিন্ন না হওয়া, পীরের সামনে উচ্চ আওয়াজে কথা না বলা, পীরের আবাসের দিকে পা না টানা, থুথু না ফেলা ইত্যাদি।
ফয়য-বরকত যেখান থেকে অর্জন হোকনা কেন আপন পীরের পক্ষ থেকে হয়েছে জানবে। জগতে সহস্র আউলিয়া থাকলেও নিজের পীর অপেক্ষা অধিক প্রিয় কাউকে জানবেনা। মজনুনের জন্য লাইলী অপেক্ষা সুন্দরী কেউ নেই।
উল্লেখ্য যে, এখানে কেউ হয়তো ত্বরীকা আর দর্শনকে গুলিয়ে ফেলার অভিযোগ উত্থাপন করতে পারেন। বস্তুতঃ দু’টার আলোচ্য বিষয় ভিন্ন হলেও উদ্দেশ্য প্রায় অভিন্ন। ত্বরীকার উদ্দেশ্য আল্লাহর দর্শন লাভ আর দর্শনের উদ্দেশ্য সর্বত্র অখণ্ডিত সত্য তথা আল্লাহর অস্তিত্বের উপলব্ধি। উভয় উদ্দেশ্যই পূর্বোক্ত মূলশিক্ষা আখ্যায়িত স্তম্ভ দু’টির ওপর ভিত্তি করে সাধন হওয়া সম্ভব। ‘মানুষ আমার রহস্য আর আমি মানুষের’ হাদীসে কুদ্সী ও ‘মানুষকে শিখিয়েছি, যা জানতনা’ আয়াত মর্মে ইনসানে কামিল বা পরিপূর্ণ মানবই আল্লাহর রহস্যবলীর খনি ও আল্লাহর জ্ঞানরহস্যের পাণ্ডুলিপি। এ জন্যই সূফী পরিভাষায় পীর-মুর্শিদের নূরবর্ষী আননকে ‘মাসহাফ’ বা কুরআন এবং সায়রে আনফুসী বা সত্তাগত পরিভ্রমণকে ‘তিলাওয়াতে ওজূদ’ বা আত্মপাঠ বলে আখ্যায়িত করা হয়। হাদীসের ভাষায় ব্যক্ত হয়েছে, ‘যে নিজেকে চিনেছে, সে নিশ্চয় তার প্রভুকে চিনেছে’। এ ইঙ্গিতপূর্ণ বিষয়টি সত্য পীরের সান্নিধ্য ছাড়া বুঝে আসার নয়।
 
সপ্ত কর্ম পদ্ধতি:
অছিয়ে গাউসুল আ’যম হযরত শাহসূফী সৈয়্যদ দেলওয়ার হোসাইন মাইজভাণ্ডারী (রাদ্বি.) স্থূলদর্শী সমাজ বাস্তবতার নিরিখে মহাসাগররূপী এ ত্বরীকার শুধু আসরারে ইলাহী সম্পর্কিত আধ্যাত্মিক রহস্যময়তায় নিবন্ধিত না থেকে প্রায়োগিক বর্ণনায় মনোনিবেশ করেন। তাঁর উপস্থাপিত প্রদ্ধতি প্রণালী মাইজভাণ্ডারী সপ্ত কর্ম পদ্ধতি নামে পরিচিত ও প্রচারিত।
১. ফানায়ে ছালাছা বা রিপুর ত্রিবিধ বিনাশ স্তর।
২. মউতে আরবা বা চতুর্বিধ মৃত্যু।
রিপুর ত্রিবিধ বিনাশ স্তর এবং চতুর্বিধ মৃত্যুর স্তরের সমন্বিত রূপই সপ্তকর্ম পদ্ধতি।
ফানা-এ ছালাছা বা রিপুর ত্রিবিধ বিনাশ স্তর: ফানা আনিল খাল্ক, ফানা আনিল হাওয়া, ফানা আনিল এরাদা।
১) ফানা আনিল খাল্ক: কারো নিকট কোন উপকারের আশা বা কামনা না থাকা। এর ফলে মানব মন আত্মনির্ভরশীল হয় এবং স্বীয় শক্তি সামর্থের প্রতি আস্থা জন্মে।
 
২) ফানা আনিল হাওয়া: যা না হলে চলে সে রূপ কাজ ও কথাবার্তা থেকে বিরত থাকা। এর ফলে জীবন যাত্রা সহজ ও ঝামেলামুক্ত হয়।
 
৩) ফানা আনিল এরাদা: খোদার ইচ্ছা শক্তিকেই প্রাধান্য দেওয়া এবং নিজ ইচ্ছা বা বাসনাকে খোদার ইচ্ছার নিকট বিলীন করে দেওয়া।
 
মউতে আরবা বা চতুর্বিধ মৃত্যু:
মউতে আবয়্যাদ্ব, মউতে আসওয়াদ, মউতে আহমর, মউতে আখদ্বার।
১) মউতে আবয়্যাদ্ব [সাদা মৃত্যু]:  উপবাস এবং সংযমের মাধ্যমে এটি আয়ত্ব হয়। এর ফলে মনের উজ্জ্বলতা বাড়ে।
২) মউতে আসওয়াদ [কাল মৃত্যু]: সমালোচনা, শত্রুর শত্রুতা এবং নিন্দাকে সহজভাবে নিয়ে আত্মশুদ্ধি এবং খোদার কাছে শোকরিয়ার মাধ্যমে এটি আয়ত্ব হয়।
৩) মউতে আহমর [লাল মৃত্যু]: কামভাব এবং লালসা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে পারলে এটি অর্জন করা যায়। এটি অর্জনে সক্ষম হলে অলীয়ে কামেলের দরজায় পৌঁছানো যায়।
৪) মউতে আখদ্বার [সবুজ মৃত্যু]: নির্বিলাস জীবন যাপনে অভ্যস্ত হওয়ার মাধ্যমে এটি অর্জন করা যায়। এই অর্জন বেলায়তে খিজরীর প্রবেশক বলে বিবেচিত।
সপ্ত কর্ম পদ্ধতির এই রূপরেখা বর্ণনার পাশাপাশি সমাজ বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে অছিয়ে গাউসুল আ’যম সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভাণ্ডারী (রঃ)’র যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা সত্যিই  প্রণিধানযোগ্য।
এই কুরআনী হেদায়তের সপ্ত পদ্ধতি মানব জীবনে এক নিখুঁত সহজ সরল স্বাভাবিক পন্থা, যা জীবন পদ্ধতিতে স্বাচ্ছন্দ্য আনয়ন করে। এই সপ্ত পদ্ধতি ইসলামী সূফি মতবাদ মতে ‘ফানায়ে নফসী’- প্রবৃত্তির বিনাশ এবং বাকাবিল্লাহর বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে তুলনামূলকভাবে সহজসাধ্য ও ঝামেলামুক্ত। তুলনামূলক বিচারে ইহা গৌতম বুদ্ধের অষ্টশীল নীতি থেকে সহজ সরল ও স্বাভাবিক। অন্যান্য বিশ্বধর্মীর সাধনা সিদ্ধির নিয়মের সঙ্গে বিরোধাত্মক নহে বরং উৎসাহবর্ধক, বাস্তববোধ জাগরণকারী, বিশ্ব সমস্যার সমাধানকারী মুক্তির দিশারী। এই পদ্ধতি কর্মে ও মর্মে মানবতার উন্নয়নকারী। ইহা ব্যবসায়ী পীরত্বের সমর্থক নহে বরং নেহায়ত নিষ্কাম খোদা অনুরাগী। এই পীরী ব্যবসাদারী পতনযুগে ইহা নৈতিক ধর্মের জীবনদানকারী ধ্রুবতারা। [বেলায়তে মোতলাকা, পৃ. ৭৭-৭৮]।
উল্লেখ্য যে, নিষ্কাম খোদা অনুরাগী উক্ত সপ্ত পদ্ধতিকে গাউসুল আ’যম হযরত মাওলানা সৈয়্যদ আহমদুল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (রা.)’র কথা, কাজ, অবস্থা ও অবস্থানের সাথে সম্পৃক্ত নয় বলার অবকাশ নেই। কেননা তাঁর সুযোগ্য খলীফাহ বাহরুল উলুম আল্লামাহ সৈয়্যদ আব্দুল গনি কাঞ্চনপুরী (রা.) বিরচিত ‘আঈনায়ে বারী ফী তরজুমাতি গাউসিল্লাহিল আ’যম মাইজভাণ্ডারী’ বা ‘গাউসুল আ’যম মাইজভাণ্ডারী (রা.)’র জীবন চরিতে প্রভুদর্পণ’ গ্রন্থেও ফানায়ে ছালাছা ও মউতে আরবা‘আহ পৃথকভাবে বিবৃত দেখা যায়। বস্তুত খোদা বিরাগী দুনিয়া-অনুরাগীরাই কেবল এটাকে চ্যালেঞ্জ কিংবা প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। এমন প্রলাপকারীর বেলায় কুরআনে করীমের ঘোষণা ‘অতঃপর তাদের ছেড়ে দিন নিজেদের অনর্থক কর্মে খেলতে’ (সূরা আন‘আম ৯১ নং আয়াতাংশ।)
মুরিদের তিন অবস্থা:
জাওয়াহিরুল মুলূক কিতাবে বিবৃত যে, মুরিদের তিনটি অবস্থা রযেছে। ইবতেদা বা প্রারম্ভিক, তাওয়াস্সুত বা মধ্যবর্তী ও ইন্তেহা বা প্রান্তিক।
মুরিদে মুবতাদী বা শিক্ষনবিশ/ আরম্ভকারী মুরিদ: 
ঐ ব্যক্তি যার জাহেরী সকল সংযোগ বিচ্ছিন্ন, সৃষ্টিজগত, দুনিয়া ও দুনিয়াদার থেকে কর্তিত এবং সর্বসামর্থ আল্লাহ ভিন্ন অন্য সম্পূর্ণ কর্তনব্রতে নিবন্ধিত। যার মূল্যমান সময় আল্লাহর স্মরণে পরিপূর্ণ রূপে নিবেদিত। যার ইচ্ছাসমূহ পূর্ণরূপে পীরের আয়ত্বে সোপর্দিত। কেননা, ইরাদত বা সংকল্পবদ্ধ হওয়া মানে মুরিদের উদ্দেশ্য পীরের উদ্দেশ্যে এ রূপে লয় ও ক্ষয় করা যে, গুপ্ত ও ব্যক্তে পীরের উদ্দেশ্য ভিন্ন মুরিদের কোন উদ্দেশ্যই থাকবেনা। এমনকি যে মুরিদের নিকট পীরের উদ্দেশ্য ছাড়া নিজের বিন্দুসম ইচ্ছা ও উদ্দেশ্য বিদ্যমান থাকবে সে আপন ইচ্ছা ও উদ্দেশ্যের মুরিদ, পীরের মুরিদ নয়। কেননা, ইরাদত হচ্ছে নিজের ইচ্ছা ও বাসনা ত্যাগ, কোন প্রকার প্রথা ও অভ্যাসের নাম নয়।
‘যবে তব পথপ্রদর্শক অভ্যাস ও প্রথা
পাবেনা তবে ইরাদতের হাকীকত কোথা।
চাহ যদি তুমি অভিষ্ট লভিতে
হে যুবা ও জ্ঞানী লাগ পীর অন্বেষিতে।
মুর্শিদের রেকাব সনে করো নিজে নিবন্ধিত
তবে সকল বন্ধন হতে হবে তুমি মুক্ত।
গাইরুল্লাহ হতে যখন করেছো গোসল এবার
ফের অপবিত্র করোনা নিজে দ্বিতীয়বার’।
 
মুরিদে মুতাওয়াসসত বা মধ্যবর্তী মুরিদ:
এদের কর্মকাণ্ড ধর্মনিষ্ঠ সাধক ও উপাসনাকারী আবেদ’র বিপরীত। কেননা, মুরিদ হচ্ছে তালেব বা খোদা তালাশকারীর নাম। খোদা অন্বেষণকারীর কর্ম যেমন বাহ্যিক পবিত্রতা অর্জন, সেরূপ অভ্যন্তরীণ পবিত্রতাও। লোক দেখানো নিষ্প্রাণ কুরআন তিলওয়াত, রোযা ও নামাযে তার কোন কাজ নেই। হযরত আবূ সাঈদ আবূল খাইর (রা.) বলেন,
‘যবে দেখি তব মুখ হে তপন আনন
না কর্ম করি না রোযা-নামায পালন।
যবে তুই ছাড়া হই মম নামায মাত্র পাপাচার;
তোর সঙ্গে হই যখন সকল পাপ নামাযে শুমার’।
কেননা, দ্বীনি ইলম নিয়ে মশগুল হওয়া ও কুরআন তিলওয়াত ভাল কাজ বটে কিন্তু খোদা অন্বেষণকারীর শানতো ভিন্ন। তাও আবার অন্তরের পবিত্রতা ও সৌকুমার্য এবং সর্বপ্রকার পাপ ও হীনতা থেকে নফসের শুচিতা ও উজ্জ্বল্য অর্জন। যার প্রতি নিম্মোক্ত চৌপংক্তি ইঙ্গিতবহ।
‘চাহ যদি দিল সাফই করিতে দর্পণ বরণ
দশবস্তু বক্ষ হতে বাহিরে কর নিক্ষেপণ।
লোভ, কামনা, ক্রোধ, মিথ্যা আর পরনিন্দা;
কৃপণতা, হিংসা, কপটতা, অহঙ্কার ও ঘৃণা’।
অতঃপর তজল্লী বা উজ্জ্বল্য অর্থ প্রশংসনীয় গুণাবলী ও খোদা পথযাত্রার মনাযিল বা স্তরসমূহ অর্জন করা। যার প্রতি এ চৌপংক্তি ইঙ্গিতবহ।
‘চাহ যদি নৈকট্যের স্তরে হতে মকীম
নয়টি জিনষ নিজ নফ্সে দাও তালীম।
ধৈর্য, কৃতজ্ঞতা, সন্তোষ, জ্ঞান ও ইয়াকীন
সোপর্দ, প্রভুভরসা, সন্তুষ্টি ও আত্মসমর্পণ’।
 
মুরীদে মুনতহী বা প্রান্তে উপণীত মুরিদ:
ঐ ব্যক্তিকে বলে, যিনি উপর্যুক্ত দু’টি স্তর অতিক্রম করে কঠোর সাধনার পর মুশাহেদা বা প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণের স্তরে উপনীত হয়েছে। ‘মুশাহেদা হচ্ছে মুজাহেদার মীরাছ।’ যিনি ইলমুল ইয়াকীন ও আইনুল ইয়াকীনের স্তর হতে উন্নতি করে হ্ক্কুল ইয়াকীন এবং শব্দের অন্তরালে অর্থের পর্যবেক্ষণ পর্যন্ত পৌঁছেছে। এমতাবাস্থায় সে হাল বা বিশেষ অবস্থার অধিকারী। তখন কূদরতী কারখান কখনো তাঁকে তাঁর প্রতি সোপর্দ করে। সে সর্বদা প্রেমাষ্পদের স্মরণ, প্রভুর উপর ভরসা, তাসলীম বা আত্মসমর্পণ, রযা বা সন্তুষ্টি, তাফ্বিদ বা আত্মসোপর্দ, মুহাসিবাহ বা নিজের কৃতকর্ম নিজে মূল্যায়ন ও মুরাকাবা বা প্রভুর ধ্যানে বিভোরতায় কালযাপন করে। অতএব, খোদা পথযাত্রার প্রারম্ভ যুহদ বা ধার্মিকতা ও পরহেযগারী আর প্রান্ত হচ্ছে, রযা, তসলীম ও তায়াক্কুল।
‘আল্লাহর মর্জিতে তুষ্ট থাক তিনিই ললাট-লিখন পাল্টাতে পারে
তোমার আমার প্রচেষ্টাতে সে জট কভুও খুলবে নারে’।
আল্লাহর মর্জির সামনে নতশিরে করি আত্মসমর্পণ,
যাবৎনা দেখে নেবো তাকদীর কেমন?’
এমন সময় কভু মিলন সমীরণে আনন্দ-উৎফুল্ল আবার কখনো মহাপ্রতাপশালীর প্রতাপে দুঃখ বিলাপে এরূপ বলে,
‘মনোপ্রাণে হই উচাটন, বিদগ্ধান্তর অবুঝ প্রাণ
প্রেমজ্বালায় অগ্নিদগ্ধ, প্রিয়ার গলিতে হই অপমান’।
আবার কখনো তার নিজস্ব সত্তা হতে তাকে ছিনিয়ে নেয়। তার উদ্দেশিতের লাগাম মত্ততার জযবার প্রতি সোপর্দিত হয়। সে সমস্ত জগত ও জগতবাসী হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যেন এক বিধবা; পুরুষত্বের সিংহ যাকে লজ্জা পায়। সে এমন এক অমনোযোগী, চতুরতা যার লজ্জায় মুখ লুকায়। সে এমন অন্ধ, চক্ষুজ্যোতি যার মোকাবিলায় অসমর্থ। সে এমন বোবা, বাকশক্তি তার সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেনা। সে এমন কালা, শ্রবণশক্তি যার সমকক্ষতার যোগ্যতা রাখেনা। ‘বধির, বোবা ও অন্ধ, সুতরাং তারা ফিরে আসবেনা’ তাদের অবস্থার প্রকৃতি।
‘সা‘দী আল্লাহর তপন হুযুরের এ শিষ্টাচার
বলবো আমিই রাত কিন্তু দেখিনি অন্ধকার’।
 
ত্বরীকতের পথে সাত প্রকারের স্খলন:
মুখ ফিরিয়ে নেওয়া তথা অভিমান, আড়াল, বিচ্ছেদ, অতি উৎসহ উদ্দীপনা ছিনিয়ে নেওয়া, মূলধন ছিনিয়ে নেওয়া, স্বস্তি ও শত্রুতা। পরস্পর প্রেমে বিভোর প্রেমিক-প্রেমাস্পদের দু’জনের মধ্যে প্রেমিকের ওপর যদি প্রেমাষ্পদ অভিমান করেন তথা মুখ ফিরিয়ে নেন তখন তড়িৎ ক্ষমা প্রার্থনা পূর্বক যে কোন উপায়ে সন্তুষ্ট করে নেওয়া প্রেমিকের ওপর অপরিহার্য। যাতে ক্ষণিকের অভিমান বিদূরীত হয়ে পূর্ববৎ মধুর সম্পর্ক অটুট থাকে। যদি প্রেমিক ক্ষমা প্রার্থনা না করে উক্ত রূপ ত্রুটিতে নিমজ্জিত থাকে তবে ওই অভিমান আড়ালে রূপ নেয় এবং প্রেমিক-প্রেমাষ্পদের মধ্যে পর্দা পড়ে যায়। এমন সময় প্রেমিকের ওপর দোষ স্বীকার করতঃ ক্ষমা প্রার্থনা করা ওয়াজিব। এমতাবস্থায় ক্ষমা প্রার্থনায় বিলম্ব হলে ওই আড়াল বিচ্ছেদে রূপ নেয় অর্থাৎ প্রেমিক-প্রেমাস্পদের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখনও যদি ক্ষমা প্রার্থনা না করে জেদ ধরে থাকে তবে ইবাদত-বান্দেগীর অতি উৎসাহ- উদ্দীপনা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এমতাবস্থায়ও যদি ক্ষমা ভিক্ষার পরিবর্তে বাতুলতায় অবিচল থাকে তবে মূলধন তথা ইবাদত-বান্দেগী সবই ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এমত পরিস্থিতিতে তাওবা বা পাপ হতে প্রত্যাবর্তনে ত্রুটি হলে স্বস্তি তথা প্রেমাস্পদ তার বিচ্ছিন্নতায় আরাম পান। এমন  অবস্থায় প্রত্যাবর্তনে বিলম্ব হলে প্রেম-ভালবাসা শত্রুতায় রূপ নেয়। ‘নাউযূবিল্লাহি মিনহা’।
উপসংহার:
হযরত গাউসুল আ’যম মাইজভাণ্ডারী (রাদ্বি.) সংস্পর্শে এবং তাঁরই ত্বরীকা দর্শনে বিকশিত বিপুল সংখ্যক আউলিয়ায়ে কিরামের বিবিধ বিষয়ক অগণিত কারামত এমনই ব্যাপক স্বীকৃত ও সুপ্রতিষ্ঠিত সত্য, যা অস্বীকারের কোন অবকাশ নেই। বিশষতঃ যার সান্নিধ্য ও ত্বরীকা-দর্শনালোকে আলোকিত সত্তাদেরকে মাযার শরীফে সুদীর্ঘকাল পরও অক্ষত অবস্থায় আবিষ্কৃত হওয়া দৃশ্যমান। তাঁকে কিংবা তাঁর সাথে সম্পৃক্তদেরকে স্বশরীরে বিচরণ প্রভৃতি করতে দেখতে পাওয়া বাস্তবিকই আল্লাহর নিদর্শন। কেননা, কোন জ্বীন সাধক কর্তৃক সাধনকৃত জ্বীন ব্যবহারে ঐরূপ বিচরণ প্রভৃতির মতো ভেল্কিবাজী সম্ভব হলেও মাযার শরীফে অক্ষত থেকে যাওয়া আদৌ সম্ভব নয়। অতএব আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনাবলীর অন্তর্ভুক্ত এমন বাস্তব নিদর্শনও মাইজভাণ্ডারী ত্বরীকা-দর্শনে বিদ্যমান, যা সত্য পথের চির অম্লান নিদর্শনই বটে। সুতরাং সফলতার চূড়ান্ত শিখরে উপনীত হওয়ার এক পরিপূর্ণ মাধ্যমই সাব্যস্ত হয় হযরত গাউসুল আ’যম শাহ্সূফী সৈয়্যদ মাওলানা আহমদুল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (রাদ্বি.)’র প্রবর্তিত মাইজভাণ্ডারী ত্বরীক্বা।

Sharing is caring!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *